‘স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড’র অভিযোগে গত ১৩ জুলাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি। এক সপ্তাহের মধ্যে জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়। এর মাত্র দুই দিনের মাথায় (১৫ জুলাই) চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠন সংবাদ সম্মেলন করে জায়েদ খানকে ‘বয়কট’ করে। তারা জানায়, একই অভিযোগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরকেও বয়কটের তালিকায় রেখেছেন। এদিকে এমন ঘটনার বিপরীতে টানা ২৪ ঘণ্টা চুপ থাকলেও, এবার বাংলা ট্রিবিউন-এর কাছে মুখ খুললেন জায়েদ খান। তার মতে, পুরো বিষয়টিই ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। চলমান এই সংকট নিয়ে তার পুরো অবস্থান উঠে এসেছে নিম্নের আলাপচারিতায়—
বাংলা ট্রিবিউন: হঠাৎ কেন এভাবে আয়োজন করে বয়কট করা হলো আপনাকে। তাও এমন করোনাকালে!
জায়েদ খান: এগুলো তো সবসময়ই ছিল, থাকবে। কিন্তু হঠাৎ কেন মিশা-জায়েদকে বয়কট? কোনও কিছু করলে সংগঠন করেছে। সংগঠনকে বয়কট করুন। এমনকি যে এসএমএস পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে, সে এসএমএসের কোথাও কি লেখা ছিল, জায়েদের নাম? লেখা ছিল, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। তাহলে আমাকে কেন বয়কট? এগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এখন আর কোনও কিছু বলবো না।
রবিবার (১৯ জুলাই) আমরা একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। সেখানে সব তুলে ধরবো। ব্যক্তি জায়েদ খানকে তারা বয়কট কোন যুক্তিতে করে? নীতিমালার কিছু অংশের সঙ্গে দ্বিমতের সিদ্ধান্ত কি ব্যক্তি জায়েদের? এটা তো পুরো শিল্পীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়। তবে কি তারা মিশা-জায়েদকে বয়কট করার নামে পুরো শিল্পীসমাজকেই বয়কট করলেন!
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার বিরুদ্ধে তো গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে। এজন্য চিঠিও দেওয়া হয়েছে। সবই তো হচ্ছে সাংগঠনিক নিয়ম মেনেই।
জায়েদ খান: হ্যাঁ। এখানে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিন। আমাকে চিঠি দিলো। সেখানে উত্তর দেওয়ার সময় দিলো সাত দিন। এখনও পাঁচ দিন সময় বাকি। এক সপ্তাহের সময় দিয়ে দুই দিনের মধ্যে কেন আমাকে বয়কট করা হলো? আবার বলা হচ্ছে, এটা ১৮ সংগঠন করেছে। এরমধ্যে কি প্রযোজক সমিতি নাই? আর যদি তারাসহ সবাই বয়কট করে, তাহলে সেই চিঠির মূল্যই বা কী? বয়কট যদি করবেন, তাহলে চিঠি দিলেন কেন?
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কী মনে হয়?
জায়েদ খান: এগুলো সবই নাটক। তাদের মন জ্বলছে।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনাকে নিয়ে তাদের মন কেন জ্বলবে!
জায়েদ খান: কেন জ্বলছে, সেটা বলছি। গত কয়েক বছরে আমি শিল্পীদের জন্য কাজ করে গেছি। বিগত ৫/৬ মাস আমি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিল্পী ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। বাবা-মায়ের কাছেও আমি খারাপ হয়েছি। তাদের কথা শুনিনি। ছুটে এসেছি শিল্পীদের কাছে। খোদার কসম করে বলতে পারি, দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি শিল্পীদের জন্য কাজ করেছি। কোনও অসৎ কাজ আমি করিনি। এই বিষয়গুলোও তারা নিতে পারছে না।
জায়েদ খান: আমি শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক। আমি কি শিল্পীদের দিক দেখবো না? যদি নাই দেখি, তাহলে কেন আমাকে শিল্পীরা নির্বাচিত করেছেন?
