রিজওয়ান: যে চিঠি সবার ঠিকানায়

দৃশ্য: ‘রিজওয়ান’ (ছবি: সংগৃহীত)

‘আসসালামু আলাইকুম

এখানে আমরা সবাই ভালো আছি

আপনারা কেমন আছেন, শুকরিয়া’

ঠিকানাবিহীন এক চিঠি, কোনও এক উপত্যকার গল্পে বড় চেনা হয়ে ওঠে বুট জুতার আওয়াজে, মানুষের কান্নায়। একটা নাটক জীবনের অব্যক্ত সব গল্প হয়ে উঠলে তখন কী বলা যায়? বহু বছর পর মঞ্চনাটকের নির্দেশনায় ফিরেই সৈয়দ জামিল আহমেদ কী আমাদের জীবনকেই তুলে ধরলেন?
দুঃখেই বোধহয় মানুষের বড় মিল। তা না হলে সেই উর্দুভাষার কবি আগা শহীদ আলির কাব্যগ্রন্থ ‘অ্যা কান্ট্রি উইদাউট অ্যা পোস্ট অফিস’, যেটা নিযে ভারতের অভিষেক মজুমদার লিখলেন নাটক, তাও আবার অনুবাদ করলেন ঋদ্ধিবেশ আচার্য্য— এরপরও ‘রিজওয়ান’ দেখতে বসে মনে হলো আমার পাহাড়। রিজওয়ান আমার ভাই, ফাতিমা আমার বোন! তারও চেয়ে বেশি পরিচিত নয় কী বুট জুতাগুলো, তাদের আওয়াজ?

গণহত্যাবিরোধী এই ‘নাটক’ মাত্র একবার দেখেই বলবার কথা সবটুকু বলা শক্ত। তবে অনুভূতি প্রকাশে মনে হয়, ‘আমরাও হয়তো সেই উপত্যকারই বাসিন্দা এবং আমাদের হয়তো ঠিকানাবিহীন চিঠিও পাঠানোর অনুমতি নেই!’ প্রচলিত মঞ্চসজ্জার নিয়মকে পাশ কাটিয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় ‘রিজওয়ান’ দেখতে বসে অপেক্ষা করুন সেই ‘অভাবনীয় সৈনিকের’, যে চলন্ত ট্রেনেই নিপুণ দক্ষতায় কেড়ে নিতে পারে আপনার প্রাণ! তারে বড় বেশি অচেনা মনে হবে কী?

নাটকে দেখতে দেখতেই মনে হতে থাকে ‘আমাদের গোলাপবাগান, ঘরের উঠোন সমস্তই তাদের চাই এবং আমরা হয়তো উৎসর্গীকৃত তাদেরই জন্য। আমাদের সমস্ত মৃত্যু তাই প্রাকৃতিক, জন্মালে যেহেতু মরতে হবেই।’ ফলে ফাতিমার মৃত্যু বর্ণনার প্রথম বাক্য শুনেই জন্মদাতা খুশি হয়ে ওঠেন, অবশেষে এই উপত্যকায় কারও প্রাকৃতিক মৃত্যু হয়েছে জেনে। ফাতিমারা তো এখানেও ঠাণ্ডায় জমে মরে যায়, ধর্ষণের পর হত্যার ওই উপত্যকা অচেনা কোনও কালের কথা কী? রিজওয়ান দেখতে গেলে এলাকা ঠিক চিনতে পারা যাবে কী?

চিনি না, জানি না কিছু, তবুও বুঝতে কষ্ট হয় না এতটুকুও। সহজ শিল্পের বোধহয় এইই সবচেয়ে বড় গুণ। নাটক দেখতে ঢুকেই দেখা যায় নতুন রকমের মঞ্চ। মাথার ওপর মানুষ হেঁটে বেড়ায়, কে জানতো নাটক শেষে ওই মানুষগুলোই মাথার ভেতরে ঢুকে পড়বে! হ্যাঁ, তারা সমস্ত মগজে স্মৃতি বুনে যায়। ফাতিমা আর তার ভাই রিজওয়ান। এবং তাদের উপত্যকা।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ‘রিজওয়ান’ নাটকটি আসলে বলে যায় ইতিহাস ও বর্তমান। মানুষের মৃত্যু, স্বপ্ন, বেঁচে থাকবার এবং মাটির পৃথিবীর নরকের গল্প! তবুও তো মানুষের সেই বিপুল আর্তিতে উচ্চারিত হয় ‘এ পৃথ্বিমীত যদি হোনো ছগ্গ থে থাই, ছালে ছে-ছগ্গ এ-মাদিত, এ-মাদিত, এ-মাদিত’ (এ দুনিয়ায় যদি কোনও জান্নাত থেকে থাকে, তবে সে জান্নাত এই মাটিতে, এই মাটিতে, এই মাটিতে)।

‘রিজওয়ান’ দেখতে
শিল্পকলা একাডেমিতে পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ‘নাটবাঙলা-নাট্যোৎসব’-এ ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৪টা ও রাত ৮টায় রয়েছে এই নাটকের দু’টি প্রদর্শনী। টিকেটের মূল্য ৩০০ ও ৫০০ টাকা। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য বিকাল ৪টার শো’তে টিকেট পাওয়া যাবে ২০০ টাকায়।

 

আরও পড়ুন-
বন্যার্তদের জন্য আবারও নির্দেশনায় সৈয়দ জামিল আহমেদ