কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা আগামী সোমবার (৫ মে) থেকে কর্ম বিরতিসহ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছেন। ২৬ মে পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলার কথা রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত কনসালটেশন কমিটির বেতন গ্রেড নির্ধারণের প্রস্তাবনার পর নতুন করে আন্দোলন কর্মসূছি ঘোষণা করেছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, নতুন প্রস্তাবনা আমাদের হতাশ করেছে। আমাদের দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদের ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— আগামী সোমবার (৫ মে) থেকে ১৫ মে পর্যন্ত প্রতিদিন এক ঘণ্টার কর্মবিরতি। পরদিন ১৬ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত প্রতিদিন ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি, ২১ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি এবং ২৫ মে থেকে লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি। তবে এই আন্দোলন কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে পরীক্ষা কার্যক্রম।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এবং সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেডের প্রস্তাবনা মেনে নিতে পারছি না। আমরা চাই, ন্যূনতম ১১তম গ্রেডে সহকারী শিক্ষকদের এন্ট্রি পদে বেতন নির্ধারণ এবং  প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি।  পাশাপাশি উন্নীত স্কেল ও উচ্চতর গ্রেডের সমস্যা সমাধান করে ১০ ও ১৬ বছরপূর্তিতে সহকারী শিক্ষকদের প্রথম ও দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেড প্রদানের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা যেন নেয় মন্ত্রণালয়।

সহকারী শিক্ষকদের দাবি

কনসালটেশর কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেড নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড-প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি প্রদান।

শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের জলকামান নিক্ষেপ (ফাইল ছবি)যে কারণে ফের আন্দোলনের ঘোষণা

শিক্ষকদের বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচির পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে ১২তম গ্রেডে উন্নীতকরণের সুপারিশসহ প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। গত ২৪ এপ্রিল মন্ত্রণালয় থেকে মহাপরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত কনসালটেশন কমিটির প্রতিবেদনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বিদ্যমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী দশম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষককে বিদ্যমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী ১২তম গ্রেডে উনীতকরণের সুপারিশ করা হয়েছে।’ এছাড়া হাইকোর্ট থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে।

ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ জানান, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রেবেকা সুলতানা মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠেতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কনসালটেশন কমিটির প্রস্তাব অনুসারে অধিদফতরকে প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। সেখানে বেতন কার্যকর করতে বলা হয়নি।

রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক নেতা খায়রুন নাহার লিপি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কনসালটেশন কমিটির সুপারিশকৃত সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১২তম গ্রেড এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকপদ— দুটোই আমরা প্রত্যাখ্যান করে আসছি। গত বছরের ২৪ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এবং পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সামনে আমরা এগুলো প্রত্যাখ্যান চেয়ে সারা দেশের শিক্ষকদের অভিমত প্রকাশ করি। এরপরও যদি সহকারী শিক্ষকদের ১২তম বেতন গ্রেড নিয়ে সরকার এগোতে চায়, সেটা সহকারী শিক্ষকদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ১২তম গ্রেড মানি না, মানবো না।’

৩_2রাজপথে আন্দোলনের পক্ষে বেশিরভাগ শিক্ষক

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা জানান, মাঠ পর্যায়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করার পরও কনসালটেশন কমিটি সুপারিশ করছে ১২তম গ্রেডের। কনসালটেশন কমিটির সুপারিশ অনুসরণ করেই মন্ত্রণালয় থেকেও মহাপরিচালককে প্রস্তাবনা পাঠাতে বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, এই পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ে বসে এক ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করলে কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেবে না। তাই আমাদের উচিত রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা। তাছাড়া আমাদের দাবি ছিল দশম গ্রেড। সেখানে কনসালটেশন কমিটি সুপারিশ করেছে ১২তম গ্রেড। অন্তত ১১তম গ্রেডের সুপারিশ করা হলেও মানা যেতো।

তবে ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘কর্মবিরতি ছোট আন্দোলন না। তাছাড়া আমরা নিয়ম মেনেই আন্দোলন করছি। সব শিক্ষককে নতুন করে অর্গানাইজ করতে হবে। অনেক শিক্ষক বর্তমান পরিস্থিতিতে দশম গ্রেড চেয়েই আন্দোলন কর্মসূচির দাবি করেছেন রাজপথে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে— প্রধান শিক্ষকদের এখনও দশম গ্রেড বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। ফলে আমরা ১১তম গ্রেডের দাবিতে আন্দোলনে যাচ্ছি। ধীরে ধীরে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাবো। দেশের সব প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ।