৬৯তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব: মৃণাল সেনকে স্মরণ

দাউদ হায়দার‘ইউরোপে মৃণাল সেনকে আবিষ্কার করেছে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ‘ফোরাম’ বিভাগ। তিনি ছিলেন আমাদের পারিবারিক। ভারতীয় চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে একমাত্র মৃণাল সেনের ছবি নিয়ে দু’বার রেট্রসপেকটিভ।  গত শতকের ষাটের দশক থেকে তিনি বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সুখ-দুঃখে নিবিড় ছিলেন। কলকাতা আর বার্লিন ছিল তাঁর কাছে আপন, প্রিয়। মৃণাল সেনকে হারিয়ে আমরা এতিম। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি তাঁকে।’– বলছিলেন বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বিদায়ী পরিচালক ডিটার কোসলিক, ২৯ জানুয়ারি, উৎসব-উপলক্ষে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে, শুরুতেই।
ডিটার কোসলিক বিরতিহীন ১৮ বছর বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের দায়িত্ব পালন করেছেন, এ বছরই তাঁর অবসর। বয়স হয়েছে।
মৃণাল সেনডিটার কোসলিকের সবচেয়ে বড় অবদান, ‘ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস’ প্রতিষ্ঠা তথা (ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসে পৃথিবীর নানা দেশের ‘ট্যালেন্ট’ আবিষ্কার–বয়স ২০ থেকে ২৫–যারা চলচ্চিত্রের নানা শাখায় জড়িত) মূল উৎসবে সংযুক্তিকরণ এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ কাজ প্রদর্শিত। পুরস্কারও প্রদত্ত। যেমন পেয়েছেন বাংলার সুপ্রিয় সেন ‘ওয়াগা’ ছবির জন্যে। ‘ফোরাম’ বিভাগকে নানা স্তরে প্রসারিত করেছেন। সবচেয়ে মহত্তম অবদান, বলতেই হবে, বলিউডের অভিনেতা অভিনেত্রীকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন (জার্মানিতে)। তাঁর সময়কালে ‘বিশেষ অতিথি’ শাহরুখ খান, ঐশ্বরিয়া, আমির খান (কারিনা কাপুর নিমন্ত্রণ রক্ষা করেননি, যদিও বলেছিলেন উৎসবে যোগ দেবেন)। এবার আমন্ত্রিত আলিয়া ভাট এবং রনবীর সিং। ‘ওঁরাই না কি’, ডিটার কোসলিকের কথা, ‘ভারতীয় চলচ্চিত্রে এই প্রজন্মের হার্ট থ্রব। ওঁদের পাবলিকলি পরিচয় করিয়ে দেব। দুই অনুষ্ঠানে। ওঁরাই হবেন ৬৯ বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সবচেয়ে আকর্ষণ, নজর কাড়ানিয়া। গ্লামারাস আলিয়া ভাট উৎসব আলোকিত করবেন।’
কেবল আলিয়া ভাট, রনবীর সিং নন, উৎসবে যোগ দিচ্ছেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের বহুখ্যাত আরো অনেকেই। জয়া আখতারও আছেন।
এবার (৬৯ বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে) মূল প্রতিযোগিতায় কিংবা প্যানোরমা বিভাগে ভারতের কোনও ছবি না থাকলেও স্বল্পদৈর্ঘ্য (শটস্‌), ফোরাম, ‘এই প্রজন্ম’ (জেনারেশন), ‘স্পেশাল স্ক্রিনিং’-এ ভারতীয় ছবির সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। রুচির যোশির বাংলা ছবি ‘টেলস ফ্রম প্লানেট কলকাতা’, আসামের রীতা দাশের ‘বুলবুল ক্যান সিঙ’। রীতেশ বত্রা, নীতিন বৈদ্য, সন্যা মালহোত্রা, অঙ্কুর তিওয়ারির ছবিও। বাংলাদেশ থেকেও ছবি, স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে এবং ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসে। আছে ভুটান, নেপালের ছবিও। এই দুই দেশ নতুন সংযুক্তি, প্রথমবার।
উৎসবে, মূল প্রতিযোগিতায় মাত্র ১৭ ছবি, গত পাঁচ বছরের তুলনায় কম। আগে ছিল একুশ। উনিশ।
উৎসবের পরিচালক ডিটার কোসলিক বললেন, ‘ভালো ছবি পাইনি, ভালো ছবির আকাল বিশ্বজুড়ে’।
মূল প্রতিযোগিতামূলক ছবির ছয় জুরিকুলের প্রেসিডেন্ট বিশ্বখ্যাত ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশ, অস্কার বিজয়নী (‘ইংলিশ পেশেন্ট’ ছবির জন্যে)। অবশ্য, আগে পুরস্কার-শিরোপায় উজ্জ্বল। জ্য-লুক গদারের ‘হেইল ম্যারি’ (১৯৮৪) ছবিতে প্রথম অভিনয়।
ছবির ছয় বিচারকের অন্যতম বাংলার রাজেন্দ্র রায় (কলকাতার। আদি নিবাস বাংলাদেশ)।
রাজেন্দ্র বাংলা বাঁ ভারতে খুব পরিচিত নন, ইউরোপ-আমেরিকায় বহুখ্যাত। তিনি নিউ ইয়র্কের ‘মোসা’ (মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট)-র ফিল্ম ডিভিশনের ‘চিফ কিউরেটর’। ৩০ হাজার ছবির নির্বাচক। ৩০ হাজার থেকে ৩০০ ছবির বাছাইয়ে ৩০-টি ছবির মধ্যে সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’কে তালিকাভুক্ত করেছেন।মৃণাল সেন
৬৯ বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ভারতের হরেক জৌলুশ, আলিয়া ভাট পয়লা, তাঁকেই গ্লামারাস্‌ করার কসরৎ উৎসব কর্তৃপক্ষের। কিন্তু মৃণাল সেনই সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ্য, স্মরণীয়। ৬৯ বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব ৭ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক