৪১ ব্যাচের সমন্বয়ে বিটিআরআই স্কুলে পুনর্মিলনী

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘ছড়িয়ে দিয়েছি তবু জড়িয়ে থাকি, স্মৃতি বাঁধন অটুট রাখি’ স্লোগানকে ধারণ করে দিনব্যাপী এ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়।

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিদ্যালয় মাঠের বিশাল মঞ্চে জাতীয় সংগীত পরিবেশনা এবং সাদা কবুতর উড্ডয়নের মাধ্যমে শুরু হয় ‘প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন। বক্তব্যের পর দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের (পিডিইউ) পরিচালক ড. একেএম রফিকুল হক। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৬১ সালের শেষের দিকে বিটিআরআই স্কুলটির পথচলা শুরু হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে এর যাত্রা। ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কোনও সুযোগ ছিল না। প্রায় জনমানবহীন কাঁচারাস্তা দিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের শ্রীমঙ্গলের কোনও স্কুলে যাওয়া ছিল রীতিমত উদ্বেগজনক এবং দুঃসাহসিক। এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন বিটিআরআই কর্মরত তৎকালীন শিক্ষানুরাগী একাধিক কর্মকর্তা। ১৯৬২ সালের কাঁচাঘর নির্মাণের মাধ্যমে বিটিআরআই স্কুলটির অনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

১৯৮৬ সালের কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এই বিদ্যালয়ের ১১ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই স্টার মার্কসহ প্রথম বিভাগে এবং একজন দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিল। তখন থেকে বিদ্যালয়টি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে সংশ্লিষ্ট সবার নজরে আসে।
 
বিটিআরআই স্কুলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসজুড়ে নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা। পাকা সড়কটি রাঙানো হয়েছে নানা আলপনায়। প্রবেশমুখে ছিল প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনীর লোগো সংবলিত বিশাল বিলবোর্ড। শিক্ষার্থীরা একক, দ্বৈত এবং সম্মিলিতভাবে এখানে আলোকচিত্র ধারণ করে স্মরণীয় দিনটিকে স্মৃতিকোণায় ধরে রাখছেন। মাঠজুড়ে ছিল এখানে-ওখানে ছড়িয়ে থাকা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বৃত্তাকার আড্ডা। প্রত্যেক রেজিস্ট্রেশনকারীকে দেওয়া হয় একটি চটের ব্যাগ, আকর্ষণীয় টি-শার্ট, চেস্টকার্ড এবং একটি প্রকাশনামূলক বই। 
 
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের ১৪ সদস্য বিশিষ্ট আয়োজক কমিটির মুখপাত্র তহিরুল ইসলাম মিলন বলেন, বিদ্যালয়ের প্রথম এসএসসি ব্যাচ ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু করে ২০২১ সালের এসএসসি ব্যাচসহ ৪১ ব্যাচের ৫৭০ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। সবাই এসেছেন। এমন একটি অনুষ্ঠান করতে পেরে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
 
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে আসা এসএসসি ১৯৯৩ ব্যাচের বাপ্পাদিত্য চৌধুরী বলেন, বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের কত স্মৃতি জড়িত। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এসে নানা স্মৃতি প্রকাশ করেছি। শুধু সহপাঠীদের স্মৃতিচারণ নয়, আমরা আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কথাও প্রসঙ্গক্রমে আলোচনা করেছি। একটু আগেই আমি বিদ্যালয়ের এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জুয়েল মাজহার স্যারের কথা প্রাক্তন এক সহপাঠীকে বলেছিলাম।’

সিলেট থেকে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া জুলিয়া সিদ্দিকা চৌধুরী বলেন, ‘একটি দিন স্কুল জীবনের সব বন্ধুরা একত্রিত হওয়া অপ্রত্যাশিত একটি ব্যবহার ছিল। এই সম্ভব ব্যাপারটি সম্ভব হয়েছে আয়োজকদের জন্য। তারা যদি এই আয়োজনটুকু না করতেন তাহলে আমরা সব বন্ধু সারাদেশ থেকে শ্রীমঙ্গলে এসে একত্রিত হতে পারতাম না।’  
 
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের গৌরবময় আকর্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মাননা। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় আকর্ষণীয় ক্রেস্ট, সম্মাননাপত্র এবং শাল। প্রাক্তন এবং বর্তমান ৪১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে সম্মাননা গ্রহণ করেন শামসুল হক, মো. শাহ আলম, গৌরীবালা গোপ, দীজেন্দ্র লাল সিংহ, সাইফুল ইসলাম, জগদীশ গোস্বামী, হোসনে আরা বেগম, রীতা দত্ত প্রমুখ।   
 
মধ্যাহ্নভোজ শেষে চলে মঞ্চে স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান। মাঠজুড়ে গুচ্ছগুচ্ছ দলীয় আড্ডা। মঞ্চতে বিরতিহীনভাবে চলে প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া মূল আকর্ষণ হিসেবে ছিল জিবাংলার ‘সারেগামাপা’-এর আলোচিত শিল্পী নোবেলের গান এবং মিঙ্গেল ব্যান্ডদলের পরিবেশনা।