বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ক্ষমতায়ন দরকার: ইমরান রহমান

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আরও ক্ষমতায়ন দরকার। এমনটাই মনে করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান। বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।
 
অধ্যাপক ইমরান রহমান দ্বিতীয় মেয়াদে আগামী চার বছরের জন্য ইউল্যাবের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এর আগে ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ইউল্যাবের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অধ্যাপক ইমরান রহমান ২০০৬ সালে ব্যবসায় অনুষদের ডিন হিসেবে ইউল্যাবে যোগদান করেন।  ২০০৯-২০১২ পর্যন্ত ইউল্যাবের প্রো-ভিসি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ইউল্যাবে যোগদানের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ ২৮ বছর শিক্ষকতা করেছেন। শিক্ষাজীবনে তিনি ম্যানচেস্টার বিজনেস স্কুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে লেখাপড়া করেছেন।
 
বাংলা ট্রিবিউন-এর পাঠকদের জন্য তার সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো।
 
বাংলা ট্রিবিউন: দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইউল্যাব অন্যতম। বর্তমানে দায়িত্ব নিয়ে ইউল্যাবকে আরও এগিয়ে নিতে কী পরিকল্পনা আপনার?
 
ইমরান রহমান: একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১৬-১৭ বছর কিছুই না। ইউল্যাবকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। এই সময় আমরা অনেক এগিয়েছি। এই মেয়াদে আমি মান নিশ্চিত করতে চাই। আমি চাই আমাদের পাঠদান পদ্ধতি যেন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আমাদের পথ দেখিয়েছে। হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহান্সমেন্ট প্রজেক্টের (হেকেপ) মাধ্যমে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পাঠদান পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে।
আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু মুখস্থ না করে প্রকৃত কিছু শিখুক। আমার অগ্রাধিকারে থাকবে- ইউল্যাবে আমাদের কাজের পদ্ধতি, পাঠদান এবং কারিকুলাম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করা। কোয়ালিটি অ্যাশিউরেন্স সিস্টেমে আমরা অনেক বিনিয়োগ করেছি। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি আছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, আমরা এখানে বেস্ট ‘কোয়ালিটি অ্যাশিউরেন্স সেল’ করেছি।
আমরা চাই লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য কাজও করবে শিক্ষার্থীরা। যেটি একজন স্নাতক শিক্ষার্থীর করা উচিত। কো–কারিকুলার, ক্লাব, ফিল্ড ট্রাভেল, দেশের বাইরে যাবে, শিখবে। শিক্ষার্থীরা কিন্তু অনেকেই সাধারণ পরিবার থেকে আসে। আমরা চাই তাদের এই সুযোগগুলো করে দেওয়ার জন্য।
অধ্যাপক ইমরান রহমান
 
বাংলা ট্রিবিউন: করোনাকালে উচ্চশিক্ষা অনেক বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অনলাইন ক্লাসে সেটার কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠলেও পুরোপুরি পারা যায়নি। এই মুহূর্তে শিক্ষাদান অনলাইন থেকে অফলাইনে ফিরিয়ে আনলেও সেখানে কোনও চ্যালেঞ্জ দেখছেন কিনা?
 
ইমরান রহমান: শিক্ষার্থীরা মরিয়া হয়ে আছে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার জন্য। একইসঙ্গে আমরাও। সরকার বলেছে- আনা যাবে তবে টিকার বিষয়টি আছে। সরকারের সিদ্ধান্ত যে অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা আসতে পারবে। আমরা একটি সমীক্ষা করে দেখেছি, আমাদের ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছে। আমরাও চাই শিক্ষার্থীরা যত দ্রুত সম্ভব ফিরে আসুক। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে অনেক। কিন্তু পুরোপুরি যায়নি। একজন শিক্ষার্থীর যদি কিংবা শিক্ষকের যদি করোনা হয়ে যায় সেটা আবার সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তাই কখন ক্যাম্পাসে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে সেখানেই চ্যালেঞ্জ দেখছি, অন্যথায় আমরা তো অনেকটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছি।
 
বাংলা ট্রিবিউন: শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে চায়, আবার কোভিডের কারণে কিছু শিক্ষার্থী ড্রপ-আউট হয়েছে। ড্রপ-আউট শিক্ষার্থীদের নিয়ে আপনার কোনও পরিকল্পনা আছে কি? 
 
