নেত্রকোনা জেলা সদরের চল্লিশা বাজারের কারলি গ্রামের এই বাড়িতে শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর চতুর্থ জানাজা শেষে কিংবদন্তিকে শেষ বিদায় জানানো হয়।
এর আগে শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর সকালে ঢাকায় দু’দফা জানাজা শেষে বিকাল সাড়ে তিনটায় নিয়ে আসা হয় নেত্রকোনা শহরের সাতপাই এলাকায় অবস্থিত শিল্পীর শ্বশুরের বাসায়। এ সময় আত্মীয়-স্বজন-ভক্তসহ স্থানীয় লোকজন ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
পরে বিকাল সাড়ে ৪টায় বাদ আসর তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শিল্পীর স্বপ্নঘেরা বাড়ি ‘বাউল বাড়িতে’। সেখানে স্থানীয় এলাকার লোকজন ও বাউল শিল্পীরা তাদের প্রাণের মানুষটিকে এক নজর দেখার পর বাদমাগরিব ৪র্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংসদ উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়সহ স্থানীয়রা।
এদিকে তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে মোমবাতি প্রজ্জ্বালন ও মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে নেত্রকোনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
বারী সিদ্দিকী নেত্রকোনা সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়নের ফাইছকা গ্রামের এক বিশিষ্ট সংগীত পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তার বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম ছিলেন একজন যাত্রাভিনেতা, তার মা ছিলেন গীত সংগীতের জন্য এলাকায় বেশ পরিচিত। পরবর্তীতে বারী সিদ্দিকী বংশীবাদক হিসেবে সংগীত জগতে প্রবেশ করেন। তার পর থেকে শুরু হয় বাংলা ফোক গানের এই কিংবদন্তি গায়কের সংগীত চর্চা। বারী সিদ্দিকী বিভিন্ন সংগীতজ্ঞের কাছ থেকে সংগীতের তালিম নিয়ে শুরু করেন ফোক গানের চর্চা ।
তিনি বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে গান গেয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন।
বারী সিদ্দিকীর স্ত্রীর বড় ভাই অধ্যাপক ওমর ফারুক জানান, মৃত্যুর আগেই কবরস্থানের নির্ধারিত স্থান পরিবারের সদস্যদের দেখিয়ে গেছেন বারী সিদ্দিকী। ফারুক আরও জানান, বারী সিদ্দিকীর ইচ্ছা ছিল এখানে একটি বাউলদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন ও একটি উঁচু মিনার সম্বলিত মসজিদ স্থাপন করার।
এছাড়াও বারী সিদ্দিকী এলাকায় যখনই আসতেন স্থানীয় বাউল শিল্পীদের নিয়ে সংগীতের চর্চা ও আড্ডায় ব্যস্ত সময় পার করতেন। স্থানীয় বাউলরা জানান, তিনি সংগীত চর্চাকে বিশ্বের দরবারের পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তার এই কর্মময় জীবনে অসংখ্য গান গেয়েছেন এবং তিনি নিজেও গান রচনা করেছেন।
বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনার মৌগাতি ইউনিয়নের ফাইছকা গ্রামের মরহুম মহরম আলী ও মাতা মরহুম জেবুন্নেছার পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। পিতার সংসারের দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। বারী সিদ্দিকী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনার পর নেত্রকোনা আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে নেত্রকোনা সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীতের ওপর পড়াশুনা করেন। পরে বাংলাদেশ টেলিভিশনে যোগদান করেন।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দিনগত রাত (২৪ নভেম্বর) আড়াইটার দিকে মারা যান এই বাউল কিংবদন্তি। ১৭ নভেম্বর রাতে হার্ট অ্যাটাক করলে তাকে এই হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে আর স্বাভাবিক জীবনে ফেরা হলো না তার।