স্পাইক লি’র নেতৃত্বে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে কাজ করবেন আরও কয়েকজন বিচারক। তাদের নাম জানানো হবে আগামী এপ্রিলের মাঝামাঝি। আগামী ১২ মে শুরু হয়ে এবারের উৎসব চলবে ২৩ মে পর্যন্ত। আজ (১৪ জানুয়ারি) উৎসব আয়োজকরা ইমেইল বার্তায় এসব তথ্য জানিয়েছেন। স্পাইক লি’কে এই আয়োজনে আজীবন সম্মাননা হিসেবে সম্মানসূচক পাম দ’র দেওয়া হবে।
চার দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য ছবি বানিয়েছেন স্পাইক লি, সময়ের সঙ্গে যেগুলো পেয়েছে ধ্রুপদী মর্যাদা। সমকালীন সিনেমায় নানান প্রশ্ন ও বিতর্কিত বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি। জনসাধারণের দৃষ্টিকোণ থেকে নিজের একের পর এক ছবিতে যৌক্তিকতার সঙ্গে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন। কৃষ্ণাঙ্গদের চিরকালের দুঃখ, যন্ত্রণা আর বৈষম্যের কবিতা বলা যায় তার প্রতিটি কাজকে।
বরাবরই মুঠো শক্ত রেখে কাজ করেন স্পাইক লি। গত বছর কান উৎসবের লালগালিচায় দুই হাতের আঙুলে ‘লাভ’ (ভালোবাসা) ও ‘হেট’ (ঘৃণা) শব্দ লেখা আংটি পরে হাজির হয়ে আলোচনার জন্ম দেন তিনি।
স্পাইক লি’র কাজে ও চলাফেরায় যেন চিরন্তন কিশোরের প্রতিফলন পাওয়া যায়। স্নিকার ও ক্যাপ ছাড়া কখনও তাকে দেখা যায়নি জনসমক্ষে। তিনি রসিক ও অদম্য, বাকপটু ও বলিষ্ঠ, কখনও রাগী আর সবসময় ব্যস্ত!
স্পাইক লি’র ইতিবাচক সাড়া পেয়ে কান উৎসবের সভাপতি পিয়েরে লেসকিউর ও উৎসব পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো আনন্দিত। তারা বলেন, “স্পাইক লি’র দৃষ্টিভঙ্গি অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে মূল্যবান। যারা (পুনরায়) জেগে ওঠেন এবং আমাদের অবস্থান ও চেনা ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারেন তাদের জন্য কান একটি প্রাকৃতিক স্বদেশ ও বৈশ্বিক ধ্বনির জায়গা। তার শিহরণ জাগানো ব্যক্তিত্ব নিশ্চিতভাবেই এসব ব্যাপারকে নাড়া দেবে। কেমন জুরি সভাপতি হবেন তিনি? কানে এসে সেটাই দেখুন!”
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া রাজ্যের আটলান্টায় ১৯৫৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন স্পাইক লি। বেড়ে উঠেছেন নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনে। প্রকৃত নাম শেলটন জ্যাকসন লি। শুরুতে লেখালেখিকে গুরুত্ব দিতেন। নিজের সব চিত্রনাট্য নিজেই লিখতেন। আমেরিকান সিনেমার মুক্তমনা মানুষটি শুরু থেকেই নিজের প্রতিটি ছবিতে জোরালো ও সাহসী বিষয়, ক্ষুরধার পরিচালনা, বলিষ্ঠ সংলাপ, ছন্দময় দক্ষতা ও জুতসই গানের সম্মিলন ঘটিয়েছেন।
১৯৮৬ সালে কান উৎসবের প্যারালাল বিভাগ ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে স্পাইক লি’র প্রথম ছবি “শি’জ গটা হ্যাভ ইট’ ইয়ুথ প্রাইজ জেতে। এরপর ১৯৮৯ সালে মূল প্রতিযোগিতায় স্থান করে নেয় তার ‘ডু দ্য রাইট থিং’। ১৯৯১ সালে ‘জঙ্গল ফিভার’ ছবির মাধ্যমে আবারও প্রতিযোগিতা বিভাগে ফেরেন তিনি। আউট অব কম্পিটিশন বিভাগে ১৯৯৬ সালে দেখা গেছে ‘গার্ল সিক্স’। ১৯৯৯ সালে ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে ছিল তার ‘সামার অব স্যাম’। ২০০২ সালে তার ‘টেন মিনিটস ওল্ডার’ জায়গা পায় আঁ সাঁর্তে রিগারে। সব মিলিয়ে পাঁচবার কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে স্থান করে নিয়েছে তার কাজ।
২২ বছর পর ২০১৮ সালে ‘ব্ল্যাকক্ল্যান্সম্যান’ ছবির মাধ্যমে কান উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে ফেরেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিন নিবাসী স্পাইক লি। বুড়িয়ে গেলেও ক্যামেরার পেছনে তেজ ও শৈল্পিক মনোভাবের সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে চলেছেন তিনি। দারুণ রসবোধ, গোয়েন্দাধর্মী থ্রিলার ও রাজনৈতিক আবহে সাজানো ছবিটি কানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্রাঁ প্রিঁ পেয়েছে। এরপর চিত্রনাট্যকার হিসেবে প্রথমবার অস্কার জেতেন তিনি। ১৯৮৯ সালে ‘ডু দ্য রাইট থিং’ ছবির জন্য সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যকার বিভাগে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল তাকে। তবে ওইবার পুরস্কার জোটেনি কপালে। অবশেষে ৯১তম আসরে অস্কারের সোনালি মূর্তি পান তিনি। এর আগে ২০১৫ সালে সম্মানসূচক অস্কারে ভূষিত করা হয় তাকে।
পথিকৃত হিসেবে নতুন প্রজন্মের আফ্রিকান-আমেরিকান পরিচালকদের জন্য পথ সুগম করে দিয়েছেন স্পাইক লি। যেমন রায়ান কুগলার (ব্ল্যাক প্যান্থার), জর্ডান পিলে (গেট আউট), ব্যারি জেনকিন্স (মুনলাইট), অ্যাভা ডুভারনে (সেলমা)।
গতবার কান উৎসবে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে বিচারকদের সভাপতি ছিলেন মেক্সিকান নির্মাতা আলেহান্দ্রো গঞ্জালেজ ইনারিতু। তিনি স্বর্ণ পাম দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বঙ জুন-হো পরিচালিত ‘প্যারাসাইট’কে। বিশ্বব্যাপী সিনেমা হলে ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়ার পর কয়েকদিন আগে গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডসে সেরা বিদেশি ভাষার ছবির পুরস্কার জিতেছে এটি। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ৯২তম অস্কারে সেরা চলচ্চিত্রসহ ছয়টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে ‘প্যারাসাইট’।
কানের ইতিহাসে এশিয়ার একমাত্র নির্মাতা হিসেবে হংকংয়ের ওঙ কার-ওয়াই বিচারকদের সভাপতিত্ব করেছেন। ১৯৯৭ সালে প্রথম আফ্রিকান বংশোদ্ভুত তারকা হিসেবে ফরাসি অভিনেত্রী ইজাবেল আজানি বিচারকদের নেতৃত্ব দেন। তার বাবা ছিলেন আলজেরিয়ান।
আরও পড়ুন-
৯১তম অস্কার: অবশেষে অস্কার জিতলেন স্পাইক লি
গ্রাঁ প্রিঁ পেলেন স্পাইক লি
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার আহ্বান
৪ মিনিটের করতালি ৬ মিনিটের অভিবাদন