উপহারের গাড়ি নিয়ে বিপাকে হিরো আলম, গুনতে হবে ৫ লাখ টাকা

হবিগঞ্জের শিক্ষকের কাছ থেকে উপহার পাওয়া গাড়িটি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। ১০ বছর ধরে টয়োটা নোয়াহ ১৯৯৮ মডেলের গাড়িটির কাগজপত্র নবায়ন করা হয়নি। গাড়ির ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৩ সালে। এ অবস্থায় মালিকের কাছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা পাওনা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জ বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘টয়োটা নোয়াহ ১৯৯৮ মডেলের ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৪১০১ গাড়িটির ২০১৩ সাল থেকে ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস সনদ নিয়মিত নবায়ন করা হয়নি। ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস সনদ নবায়ন করতে হয়তো প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মতো বকেয়া দিতে হবে। তবে পুরোপুরি হিসাব ব্যাংক থেকে নিতে হবে।’

বিআরটিএর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, হিরো আলমকে দেওয়া উপহারের গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৪১০১। ১৮০০ সিসি গাড়িটির ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ। ফিটনেসের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই। তবে রোড পারমিটের কোনও তথ্য নেই ওয়েবসাইটে। 

হিরো আলমকে গাড়ি উপহার দেওয়া এম মখলিছুর রহমান চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি গ্রামের হাজি আবদুল জব্বার জিএল একাডেমি অ্যান্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। উপনির্বাচনের একদিন আগে গত ৩১ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে হিরো আলমকে নিজের ব্যবহৃত নোয়াহ মাইক্রোবাসটি উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন এই শিক্ষক।

এ বিষয়ে এম মখলিছুর রহমান বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ওই গাড়ি ব্যবহার করেছি, কাগজপত্র ছাড়াই চালিয়েছি। হিরো আলম গাড়িটির কাগজপত্র দেখে এবং সবকিছু জেনেই নিয়েছেন। আর অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করলে কাগজের প্রয়োজন হয় না। দেশে এভাবে হাজার হাজার গাড়ি চলছে।’

২০১৮ সালে গাড়িটি কিনেছিলাম জানিয়ে মখলিছুর রহমান বলেন, ‘২০১৩ সালের ১৮ মার্চ সর্বশেষ গাড়িটির ট্যাক্স দেওয়া হয়েছিল। একই বছরের ১৫ জুলাই ফিটনেস সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেসেই গাড়িটি কিনেছি আমি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ‘গাড়িটি আনার পর ফিটনেসের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া এবং বিআরটিএর বকেয়া পাওনার কথা জানতে পেরেছি। আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, গাড়ি অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করবো, কাজেই বিআরটিএর বকেয়া পরিশোধ করে দেবো।’

প্রসঙ্গত, বগুড়া ৬ ও ৪ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন হিরো আলম। নির্বাচনের আগে গত ৩১ জানুয়ারি চুনারুঘাট উপজেলার হাজী আবদুল জব্বার জি এল একাডেমি অ্যান্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এম মুখলিছুর রহমান তার ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে হিরো আলমকে গাড়ি উপহার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি ফেসবুক লাইভে বলেন, ‘হিরো আলম একসময় জিরো ছিলেন। জিরো থেকে হিরো হয়েছেন। হিরো আলম এখন সোনার টুকরো। দুই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বগুড়ার মানুষ জানের চাইতে তাকে বেশি ভালোবাসেন। তিনি বগুড়ার মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। নির্বাচনে ফল যাই হোক না কেন, নিজের ব্যবহৃত নোহা মাইক্রোবাসটি হিরো আলমকে উপহার দেবো আমি।’

পরে আরেকটি ভিডিওতে তার বাড়িতে গিয়ে উপহারটি নেওয়ার জন্য হিরো আলমকে অনুরোধ জানান। ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে হিরো আলম ওই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। কয়েক দিন পর আবার আক্ষেপ প্রকাশ করে ফের লাইভ করেন মুখলিছুর। এরপর যোগাযোগ করেন হিরো আলম। 

গত মঙ্গলবার দুপুরে হিরো আলম চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি গ্রামে পৌঁছালে অনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে গাড়ি তোলে দেন শিক্ষক এম মুখলিছুর রহমান। এ সময় হিরো আলম গাড়িটিকে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা হবে জানান।