নিরাপত্তার স্বার্থে টিএসসিতে নতুন নিয়ম, মিশ্র প্রতিক্রিয়া সংগঠনগুলোর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (ছবি: সংগৃহীত)নতুন নিয়ম অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সব সংগঠনের কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। গত ১৭ অক্টোবর টিএসসি পরিচালক মহিউজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নোটিশে সিদ্ধান্তটির কথা জানানো হয়। এ নিয়ে ঢাবির সংগঠনগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বেশিরভাগ নেতার দাবি— টিএসসি এখন আর তাদের নেই, সবই চলে গেছে বহিরাগতদের দখলে। তাদের মতে, বহিরাগতদের দখল থেকে বাঁচতে হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানানো উচিত।
তবে বহিরাগতদের না ঠেকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি চর্চায় আঘাত করা হচ্ছে বলেও সমালোচনা করছেন কেউ কেউ। সংগঠনগুলোকে সময়ের বৃত্তে বাঁধা ঠিক নয় বলে মন্তব্য তাদের।
ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি এস এম আরিফ শোভন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা প্রায় সবাই ক্লাস, পরীক্ষা, পড়াশোনা ঠিক রেখেই সংস্কৃতি চর্চা করেন। ফলে ক্লাস-পরীক্ষার কারণে দিনে সংগঠনের কোনও কাজেই অংশ নিতে পারেন না তারা। বাধ্য হয়ে সন্ধ্যার পরেই তাদের কার্যক্রম শুরু করতে হয়। কিন্তু সন্ধ্যায় যদি অফিস বন্ধ করে দিতে হয় তাহলে তাদের সংস্কৃতি চর্চা ও কাজের মান আর আগের মতো থাকবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তার কথা ভেবে নোটিশ দেওয়া আমার কাছে অনেকটাই অযৌক্তিক মনে হয়েছে। টিএসসির ফটকেই লেখা আছে বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ। তারপরও বহিরাগতরা আসে। কর্তৃপক্ষ তা ঠেকাতে পারছে না, কিন্তু ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে আমাদের। কর্তৃপক্ষেরই উচিত বহিরাগত ঠেকানো।’

একই অভিযোগ ট্যুরিস্ট সোসাইটির সভাপতি ইমরানের। তিনি বলেন, ‘টিএসসি তো এখন আর আমাদের নেই, বহিরাগতদের দখলে চলে গেছে। অন্তত তাদেরকে ঠেকাতে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে আমাদের সংগঠনের কাজে ব্যাঘাত ঘটবে। কোনও অনুষ্ঠান থাকলে গভীর রাত পর্যন্ত টিএসসি অফিস ও অডিটোরিয়ামে আমরা কাজ করি, আবার সেখানেই বিশ্রাম নিই। নতুন সিদ্ধান্তের কারণে এসবে ব্যাঘাত ঘটবে। তাই আমরা এ প্রসঙ্গে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করবো।’

মাইম অ্যাকশনের সাধারণ সম্পাদক ও নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিনই কোনও না কোনও অনুষ্ঠান থাকে। সময়মতো অনুষ্ঠান করার সুযোগ পাওয়া সংগঠনগুলোর জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে অনুষ্ঠানের আগের দিন গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। বিশেষ করে আমাদেরকে থাকতে হয় গভীর রাত পর্যন্ত। তাছাড়া সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে অনুমতি শব্দ যুক্ত হওয়াটা ইতিবাচক নয়।’

তবে বহিরাগতরা টিএসসিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্ট করে বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থী। তার অভিযোগ, ‘বহিরাগতদেরকে রুমও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসবের সুরাহা হওয়া উচিত। আমরা এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বসবো, তাকে বুঝিয়ে বললে হয়তো তিনি বুঝবেন ও বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’

ডিবেটিং সোসাইটির কাজ রাতেও করতে হয় বলে জানালেন এর সভাপতি মাহমুদ বিন মুন্সী। বাংলা ট্রিবিউনের কাছে তার ভাষ্য, ‘আমাদের সবারই ক্লাস থাকে বিকাল অথবা সন্ধ্যা পর্যন্ত। ফলে অনুষ্ঠান থাকলে টিএসসিতে কাজ করতে হয় গভীর রাত পর্যন্ত। ফলে ঢাবি কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়া দরকার। আমাদেরকে উপাচার্য স্যার ডেকেছেন, আমরা যাবো। এই বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলবো। সুরাহা হবে আশা করি।’

এ প্রসঙ্গে টিএসসির পরিচালক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই আদেশ শুধু টিএসসিতে থাকা বিভিন্ন সংগঠনের রুম ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অন্যান্য কার্যক্রমে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। শুধু শিক্ষার্থীদের একটি শৃঙ্খলায় আনার জন্য নোটিশটি দেওয়া হয়েছে। কোনও সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য নয়।’

আরও পড়ুন:
খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে পারেন সুষমা