সাধক-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর লালন আখড়া

বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ধামে মানুষের ঢল নেমেছে। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার মরাকালি নদীর পাড় এখন বাউল, সাধু, ফকির আর সাধারণ দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর।
বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) রাতে লালন একাডেমি এবং কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের তিন দিনব্যাপী স্মরণোৎসবের উদ্বোধন হয়। উৎসবের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘লালন অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে মানুষের কল্যাণে অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গেছেন। তার এই অমর সৃষ্টি কোনও ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সকল ধর্মের ঊর্ধ্বে থেকে সম্প্রীতির বাঁধনে আবদ্ধ করতে মরমি এই সাধক মানব মুক্তির জন্য সৃষ্টি করেছিলেন ফকিরি মতবাদ। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে লালনের আদর্শে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’
দোল পূর্ণিমায় তিন দিনের এই স্মরণোৎসবকে ঘিরে পুরো ছেঁউড়িয়া এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সারাদেশ থেকেই বিপুল সংখ্যক লালন ভক্ত, অনুসারীরা আসন পেতেছেন একাডেমি ভবনের নিচতলাসহ মাজার চত্বর ও সামনের মাঠে। সাধু সঙ্গ, বাউল গান আর তত্ত্বীয় আলোচনায় সময় পার করছেন বাউল অনুসারী সাধুরা। প্রবীণ বাউলরা জানান, দোল পূর্ণিমার অনুষ্ঠান চলে আসছে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে।
বিশিষ্ট লালন গবেষক ড. একেএম আজাদুর রহমান মনে করেন, ‘বাউলরা কিছু চায় না। সমাজের কাছে তাদের কিছু চাওয়া পাওয়া নেই। মানুষের মাঝ থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে সেতুবন্ধন তৈরি করে সমাজের এ শ্রেণী। ফকির লালন যেমন মানুষের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ তৈরি করেননি।’
ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী রাকিবুল ইসলাম ও সজীব জানান, তারা প্রথমবারের মতো লালনের মাজারে এসেছেন। তিন দিন থাকবেন। গান-বাজনা উপভোগ করবেন।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জহির রায়হান জানান, শুক্রবার (২ মার্চ) উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ৫ হাজারের অধিক বাউল সাধুকে পূর্ণসেবা দেওয়া হচ্ছে। সবজি, মাছ, সাদা ভাত ও দই দিয়ে আপ্যায়ন করা হচ্ছে তাদের।