দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সিলেটে প্রথম সীমান্ত হাট (বর্ডার হাট) চালু হয়েছে। কয়েক দফা পেছানোর পর শনিবার (০৬ মে) হাটের উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধনের পরই কেনাবেচা শুরু হয়। হাটে প্রবেশের জন্য বিস্তারিত পরিচয়সহ কার্ডধারণ বাধ্যতামূলক করা হলেও উদ্বোধনী দিনে উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল।
বেলা ১১টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে সীমান্ত হাটের ফলক উন্মোচন ও বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। এ সময় সিলেটে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার নিরাজ কুমার জয়শওয়ালসহ দুই দেশের প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ভোলাগঞ্জ ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া হিলস সীমান্তে দুই দেশের সমপরিমাণ ১ একর ৫০ শতক জায়গায় যাত্রা শুরু করলো এই হাট।
সংশ্লিষ্ট জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সীমান্তে হাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন এ সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারতের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভোলাগঞ্জ ও মেঘালয়ের পূর্ব খাসিয়া পাহাড়ে হাট চালুর সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য দুই দেশের ১ একর ৫০ শতক করে জায়গায় হাট নির্মাণ করা হয়। হাটে ৫০টি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ২৪টি আর ভারতের ২৬টি। এরই মধ্যে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সপ্তাহে দুই দিন অর্থাৎ শনিবার ও বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বেচাকেনা হবে। শুধুমাত্র কার্ডধারী ক্রেতা-বিক্রেতা নির্ধারিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন। একজন ক্রেতা দিনে সর্বোচ্চ ২০০ ডলার সমপরিমাণ মূল্যের পণ্য কিনতে পারবেন। আর সেটি হতে হবে বাংলাদেশি টাকায়। প্রবেশ ফি বাবদ কার্ডধারী একজন ক্রেতাকে দৈনিক ৩০ টাকা ও বিক্রেতাকে দৈনিক ৭০ টাকা দিতে হবে। এটি তুলবে হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি। ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদনক্রমে হাটের সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজে এই টাকা ব্যয় হবে। হাটের পাঁচ কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দারা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘এমন হাট হওয়ায় দুই দেশে অনুপ্রবেশ কমে যাবে। অবৈধ পাচারও রোধ হবে। দুই দেশের পণ্য হাটের মাধ্যমে আদান-প্রদান হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। এমন হাট আরও হলে ভালো হবে। নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, ‘২০২০ সালের ২৬ মার্চ এবং পরবর্তীতে ডিসেম্বরে হাট চালুর কথা ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে দুই দফা পেছানো হয়। এরপর বন্যার কারণে কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আবেদনকারী বিক্রেতাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে ২৪ বিক্রেতা বাছাই করা হয়েছে। পরে অন্য আবেদনকারীদের লটারির মাধ্যমে সুযোগ দেওয়া হবে। ক্রেতাদের প্রবেশের জন্য বর্ডার হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে।’