অক্টোবরে যখন প্রযোজকদের একটি নীতিমালা পাস হয়, নভেম্বরে আমি তাদের জানাই, ‘তাদের সবকিছু আমরা মেনে নিচ্ছি। কিন্তু যাতায়াতসহ কিছু পয়েন্টে সংশোধন দরকার। কনভেন্সের জায়গাটা আগের মতোই রাখতে হবে।’ এটি আমি এসএমএস করে তাদের জানাই। আর এটি আমার কথা নয়। বেশিরভাগ শিল্পীর কথা। শিল্পীদের সঙ্গে আলাপ করেই আমি এই দাবি জানিয়েছি। আমাদের কার্যকরী কমিটির ২৩ সদস্যের মধ্যে ১৯ জনের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে শিল্পীরা তাদের (প্রযোজক সমিতির নেওয়া সিদ্ধান্ত) সিদ্ধান্তে কাজ করবে না। শিল্পীদের নেতা হিসেবে আমাদের সিদ্ধান্তটা আমি সংগঠনের নামে পঠিয়েছি মাত্র। এখানে আমাকে এককভাবে টেনে আনার অর্থ কী? বয়কট করতে চাইলে শিল্পী সমিতিকে বয়কট করতে হবে।
বাংলা ট্রিবিউন: স্পষ্ট করে বলুন তো, আসলে নীতিমালায় আপনাদের কোন কোন পয়েন্ট নিয়ে আপত্তি? নাকি নীতমালার বাইরেও কোনও বিষয় রয়েছে!
জায়েদ খান: পুরো বিষয়টি নীতিমালাকেন্দ্রিক। নীতিমালা পাস হয় গত বছরের অক্টোবরে। তখন আমাদের নির্বাচন চলছে। আমি বলেছিলাম, কমিটিতে যেন অন্তত শিল্পী সমিতির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদককে রাখা হয়। তারা সে সম্মানটুকুও দেয়নি। সবার জন্য নীতিমালা। অথচ সেখানে কথা বলার মতো আমাদের কোনও প্রতিনিধিই ছিল না। এরপর যখন নীতিমালা হাতে পেলাম, আমরা সবটাতেই ‘হ্যাঁ’ বলেছি। শুধু দুই-একটি জায়গা পরিমার্জনের কথা বলেছি। এটা কি আমরা বলতে পারি না? আমাদের স্বার্থ বা অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারবো না?
শিল্পীরা তাদের সিদ্ধান্ত মানতে চাননি। তারা এ বিষয়ে শিল্পী সমিতিতে বারবার মৌখিকভাবে বলছিল। যার ফলে আমরা গত বছরের নভেম্বরে কার্যকরী সমিতির মিটিং ডাকি। সেখানে এই সিদ্ধান্তকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে সর্বসম্মতিক্রমে। সিদ্ধান্তকে আমরা রেজুলেশন আকারে লিপিবদ্ধ করি। এটা সম্পূর্ণই শিল্পী সমিতির সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তকে আমি এসএমএস আকারে সব শিল্পীকে জানিয়ে দিয়েছি।
৩০ নভেম্বর আমাদের সংগঠনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে তাদের (প্রযোজক সমিতি) এসএমএসও করি। এরপর এত সময় গেলো। এখন হুট করে আমাকে বয়কট! মিশা ভাইকেও তিনমাস আগে বয়কট করেছে। এরপর তারা তাকে নিয়ে কাজও করেছে, আলোচনাও করেছে। কী অদ্ভুত তাদের বয়কট সিস্টেম!
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ, আপনি অন্যদের সম্মান দেন না। হেয় করে কথা বলেন! আরও অভিযোগ, এফডিসিতে আপনি নিজের প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন।
জায়েদ খান: মানুষ মুখে বলার সময় অনেক কথাই বলে। আমি হয়তো অনেক কথা বলি, কিন্তু কারও সঙ্গে কখনও বেয়াদবি বা অসম্মানসূচক কোনও কাজ করিনি। এফডিসিতে অনেক গুরুজন আছেন; মিয়া (ফারুক) ভাই, সোহেল (সোহেল রানা) ভাই, আলমগীর ভাই। আমি যদি এমনই করতাম, উনারা তো আমাকে পাশে রাখতেন না। শুধু মুখে বললে হবে না, অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে। অভিযোগ তোলা সহজ। কাজ করা খুব কঠিন। আমি সেই কঠিন কাজটাই করে চলেছি। এটাই এখন সবার জ্বালা-যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।