বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড

বাড়িঘরে ফাটলের কারণ খতিয়ে দেখছে তদন্ত কমিটি

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড এলাকায় অতিরিক্ত কাঁপুনিতে প্রায় দুই শতাধিক ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি সরেজমিনে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র পরিদর্শন করেছে।

সোমবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রোডাকশন বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘দুটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় পেট্রোবাংলা একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। সরেজমিনে বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড পরিদর্শন করেছি। সাম্প্রতিক সময়ে বিবিয়ানায় কূপ খনন কাজের কারণে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছে কিনা এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন আমরা খুব দ্রুত জমা দেবো।’

তদন্ত কমিটির অন্যরা হলেন সদস্যসচিব বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন ডেভেলপমেন্ট ও প্রোডাকশনের মহাব্যবস্থাপক মো. সালাহ উদ্দিন, সদস্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন।

শেভরন বাংলাদেশের মুখপাত্র শেখ জাহিদুর রহমান এক খুদেবার্তায় বলেন, ‘বিবিয়ানা গ্যাস প্ল্যান্টের আশেপাশের এলাকাগুলোতে বেশ কয়েকটি কম্পন অনুভূত হয়েছিল। বর্তমানে শেভরন বাংলাদেশের কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, আমরা এই কম্পনের ঘটনায় বিবিয়ানা গ্যাস প্ল্যান্টের অপারেশনের মধ্যে কোনও সম্পর্ক রয়েছে বলে শনাক্ত করতে পারিনি। আমাদের প্রাথমিক ফোকাস হলো মানুষের নিরাপত্তা, সম্পদের সুরক্ষা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ করা।’

গ্যাসফিল্ডের সামনে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের করিমপুরে অবস্থিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি শেভরনের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে এটি। গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে প্রতিদিন ৩-৪ বার বিকট শব্দ ও অতিরিক্ত কাঁপুনি হয়। এতে মাটি কেঁপে ফাটল ধরেছে ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়নের ২০ গ্রামের দুই শতাধিক ঘরবাড়িতে। বিষয়টি একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানালেও ব্যবস্থা নেয়নি। যেকোনও মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কায় দিন কাটছে স্থানীয়দের। এ ঘটনার পর থেকে শিশু থেকে বৃদ্ধ লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

শনিবার রাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কয়েকশ মানুষ বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড ঘেরাও করে। এ সময় বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. মাসুক আলী, ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নোমান হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়াকে অবগত করেন। পরে সংসদ সদস্য মোবাইল ফোনে বিষয়টি সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানালে শান্ত হন স্থানীয়রা।

এরপর মধ্যরাতে পুনরায় অতিরিক্ত কাঁপুনি দিলে আতঙ্ক ছড়ায় স্থানীয়দের মাঝে। পরে রবিবার আন্দোলনে নামে তারা। স্থানীয়রা বিবিয়ানার কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ, সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘরবাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়ার ঘটনায় শেভরনের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।