সমঝোতা হয়নি, আন্দোলনে ওসমানী মেডিক্যালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। সোমবার (১ আগস্ট) রাতে আন্দোলন শুরু হলেও কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তা স্থগিত হয়। তবে পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকাল থেকে ফের কর্মবিরতি শুরু করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এছাড়া কলেজের শিক্ষার্থীরাও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে আন্দোলনের কারণে ওসমানী হাসাপাতালের রোগীরা স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে না। 

হাসপাতাল সূত্র জানায়, মঙ্গলবার প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকাল ৫টায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন তারা।  

এদিকে হামলার ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় সোমবার (১ আগস্ট) রাতে কলেজ কর্তৃপক্ষ দুটি মামলা দায়ের করেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ। 

তিনি বলেন, মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় সাত জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের শ্লীলতাহানির ঘটনায় একজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে।

এদিকে বিকালে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন আন্দোলনরতরা। 

ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মতিউর রহমান বলেন, হামলাকারীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া না হলে ধর্মঘট চালিয়ে যাবো। সেবা দিতে এসে আমরা হামলা ও হয়রানির শিকার হবো, তা মেনে নেওয়া যায় না। 

জানা যায়, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী (ইন্টার্ন চিকিৎসক) ইমন আহমদের সঙ্গে গত রবিবার দুপুরে এক রোগীর দুই স্বজনের বাগবিতণ্ডা হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এ সময় ওই দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টির মীমাংসা হয়। পরে সোমবার (১ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক ইমন আহমদ (২৪) ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রুদ্র নাথের (২২) ওপর কলেজের পেছনে হামলার ঘটনা ঘটে। সহপাঠীরা তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ধর্মঘটের ডাক দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেন। এছাড়া কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ এবং রাত ১টার দিকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়াকে নিজ কক্ষে অবরুদ্ধ করেন তারা। হাসপাতালের পরিচালক প্রায় ঘণ্টাখানেক অবরুদ্ধ ছিলেন।

এ ঘটনায় প্রশাসন, শিক্ষার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতারা সোমবার রাতেই বৈঠকে বসেন। এসময় শিক্ষার্থীরা মেডিক্যাল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের মামলা করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানান। কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে রাত ৩টার দিকে ধর্মঘট ও অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। তবে এ সময় তারা হামলাকারীদের গ্রেফতারের জন্য মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বেলা ২টা পর্যন্ত সময় বেধে দেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেলা ২টায় আন্দোলনরতদের সঙ্গে কলেজ, হাসপাতাল, পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বসেন। ওই সময় চিহ্নিত হামলাকারী অন্তত তিন জন গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। 

এদিকে, গত রাত ১টার দিকে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে দু'জনকে আটক করে পুলিশ। আটক দুই জন হলেন নগরীর মুন্সীপাড়ার মৃত রানা আহমদের ছেলে সাঈদ হাসান রাব্বি (২৭) ও কাজলশাহ এলাকার আব্দুল হান্নানের ছেলে এহসান আহমদ (২২)। এ দু'জনই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত। এরমধ্যে সাঈদ হাসান রাব্বি সিলেট মহানগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলে জানা গেছে।