আমি ‌‘বলিউড’ শব্দটির বিরুদ্ধে: এ আর রাহমান

‘৯৯ সংস’-এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র লেখক ও প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছেন ‘দ্য মোৎ​সার্ট অব মাদ্রাজ’ নামে নন্দিত সংগীত পরিচালক এ আর রাহমান। আগামী ১৬ এপ্রিল মুক্তি পাবে এই মিউজিক্যাল ফিল্ম। বলা যায়, এটি হতে যাচ্ছে সংগীতপ্রেমীদের জন্য এ মহাকাব্যিক চলচ্চিত্র। যা নিয়ে ইতোমধ্যে সংগীত ও চলচ্চিত্র পাড়া সরগরম। দর্শক আলোচনার তুঙ্গে থাকা এ ছবিটি নিয়ে এবার কথা বলেছেন মিউজিক মায়েস্ত্রো এ আর রাহমান। জানালেন, এতে থাকবে গভীর ও অনবদ্য অনুভূতির গল্প। তিনি মনে করেন, চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে পারাটা তার জন্য বিশেষ কিছু। ভাষ্য, ‘এটা বড় ধরনের মুক্তিদান আবার কিছুটা একাকীত্বও করে দেওয়া। আবার এমনও মনে হয়, আমি শেষ হয়ে গেছি কিংবা সেট হয়ে গেছি- সেই পরীক্ষার নেমেছিলাম আমি।’ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এই সংগীতজ্ঞের সাক্ষাৎকার থেকে দু’ছত্র তুলে ধরা হলো বাংলা ট্রিবিউন পাঠকদের জন্য-


প্রশ্ন: যখনই শোনা যায় আপনি নতুন কোনও গান নিয়ে আসছেন- প্রত্যাশা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মানুষ মনে করে যে, খুব সুন্দর কিছু গান আসতে যাচ্ছে। কিন্তু এবার আপনার ভূমিকা একেবারেই আলাদা। ‌‌‘৯৯ সংস’-এ আপনি লেখক ও প্রযোজক।

এ আর রাহমান: চলচ্চিত্র নির্মাণ হলো পাঁচ-ছয় বছরের কাজের বিশাল যজ্ঞ। এটা এমন নয় যে, আমি হঠাৎ করে এক জায়গায় বসে একটা কাজ করে ফেললাম এবং জনগণ সেভাবেই সেটা মূল্যায়ন করলো। এখানে অনেক ধরনের লেয়ার থাকে, টেস্ট স্ক্রিনিং। কারণ এই ছবিতে কিছু স্পর্শকাতর বিষয় আছে। আমরা যা বের করে আনতে চাচ্ছি বা যা তৈরি করতে চাচ্ছি তা যেন দর্শকের কাছ থেকে সঠিক সাড়া পায়- সে বিষয়টি নিশ্চিত করাটা আমাদের জন্য জরুরি ছিল। কারণ তারা প্রতিবারই ভিন্ন ধরনের প্রত্যাশা করে। আবার চলচ্চিত্রও একই ফর্মুলায় হয় না।

আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি সৃষ্টিরই নিজস্ব সত্তা আছে। এটাকে ঘরানাভিত্তিক করা অনুচিত। ইতোমধ্যেই আমরা ‘বলিউড’ বলে আমাদের সব চলচ্চিত্রকে এই ঘরানাতে এনেছি। এখন ভারতের কোথাও কোনও চলচ্চিত্রের কাজ হলেই এটাকে বাইরে থেকে ভাবা হয় বলিউডের কাজ। এই ধারণাটা আমরা পেয়েছি হলিউড থেকে। সত্যি বলতে, এটা আমাদের নির্মাতা বা অসাধারণ সব চলচ্চিত্রকর্মীর জন্য অসম্মানের।
আমি তাদের প্রত্যেকেই সম্মান জানাতে চাই। এ কারণে আমি ‘বলিউড’-এর মতো গোষ্ঠীবাচক শব্দের বিরুদ্ধে প্রচার করে আসছি।এ আর রাহমান

প্রশ্ন: আপনি যখন নব্বইয়ের দশকে এলেন, সম্পূর্ণ নতুন ভয়েস, সংগীত পেলেন ভারতীয় শ্রোতারা। আপনার অভিনব সৃষ্টিশীলতা পরবর্তী সময়ে কি আপনার থেকে আপনাআপনি এসেছে নাকি শ্রোতাদের প্রত্যাশা ও আপনার ইমেজ এই নতুনত্ব আনতে বাধ্য করেছে?