ইমরান রহমান: তাদের ফেরানোর ইচ্ছা অবশ্যই আছে। করোনার কারণে যেটা হয়েছে, অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর বাবা মা’র আয়ে প্রভাব পড়েছে। অনেকেই সংগ্রাম করে টিউশন ফি দিচ্ছে। সবকিছু বিবেচনা করে আমরা ঠিক করেছি—এন্ট্রি একটু বিলম্ব করি। প্রথমদিকে আরেকটা বিষয় ছিল, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে এইচএসসি দিয়েই চলে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাসে। যেটা তারা কখনও কল্পনা করেনি। এখন অবশ্য এটা অনেকটা কেটে গেছে। এই দুটোই ছিল ড্রপ-আউটের কারণ। আর যারা রেগুলার শিক্ষার্থী, সেখানে রেজিস্ট্রেশন কিছুটা কমেছে। সেটাও আর্থিক কারণে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার মতো পরিবেশ যেহেতু হয়েছে, আমরা আশা করছি তারা ফিরে আসবে।
তারপরও একেবারেই যাদের পক্ষে সম্ভব হবে না, তাদের জন্য আমাদের খুব ভালো স্কলারশিপ পলিসি আছে, আমরা চেষ্টা করবো তাদের সহযোগিতা করতে।
অধ্যাপক ইমরান রহমান
 
বাংলা ট্রিবিউন: দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রযুক্তিনির্ভর অনলাইন ও ব্লেন্ডেড লার্নিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষকদের সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা রয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। আপনার ভাবনা কী? 
 
ইমরান রহমান: সবাইকে টিকা দিয়ে এই টার্মে নিয়ে আসা আমার মনে হয় না সম্ভব হবে। আমি আশা করি স্প্রিং সেমিস্টারে পুরোপুরি অফলাইনে যেতে পারবো। অনলাইন কিংবা অফলাইনে ক্লাস নেওয়ার অপশন আমরা আমাদের ওপর রেখে দিতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিক কাকে আনবে ফ্যাকাল্টি হিসেবে। অনলাইন সিস্টেমের ভালো দিক হচ্ছে– একজন নামকরা প্রফেসর পাঠদান করতে পারছে বাইরে থেকে। এখন যদি সরকার বলে যে- ক্যাম্পাসে শুরু হয়ে গেছে। অনলাইন বন্ধ করে দাও, তা হলে কীভাবে হবে? বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, অফলাইন ও অনলাইন দুটোই আছে। সুতরাং এটি আমাদের ওপর কেন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না?
 
ইউল্যাব ব্লেন্ডেড লার্নিং অনেক আগে থেকেই করছে। ২০১৩-১৪ থেকে আমরা একটি প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করিয়েছি, যেটাকে বলা হচ্ছে ‘মুডল’। এটি একটি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। যদিও আমাদের কাজ সব সশরীরে হতো, পাশাপাশি প্রত্যেক শিক্ষক ‘মুডল’ ব্যবহার করতেন। শিক্ষার্থীরা সেখান থেকেও পাঠদানের সুযোগ পাচ্ছে। সেটি ব্লেন্ডেড লার্নিং এবং আমরা এটি বজায় রাখতে চাই। আবার যদি হরতাল বা ক্যাম্পাসে আসার মতো পরিস্থিতি না থাকে তাহলে আমরা আবার অনলাইনে সুইচ করতে পারি। আমরা মনে করি ইউজিসি বিস্তর গাইডলাইন দেয়, তবে আধুনিকায়নের বিষয়সহ আনুষঙ্গিক কিছু বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক। সবচেয়ে সেরা কাজটি হবে—যদি সরকার আমাদের আরও ক্ষমতায়ন করে।
 
বাংলা ট্রিবিউন: বাংলা ট্রিবিউনকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
 
ইমরান রহমান: ধন্যবাদ বাংলা ট্রিবিউনকেও।
 
ছবি:  নাসিরুল ইসলাম