তিনি রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। খবরটি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন দেশের আরেক কিংবদন্তি শিল্পী ফেরদৌসী রহমান। তিনি গভীর শোক প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, অনেক দিন ধরেই সুধীন দাশ নানা বার্ধক্যজনতি অসুখে ভুগছিলেন। বলেন, ‘একে একে আমাদের মাথার উপরের সব ছায়া সরে যাচ্ছে। আমরা ক্রমশ একা হয়ে পড়ছি। এক জীবনে উনার কাছ থেকে কত শিক্ষা আর স্নেহ পেয়েছি, সেটি বলে বোঝানো যাবে না।’
এদিকে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সুধীন দাশের জ্বর ছিল। আজ মঙ্গলবার সকালে মিরপুরে তার বাসায় হঠাৎ বমি করেন তিনি। এরপর তাকে কল্যাণপুরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে দ্রুত আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
জানা গেছে, সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে সুধীন দাশের মরদেহ। পরে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে পোস্তগোলা শ্মশানে।
প্রসঙ্গত, সুধীন দাশ বাংলাদেশের একজন সংগীতজ্ঞ এবং সঙ্গীত গবেষক। বাংলা সংগীতের ক্ষেত্রে যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। সংগীতের প্রতিটি শাখায় তিনি সদর্পে বিচরণ করে নিজেকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছেন।
বাংলা গানকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে তার অবদান অসীম। তার বিশেষত্ব হচ্ছে নজরুল সংগীতের আদি গ্রামোফোন রেকর্ডের বাণী ও সুর অনুসারে স্বরলিপি গ্রন্থ লেখা।
সুধীন দাশ এ পর্যন্ত নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে ১৬টি ও নজরুল একাডেমি থেকে ৫টিসহ মোট ২১টি খণ্ডের নজরুলের গানের স্বরলিপি গ্রন্থ বের করেছেন। লালনগীতির ক্ষেত্রেও তার অবদান সর্বজন স্বীকৃত। তিনিই প্রথম লালনগীতির স্বরলিপি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।
সুধীন দাশ জীবনের পুরোটাই দিয়েছেন গানের পেছনে। গান গেয়েছেন সুর করেছেন, কাজ করেছেন সংগীত পরিচালক হিসেবে, গবেষণা তো বটেই। বাংলা গানের ধ্রুবতারা কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকে শ্রোতার কাছে শুদ্ধরূপে পৌঁছে দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি তিনিই করেছেন।
১৯৩০ সালের ৩০ এপ্রিল জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তি ১৯৮৮ সালে একুশে পদক পাওয়ার পাশাপাশি পেয়েছেন বহু পুরস্কার, সম্মাননা।
সুধীন দাশের একমাত্র ছেলে অকাল প্রয়াত সংগীতশিল্পী নিলয় দাশ। ২০০৬ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ মারা যান তিনি। স্ত্রী নীলিমা দাশ ও একমাত্র মেয়ে সুপর্ণা দাশকে পাশে নিয়েই সুধীন দাশের শেষ সময়টা কেটেছে মিরপুরের বাসায়।
/এমএম/