ভর্তি চলছে কওমি মাদ্রাসায়, অনুমতি পেলে ক্লাস

নতুন একাডেমিক বর্ষের কার্যক্রম শুরু হয়েছে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোয়। সাধারণত, আরবি শাওয়াল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মাদ্রাসাগুলোতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় কিছু প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ভর্তি করাচ্ছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কওমি মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।

শনিবার বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে কয়েকজন কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক জানিয়েছেন, রমজানের পর থেকে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে একাডেমিক ক্যালেন্ডার শুরু হয়। সে হিসেবে কিছু মাদ্রাসায় অনলাইনে ও কিছু প্রতিষ্ঠানে সরাসরি ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। তবে, ক্লাস কবে নাগাদ শুরু হবে, এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত পায়নি প্রতিষ্ঠানগুলো।

আল-হাইআতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলেও সরকারের অনুমতি পাওয়ার পরই ক্লাস শুরু হবে।

ঢাকার শীর্ষ একটি কওমি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জানান, ইতোমধ্যে যাত্রাবাড়ী, ঢালকানগর, ফরিদাবাদ, মিরপুর এলাকার কিছু মাদ্রাসায় ভর্তি শুরু হয়েছে। শুরুতে অনলাইনে হলেও আজ শনিবার (২২ মে) থেকে সরাসরি ভর্তি নেওয়া হচ্ছে।জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা

ঢাকার বাইতুল উলুম ঢালকানগর মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি জাফর আহমাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজই আমাদের মাদ্রাসায় ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সাধারণত, শাওয়াল মাসের আট তারিখ ভর্তি শুরু হয়। তবে এবার আট শাওয়াল শুক্রবার থাকায় শনিবার ভর্তি কার্যক্রম চলছে। আজই শেষ হবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া দারুল আরকাম মাদ্রাসার সিনিয়র এক শিক্ষক জানান, শহরের বেশকিছু মাদ্রাসায় ভর্তি শুরু হয়েছে। দারুল আরকাম মাদ্রাসায় অনলাইনে ভর্তি চলছে কিছু দিন ধরে। তবে সরাসরি ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারি বিধিনিষেধ সম্বলিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সম্পন্ন করা হবে। ২৯ মে থেকে দারুল আরকাম মাদ্রাসায় ভর্তি নেওয়া হবে। শহরের বৃহৎ কওমি প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসায় দু-একদিনের মধ্যে ভর্তি শুরু হবে।

ভর্তি নিয়ে ভোগান্তি

বাইতুল উলুম ঢালকানগর মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি জাফর আহমাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ছাত্রদের নতুনবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও ক্লাস নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। শিক্ষার্থীরা যেহেতু অধিকাংশই আর্থিকভাবে দুর্বল ও অনেক দূর থেকে এসে পড়াশোনা করে, সেক্ষেত্রে তাদের মাদ্রাসায় এসে আবার বাড়ি ফেরাটা ব্যয়সাপেক্ষ। সেক্ষেত্রে অনুমোদন পেলেই ক্লাস শুরু হবে।

রাজধানীর একটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসায় কাল ভর্তির জন্য যেতে বলছে। অন্যান্য জায়গায় অনলাইনে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এখানে হচ্ছে না। অনেক দূরের ছেলেরা আসছে। এখন যদি শুধু ভর্তির জন্য আসতে হয়, তবে বিপদে পড়বো। কারণ বাস চলছে না। অনেক খরচ করে আসতে হবে, আবার ফিরতেও হবে।’

বাইতুল উলুম ঢালকানগর মাদ্রাসার জাফর আহমেদ জানান, তার প্রতিষ্ঠান আবাসিক হওয়ায় করোনার মধ্যে বিধিসম্মত উপায়েই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে।মাদ্রাসা

মুফতি জাফর আহমাদ বলেন, ‘ক্লাস শুরুর ব্যাপারে চিন্তা করছি। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।’

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ২৯ মে পর্যন্ত কওমি মাদ্রাসা বন্ধ থাকার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারিভাবে স্বীকৃত কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ সংস্থা আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়ার সদস্য মুফতি রুহুল আমীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়ার পরই কওমি মাদ্রাসায় ক্লাস শুরু হবে। আর ভর্তির অনুমতি আছে, তাই ভর্তি শুরু হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়ার তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। সেখানে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে হিফজ ও মক্তব বিভাগ খুলে দেওয়ার জন্য এবং রমজানের পর কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা-কার্যক্রম চালুর আবেদন জানান।