মৌলভীবাজারের ৩২৫ গ্রাম প্লাবিত, প্রাণ গেলো তিন জনের

অতিবৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই, মনু, কুশিয়ারা নদী ও হাকালুকি হাওরের পানি বেড়ে মৌলভীবাজারের সাত উপজেলার ৩২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে তিন লাখ মানুষ ভয়াবহ বন্যার কবলে হয়ে পড়েছেন। এই বন্যায় এখন পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণেই এই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

রবিবার (১৯ জুন) জেলা প্রশাসনের হিসাবে মৌলভীবাজার ৩২৫ গ্রাম গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশি প্লাবিত হয়েছে রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলা। বিশেষ করে বড়লেখা উপজেলার পৌর ও ১০ ইউনিয়নের ২০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

বন্যাদুর্গত এই জেলায় ৯৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে ১৫ হাজার মানুষ ও এক হাজার গবাদিপশু রাখা হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পানি বিশুদ্ধ করতে ১০ হাজার ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে। ৬০টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সাত উপজেলায় ২১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বড়লেখা, কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যান্য উপজেলায় স্বাভাবিক আছে।

moulovibazar2

তিন জনের মৃত্যু

বন্যায় বড়লেখা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় শিশুসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৮ জুন) বড়লেখা উপজেলায় পাহাড় ধসে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আয়েশাবাগ চা বাগানে রাজন ব্যানার্জি (৬০) নামে একজন শ্রমিক মারা যান। এ সময় আহত হন আরও চার জন। ওই উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামে একজন আহত হয়েছেন।

শনিবার বড়লেখা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে আদিত্যের মহাল এলাকায় ঢলের পানিতে তলিয়ে এক শিশু মারা গেছে। রবিবার তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট চা বাগানে গাছ পড়ে অনিতা তাঁতি নামে এক নারী চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

কুলাউড়ার বন্যা পরিস্থিতি

কুলাউড়া উপজেলায় নদ-নদীসহ হাকালুকি হাওরের পানি বেড়ে ভূকশিমইল, ভাটেরা, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর ও কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের প্রায় সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কর্মধা ইউনিয়নের মহিষমারা গ্রামের ফানাই নদীর বাঁধ ভেঙে মহিষমারা, বাবনিয়া, হাশিমপুর, ভাতাইয়া ও পুরশাই গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

বড়লেখা

বড়লেখা উপজেলার পৌর এলাকা ও ১০ ইউনিয়নের ২০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

moulovibazar1

জুড়ী

জুড়ী উপজেলায় ২৮টি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ২৪টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জায়ফরনগর ইউনিয়নের গৌরীপুর ও সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গোয়ালবাড়ি পশ্চিম শিলুয়া গ্রামে জুড়ী নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।

মৌলভীবাজার সদর

সদর উপজেলায় খলিলপুর, মনুমুখ, আখাইলকুড়া, কনকপুর, কামালপুর, চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এই উপজেলায় বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা সাত হাজার ৫০০ জন।
  
রাজনগর

রাজনগর উপজেলায় চার ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এখানে বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। 

শ্রীমঙ্গল

শ্রীমঙ্গল উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এই উপজেলায় বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা চার হাজার।

কমলগঞ্জ 

কমলগঞ্জ উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে রবিবার বিকালে থেকে হঠাৎ হু হু করে ধলাই নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়নের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আখতারুজ্জামান বলেন, ‘উজানের ঢলে ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে। মনু নদীর রেলওয়ে ব্রিজ এলাকায় বিপৎসীমার ১৬০ সেন্টিমিটার ও মনু নদীর চাঁদনী ঘাট পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ধলাই নদী রেলওয়ে ব্রিজ এলাকায় পান বিপৎসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি বেড়ে চলেছে।’