ঘরে ফিরে পরিবারের সদস্য কিংবা বারান্দায় ফুটে থাকা টবের দিকে তাকানোর ফুরসতও মেলে না বেশিরভাগ তারকার। অথচ সেই তরকারাই এখন অখণ্ড অবসরে। এক দুদিনের মামলা নয়, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এরমধ্যে দেশের সিংহভাগ তারকাই অতিক্রম করছেন তিন সপ্তাহের সেলফ হোম কোয়ারেন্টিন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের সব শিল্পী ও তারকা করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদে আছেন।
যেমন আছেন দেশের অন্যতম অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। বুধবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে কথা হলো বাংলা ট্রিবিউন-এর সঙ্গে। জিজ্ঞেস করা হলো, কেমন যাচ্ছে এইসব করোনাকাল? কাকডাকা ভোরে লোকেশনে পৌঁছানোর তাড়া নেই। মধ্যরাতে একা একা বাসায় ফেরার গ্লানিও নেই। নিশ্চয়ই সময়টাকে উপভোগ করছেন।
উপভোগ নয়, উপলব্ধি! সেটা কেমন? এবার মম শরীরের আড়মোড় ভাঙলেন, সম্ভবত। আগ্রহ পেলেন কথা বাড়ানোর। বললেন, ‘জন্মের পর এবারই প্রথম টানা ২০টা দিন চার-দেয়ালের ভেতর আছি। ধরুন মায়ের কোলে যখন ছিলাম, তখনও তো তার কোলে চেপে বাইরে গিয়েছি! আসলে জীবনে এমন সময় আসবে কখনও ভাবিনি। কোনও তাড়া নেই, অস্থিরতা নেই, প্রতিযোগিতা নেই! জীবনটা হঠাৎ দিঘির স্বচ্ছ জলের মতো হয়ে গেল। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই উপভোগ করছেন নানাভাবে। তা না করে উপায়ও নেই, সময় তো কাটাতে হবে। তবে আমি অন্যদের মতো মেধাবী বা গুণী নই। অভিনয়ের বাইরে অন্য কিছু করে দেখানোর বিশেষ কোনও যোগ্যতা আমার নেই। আমি শুধু নিজেকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করছি।’
সেটা কি প্রায়শ্চিত্ত টাইপ? নিজের অপরাধ কিংবা ভুলের কথা ভেবে রোজ রোজ হাত কাটছেন না তো! হেসে দিলেন মম; বললেন, ‘মোটেই না। ওই ছেলেমানুষি করার বয়স অনেক আগেই অতিক্রম করেছি। আমার উপলব্ধির বিষয়টা হচ্ছে নিজেকে নতুন করে মূল্যায়ন করা। এরজন্য, এখন আমি নিজের সঙ্গে প্রচুর কথা বলি। নিজেকে প্রচুর প্রশ্ন করি। নিজের সঙ্গে কথা বলার, নিজেকে সময় দেওয়ার সুযোগটাই তো পাইনি। কেবল ছুটেছি। তাই এই সময়টাতে নিজেকে সময় দিচ্ছি, প্রচুর কথা বলছি। অনুভব করছি, সঠিক ভেবে অতীতে এমন অনেক কাজ করেছি, যার অনেক কিছুই এখন মনে হচ্ছে সঠিক ছিল না। পুরোটাই ভুল। অথচ তখন চিৎকার করে বলেছি, আমিই ঠিক, তোমরা ভুল। এই আত্মোপলব্ধিগুলো হচ্ছে এখন। প্রতিটা মানুষের এই আত্মসমালোচনার দরকার আছে।’
আর যাই বলুন, দিনশেষে কিংবা করোনাকাল পেরিয়ে আপনি দেশের একজন অসাধারণ কালাকার। পর্দায় পারফর্ম করতে হবে আবারও। শুয়ে-বসে ভাবনার পাশাপাশি নিজেকেও ফিট রাখা জরুরি। সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ তারকাই এখন ঘরে বসে প্রচুর ঘাম ঝরাচ্ছেন। আপনার নায়ক আরেফিন শুভ (ছুঁয়ে দিলে মন) রয়েছেন এই তালিকায় সবার আগে। কেন! টিপস-টুপস দেয় না বুঝি!!
থামিয়ে বললেন, ‘রোজ একবেলা আহার, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। এই করোনাকালে এটাই আমার রুটিন। এইটুকু মানতে পারলে আর কোনও টিপস দরকার হবে না। এই রুটিন ফলো করে ভয়ঙ্কর ফুরফুরে আছি। বিলিভ মি।’
মজার তথ্য হলো, লম্বা এই ফুরফুরে কথোপকথনের শেষটুকু হলো বিষাদ দিয়েই। ‘কতদিন শুটিংয়ে যাই না। খুব খুব মিস করছি সবকিছু’— জাকিয়া বারী মম এমনভাবে বললেন, মনে হলো কথাগুলো ঝরছে অভিনয় থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যাওয়া চলচ্চিত্রাভিনেত্রী শাবানার কণ্ঠে!
মম নিজেও অসময়ে আড়ালে যাওয়া এই নন্দিত অভিনেত্রীর অসম্ভব ভক্ত।