যে কারণে নিউইয়র্ক থেকে সোজা কক্সবাজারে টনি ডায়েস

82776707_10162750888390517_292940898713468928_o৯০ দশকের অন্যতম জনপ্রিয় টিভি অভিনেতা টনি ডায়েস এখন বাংলাদেশে। দীর্ঘ বিরতির পর গেল ২২ জানুয়ারি নিউইয়র্ক থেকে দেশে নেমেছেন।
তবে তার এই আগমন একেবারেই ব্যতিক্রম একটি কারণে। প্রবাসী তারকাদের বেলায় যেমন নজির দেখা যায় না সচরাচর! বরং প্রবাসে স্থায়ী হওয়া তারকারা মিডিয়ার কাজ আগাম গুছিয়েই দেশে নামেন। নেমেই ব্যস্ত হন শুটিং, শো, ফটোশুট আর ইন্টারভিউতে। কাজ শেষে ‘মিস ইউ বাংলাদেশ’ বলে ফের উড়াল দেন আপন ঠিকানায়!

টানা পাঁচ বছর পর টনি ডায়েসের দেশে ফেরার গল্পটাও এমন হতে পারতো। অথচ ঘটলো উল্টো। ফেসবুকে টনি ডায়েসের দেয়ালে ‘চেকইন কক্সবাজার’ দেখে বিস্মিত হয়েছেন মিডিয়ার বেশিরভাগ মানুষ। কবে, কখন, কেন—এসব প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে ক্লান্ত টনি।
কারণ, ২২ জানুয়ারি ঢাকায় নেমেই খুব আড়ালে টনি ডায়েস চলে গেলেন মিডিয়া বন্ধুদের চোখ এড়িয়ে, কক্সবাজার। মিশে গেছেন পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে, শৈশবের বন্ধুদের সঙ্গে, অকৃত্রিম আড্ডায়। শিকার করেছেন মাছ, ভেসেছেন সমুদ্রের ঢেউয়ে, মেতেছেন আড্ডায়, হয়েছেন স্মৃতিকাতর।
বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার বিমানবন্দরে২৫ জানুয়ারি কক্সবাজার থেকে টনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার এই আসাটা হলো শুধুই স্কুলজীবনের বন্ধুদের সঙ্গে নিখাদ কিছু আনন্দসময় কাটানোর জন্য। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজে আমাদের শৈশব-যৌবন কেটেছে। এমন ৪০ জন বন্ধু এক হয়েছি সমুদ্রসৈকতে। শুধু আমি নই, এই ৪০ জনের মধ্যে অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকে। প্রত্যেকে ছুটে এসেছি নিজ দেশে। উদ্দেশ্য কক্সবাজার সৈকতে আবারও শৈশবের আড্ডায় মেতে ওঠা। বন্ধুত্বের এই সংযোগ আমরা গত ৪০ বছর ধরেই অটুট রেখেছি।’
শুধু বন্ধুত্বের আড্ডায় প্রভাব না ফেলার জন্যই টনির এই নীরব আগমন। রবিবার (২৬ জানুয়ারি) ঢাকায় ফিরে একইভাবে নিউইয়র্কে ফিরে যাবেন সোমবারের (২৭ জানুয়ারি) একটি ফ্লাইটে। তাই বলে মিডিয়ার বন্ধুদের সঙ্গে কোনও আড্ডা হবে না? সামনেই ভ্যালেন্টাইন, এক-দুটি নাটকও কি হবে না! জবাবে টনি বললেন, ‘এক ঢিলে দুই পাখি শিকার হয়ে যাবে না! এটা তো আমি পারি না। এসেছি শৈশবের বন্ধুদের সঙ্গে নির্ভেজাল সময় কাটাতে। এরমধ্যে অভিনয়ের বিষয়টা যুক্ত করা মানে আড্ডাটাই মাটি করা। এবার দেখে গেলাম। পরে না হয় শুধু অভিনয়ের প্ল্যান করেই আসবো। তখন আর কক্সবাজার যাবো না!’
তাজা চিংড়ি হাতে পেয়ে খুশি টনিপ্রায় চার দিনের সফরে কক্সবাজার আর টেকনাফে ঘুরেছেন টনি ও তার বন্ধুরা। সময় স্বল্পতার কারণে সেইন্টমার্টিন যাওয়া হয়নি। টনি বললেন, ‘অসাধারণ সময় কেটেছে এখানে। নিজেকে রিফ্রেশ করে নিলাম। যদিও বহুদিন পর প্রিয় শহর ঢাকায় নেমে মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল। মনে হলো শহরের মানুষগুলো অনেক কষ্টে আছে।’
টানা পাঁচ বছর পর ঢাকায় নেমে টনির অভিজ্ঞতা এমন, ‘শহরের প্রতিটি রাস্তা খারাপ। প্রতিটি রাস্তায় জ্যাম। মানুষকে প্রায় রাস্তাতেই পুরো সময় আটকে থাকতে হয়। এতে কী পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে ধারণারও বাইরে। এতে মানুষের মেধা, ক্রিয়েটিভিটি নষ্ট হচ্ছে। মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে। সবাই অসহায় হয়ে পড়ছে নিয়ন্ত্রণহীন এই জ্যামের শহরে। অন্তত কয়েক ঘণ্টার অভিজ্ঞতায় আমার তা-ই মনে হলো। এটা থেকে উত্তরণ হওয়া খুব দরকার।’
বন্ধুদের সঙ্গে সৈকতে টনি১৯৮৯ সালে নাটকের দল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়-এ যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে টনি ডায়েসের অভিনয় জীবন শুরু হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে শুরু হয় টিভি নাটকের ক্যারিয়ার। ২০০৮ সাল পর্যন্ত চার শতাধিক নাটক, ধারাবাহিক আর টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন টনি। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা দুটি- মেঘের কোলে রোদ এবং পৌষ মাসের পিরিত।
২০০৮ সালের শেষের দিকে তিনি তার স্ত্রী প্রিয়া ডায়েস ও মেয়ে অহনাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। বর্তমানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিউইয়র্ক লং আইল্যান্ডের হিকসভিল শহরে বসবাস করছেন তিনি। সেখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।নাফ নদীর তীরে দাঁড়িয়ে বিষণ্ন টনি