সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের সম্মেলন

বিদ্রোহের পুরস্কার পেলেন মুকুট

সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছিলেন নূরুল হুদা মুকুট। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতির পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। দেড় বছর না যেতেই মুকুট উঠলো তার মাথায়। জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সভাপতি হয়েছেন তিনি।

গত শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে নূরুল হুদা মুকুটকে সভাপতি ও নোমান বখত পলিনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

পাশাপাশি সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি মতিউর রহমানকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনকে জাতীয় পরিষদের সদস্য করা হয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন ধরে গ্রুপিং চলছিল। এজন্য দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দেড় বছর আগে জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন মুকুট। এর আগেরবারও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। টানা দুবার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়ের পর শেষমেশ দেখালেন চমক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, এবারের সম্মেলনে সভাপতি পদে আলোচনায় ছিলেন সর্বশেষ কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান, সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট ও সর্বশেষ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার চৌধুরী। তবে দুবার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়ী হওয়ায় পদপ্রাপ্তিতে এগিয়ে ছিলেন মুকুট। দিন শেষে জয় হলো তার। এটি তার বিদ্রোহের পুরস্কার।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহ-সভাপতি খায়রুল কবির রুমেন। নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নৌকার বিপরীতে লড়াইয়ে নামেন নূরুল হুদা মুকুট। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় গঠনতন্ত্রের ৪৭(১১) ধারা অনুযায়ী মুকুটকে ওই সময় সহ-সভাপতির পদসহ দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

এর আগেরবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন মুকুট। ১৬ বছর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরপর সাত বছর ধরে জেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতির দায়িত্বপালন করেছেন। 

এ বিষয়ে নূরুল হুদা মুকুট বলেন, ‌‘জেলা আওয়ামী লীগে এখন থেকে আর কোনও গ্রুপিং থাকবে না। গ্রুপ থাকবে একটাই, সেটি হলো—শেখ হাসিনার গ্রুপ। এর বাইরে কোনও গ্রুপ থাকবে না।’

এতদিন কেন গ্রুপিং ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যোগ্য লোককে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। জেলা পরিষদ নির্বাচনেও যোগ্য প্রার্থী দেয়নি দল। ফলে দলীয় প্রার্থীকে হারতে হয়েছে। এই গ্রুপিং চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও খারাপের দিকে যেতো। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে নতুন নেতৃত্ব এসেছে। যেসব যোগ্য নেতাকর্মী এতদিন কমিটিতে স্থান পাননি, তাদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। ত্যাগী নেতাকর্মীদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে। কোনও হাইব্রিড নেতা কমিটিতে স্থান পাবে না।’