এ আর রাহমান: আমি মনে করি দুটোই (হাসি)। প্রথমত, আমি কিছু অসাধারণ নির্মাতাদের পেয়েছি, যাদের কপি করা সম্ভব নয়। কারণ তারা তাদের সৃষ্টিগুলোকে নিজস্বতা দিতে পেরেছেন। যারা নকল করেন তারা মাঝারি মানের হয়ে যান। তাই নতুন কিছু বের করা সহজ নয়। যদি আপনার কাছে নতুনত্ব থাকে তারপর ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ডসগুলোর সামনে আসবে জনগণের প্রত্যাশা, গানগুলো কীভাবে বিপণন হচ্ছে, ছবির স্টোরিলাইন কেমন বা ডায়লগ কেমন- ইত্যাদি!


প্রশ্ন: আমরা ‘৯৯ সংস’ মিউজিক্যাল চলচ্চিত্রে ফিরে আসি। এটি তৈরির সময় কী কী ভাবনা কাজ করেছিল?

এ আর রাহমান: এটা আমার জন্য রোলার কোস্টারে রাইড দেওয়ার মতোই। একজন সংগীতশিল্পী, যিনি তরুণ, তার কিছু সংবেদনশীলতা রয়েছে। তারপরে সে বিবর্তিত হয় এবং তার সংবেদনশীলতায় অন্যরকম মোড়ক পায়। সুতরাং, ছবিতেও চরিত্রের বিবর্তন অনুসারে সংগীতের পরিবর্তন ঘটে। সরল থেকে আরও সরল, সেটা থেকে জটিল, তারপর আবারও সরলে আসার একটা ভীষণ চাপ আছে- এগুলোই পাওয়া যাবে ছবিতে।

প্রশ্ন: আমরা যেভাবে প্রযোজনা বা বিপণন করি, আপনি সেটাকে কীভাবে দেখেন? সংশ্লিষ্টরা অনেকক্ষেত্রেই আপনাকে বাধ্য করবে তাদের মতো করে বিপণন করতে।

এ আর রাহমান: এই মনোভাবটি আমি কর্পোরেট খাতে পেয়েছিলাম। তারা আমাকে বলল, ‘আমি চার সপ্তাহের জন্য আপনার গানগুলোর মার্কেটিং করব। এবং এগুলো দিয়ে থিয়েটারে মানুষ আনব।’ আমি বললাম, ‘‘ঠিক আছে। তবে আপনার এই প্রক্রিয়া অন্য চলচ্চিত্রের জন্যই থাকুক। ‘৯৯ সংস’-এর জন্য প্রয়োজন নেই।’’
এই চলচ্চিত্রটি আরও গভীর। আমি আমার পুরো টিমকে বলেছি, এই ছবির জন্য সময় দরকার। অন্তত ছয় মাস সময় দিতে হবে। এটাই বড় ধরনের প্রভাবক তৈরি করবে। যেন আমি একেবারে ছোট ছোট নোট, শব্দ থেকেও ফিডব্যাক পাই।

প্রশ্ন: কখন চলচ্চিত্রটির গল্প আপনার মাথায় এলো?

এ আর রাহমান: আমি যখন ভ্রমণ করি, তখনই মজার সব ধারণা আমার মাথায় আসে। আমি সেগুলি লিখে রাখি। এটিও সেই ধারণাগুলির মধ্যে একটি ছিল। গল্পটি রূপকথার মতো। কোনও এক ব্যক্তিকে একজন মেয়েকে জয় করতে ১০০টি গান লিখতে হবে- এটাই ছিল ভিত্তি। তবে এটি বলার মতো অতটা সহজ নয়। কারণ এটি কমলার মতো। যখন আপনি খোসা ছড়াবেন, সেখান থেকেই বিভিন্ন স্তর তৈরি হবে।

প্রশ্ন: আর তিন দিন পরই ছবিটি মুক্তি পাবে। এখন নিশ্চয়ই অনেক চাপ অনুভব হচ্ছে?

এ আর রাহমান:
হ্যাঁ। হয় আমি শেষ কিংবা সেট (হাসি)।

প্রশ্ন: তাহলে কি এখন সেই অনুভূতি হচ্ছে, যেটা নব্বইয়ের দশকের হয়েছিল। যখন আপনি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে এসেছিলেন?

এ আর রাহমান:
না, তখনও ওতটা চাপ ছিল না। কারণ তখন আমার মেন্টর মণি রত্নম ছিলেন। সেটা (চলচ্চিত্রের সংগীত) চালিয়ে যাবার ইচ্ছেও আমার ছিল না। আমি জিঙ্গেল ও অ্যালবামের কাজ করছিলাম, স্বাধীনভাবে। আসলে নতুন হওয়ায় সঙ্গতকারণেই সেখানে দর্শকদের তেমন কোনও প্রত্যাশা ছিল না। আর সেখানে মণি রত্নমের মতো মাস্টারের সঙ্গে কাজ করার আনন্দ ছিল।