চলচ্চিত্রের সিংহভাগ শিল্পী কলাকুশলীর অবস্থানও ছিল বাপ্পির মতোই। ফলে মাঝে কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর যৌথ প্রযোজনার পুরনো আইন ভেঙে তৈরি হলো নতুন আইন। যে আইনের ফলে যৌথ প্রযোজনায় নেমে এসেছে ভাটা। অন্যদিকে দেশীয় ছবি নির্মাণ ও সফলতার বিচারেও আসছে না তেমন কোনও ফল। সাফটা চুক্তির আওতায় দেশে নিয়মিতই ঢুকছে কলকাতার নতুন নতুন ছবি। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে, নায়ক বাপ্পি চৌধুরী বদলালেন নিজের পুরনো সিদ্ধান্ত। বিরোধী শিবির থেকে দাঁড়ালেন যৌথ প্রযোজনার পক্ষে! গতকাল মধ্যরাতে (১৯ জানুয়ারি) ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে চাইলেন প্রযোজক আবদুল আজিজের কাছে প্রকাশ্য ক্ষমা।
বাপ্পি চৌধুরী আরও বলেন, ‘এই আন্দোলনের কারণে সিনেমার অবস্থা কি উন্নত হয়েছে? সিনেমা নির্মাণ কি বেড়েছে? নতুন বছর শুরু হলো আমদানি করা বিদেশি ছবি মুক্তি দিয়ে। যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবি হলেও তো আমাদের দেশের অনেক কলাকুশলী ও নায়ক নায়িকা কাজের সুযোগ পেতো। কিন্তু এখন তো আমদানি করে নিয়মিত ছবি মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। যে ছবিগুলোতে আমাদের কেউ কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। হিতে তো বিপরীতই হলো!’
২০১৭ সালের ১৮ জুন যৌথ প্রযোজনার নামে ‘প্রতারণা’ বন্ধের দাবি জানিয়ে ১৮ সংগঠনের ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার’-এর ব্যানারে রাস্তায় নামেন অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক ও কলাকুশলীরা। সেদিনের আন্দোলনে নিজের বক্তব্যে বর্তমান সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফারুক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘চলচ্চিত্র আমাদের কাছে পরিবারের মতো, পরিবার বাঁচানোর জন্য আমরা রাস্তায় নেমেছি। এই পরিবারের মধ্যে অন্য দেশের পরিবার এসে আধিপত্য বিস্তার করবে, তা হবে না। আমাদের দেশের চলচ্চিত্র মানুষের কথা বলে, স্বাধীনতার কথা বলে। সেই চলচ্চিত্রে আজ ভিনদেশি দালালদের কালো থাবা। আমাদের সেন্সর বোর্ড আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের কথা না ভেবে আর কারো কথা ভাবলে আমরা মানব না। অনেক সহ্য করেছি, আর না। এবার আমরা রুখে দাঁড়াব।’
একই দিন (১৮ জুন, ২০১৭) আন্দোলনের মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বাপ্পি চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, ‘কারও বিপক্ষে বা কোনও মহল-ব্যক্তিকে প্রতিপক্ষ করে নয়, এ আন্দোলন দেশের সংস্কৃতি ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি রক্ষার আন্দোলন। যারা এ আন্দোলনের পক্ষে নন তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ করে তুলবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এত কষ্টের ইন্ডাস্ট্রি আমাদের। আমরা স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন শুটিং হবে, আনন্দ উৎসবে ছবি মুক্তি পাবে। কিন্তু হচ্ছেটা কী? রোজার দিনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে হচ্ছে। দিনকে দিন দেশের চলচ্চিত্র ধ্বংসের মুখে যাচ্ছে, ভিনদেশি ছবির বাজার বাড়ানো হচ্ছে। কৌশলে দেশীয় ছবিগুলোকে হল দেওয়া হচ্ছে না। ভিনদেশ থেকে আসা মানহীন ছবিগুলো হল পেয়ে যাচ্ছে শতাধিক। এভাবে চললে যারা চলচ্চিত্রে কাজ করে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকি, তাদের আর কিছুই করার থাকবে না।’
এদিকে যৌথ প্রযোজনার পক্ষে বাপ্পি চৌধুরীর এভাবে হঠাৎ ফিরে আশাকে অনেকেই দেখছেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা হিসেবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে প্রযোজক আবদুল আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুধু বাপ্পিই না, এমন অনেকেই সরাসরি এবং ফোন করে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, যারা ঐ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারা আসলে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আমিও আর মনে অভিমান রাখিনি। ক্ষমা করে দিয়েছি। এটা ছিল ভুল বোঝাবুঝি। বিশেষ একজনের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই আন্দোলন হয়েছিল। সেটা এখন সবার কাছে পরিষ্কার।’
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে আবদুল আজিজ প্রযোজিত জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রথম ছবি ‘ভালোবাসার রঙ’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় বাপ্পি চৌধুরী ও মাহিয়া মাহির। এরপর এই ব্যানার থেকে সর্বোচ্চ ৭টি ছবিতে অভিনয় করেন বাপ্পি।