চলচ্চিত্র হলো ‘সৎমায়ের সন্তান’!

বক্তব্য রাখছেন ইলিয়াস কাঞ্চনবাংলাদেশে চলচ্চিত্রকে বরাবরই দেখা হয়েছে ‘সৎমায়ের সন্তান’ হিসেবে। মূলত এ কারণেই সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে চলচ্চিত্র নামক সন্তানটি পথ হারিয়েছে বারবার।
নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘সিনেবাজ ফিল্মস’-এর অভিষেক অনুষ্ঠানে এসে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এমনটাই মন্তব্য করলেন নায়ক ও ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের পথিকৃৎ ইলিয়াস কাঞ্চন।
নির্মাতা ইফতেখার চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘সিনেবাজ ফিল্ম’-এর সঙ্গে আছেন দেশীয় চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলে ধরার জন্য একঝাঁক স্বপ্নবাজ মানুষ। ২৭ এপ্রিল রাতে বেশ ঘটা করে প্রতিষ্ঠানটির অভিষেক হলো রাজধানীর অভিজাত এক হোটেলে।
‘সিনেবাজ’-এর অভিষেক মঞ্চে উঠে বক্তব্যের শুরুতেই ইলিয়াস কাঞ্চন নায়ক ও এমপি ফারুককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘অভিনেতা ও রাজনীতিক- দুটো বিষয়ের মধ্যে বড় একটি পার্থক্য আছে। একজন অভিনেতা মূলত কাজ করেন ভালোবাসার জোরে কিংবা টানে। এই ভালোবাসা দর্শকদের কাছ থেকে পাওয়ার আশায় অথবা দর্শকদের ঋণ শোধ করার জন্য। আর একজন রাজনৈতিক নেতা মূলত কাজ করেন তার মেধা আর প্রজ্ঞা দিয়ে। যেখানে ভালোবাসা আর আবেগের তেমন কোনও স্থান নেই। তো একটু আগে ফারুক ভাইয়ের বক্তব্য শুনে একসঙ্গে আমি দু’জন মানুষকেই পেয়েছি। যার মধ্যে চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে আবার এই শিল্পকে বাঁচানোর জন্য মেধাও রয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পকে সত্যিকার অর্থে বাঁচাতে হলে এই মানুষদের কাজে লাগানো দরকার। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত।’
সিনেবাজ ফিল্মস-এর উদ্বোধনইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘চিরজীবন দেখে আসছি চলচ্চিত্রকে মনে করা হয় সৎমায়ের সন্তান হিসেবে! চলচ্চিত্র তৈরির জন্য এ দেশের আবহাওয়া যখন অনুকূল ছিল না সেই তখন থেকে (পাকিস্তান আমল) এটা হয়ে আসছে। এরপর বঙ্গবন্ধু যখন চলচ্চিত্রের দিকে একটু নজর দেন তারপর সুদিন আসতে শুরু করে। তাই বলতে হয়, একমাত্র বঙ্গবন্ধু ছাড়া কেউ ভালোবাসেনি চলচ্চিত্রকে। তিনি ছাড়া অন্য কেউ চলচ্চিত্র লালন করেছেন, এটা পাইনি। বঙ্গবন্ধুর পর যারাই মন্ত্রী হয়ে এসেছেন আমি কথা বলেছি তাদের সঙ্গে। আমার মনে হয়নি কেউ চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে কিছু করেছেন। কারণ, এই শিল্পের জন্য তাদের ভালোবাসা থাকার কোনও কারণ নেই।’
ইলিয়াস কাঞ্চন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এর আগে যিনি মন্ত্রী ছিলেন (তথ্য মন্ত্রণালয়) তাকে একটি টকশো’তে আমি খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোনও পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ করেছেন? আমার প্রশ্ন শুনে তিনি অবাক হয়েছিলেন। উনি বুঝতেই পারেননি আমি এমন একটা প্রশ্ন করবো। যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনও পরিকল্পনা না থাকে, তাহলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি কীভাবে হবে? এজন্য সবসময় আমার কাছে মনে হয়, চলচ্চিত্রকে সৎমায়ের সন্তানের মতো লালন-পালন করা হচ্ছে। সে জন্যই আজ আমাদের এই দুরবস্থা।’

নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিনেবাজ-এর যাত্রা প্রসঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “চারদিকে নাই নাই’র মধ্যেও নতুন প্রডাকশন হাউজ যাত্রা শুরু করছে। এটা খুব আনন্দের সংবাদ। তাদের টার্গেট দেশের দর্শকদের ভালো ছবি উপহার দিয়ে বিদেশেও চালানো। এটাকে আমি সাধুবাদ জানাই।’
‘সিনেবাজ ফিল্মস’-এর অভিষেক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন নিমা রহমান, বাপ্পী চৌধুরী, ববি, রোশান, জলি, রাহা, শিমুল খান, শুভ্র খান, তৌহিদ মিটুল, বুলবুল বিশ্বাস, রায়হান রাফী, ওয়াজেদ আলী সুমন, মেহরীন, ড্যানি সিডাক প্রমুখ।
প্রতিষ্ঠানটি অভিষেক লাইনআপের কয়েকজন সদস্যসিনেবাজ ফিল্মস-এর শুরুর লাইনআপ এমন—সিইও: শাম ইসলাম, চেয়ারম্যান: জোসনা ইসলাম, ডিরেক্টর অব কমিউনিকেশন: স্বাধীন খসরু, ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর: ইফতেখার চৌধুরী, মিউজিক কনসালটেন্ট: আহম্মেদ হুমায়ূন, মার্কেটিং কনসালটেন্ট: রমিম রায়হান এবং আইটি ও গ্রাফিক্স: শাকিব সৌখিন।
সিনেবাজ সূত্র জানায়, শিগগিরই চারটি সিনেমা নির্মাণের চূড়ান্ত ঘোষণা দেবে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও বেশ কিছু ওয়েব কনটেন্টের কাজও রয়েছে তাদের পরিকল্পনায়।
ছবি: নন্দ ঘোষ