পৃথিবীর ওপারে শুক্রবার রাতে (২৩ জুলাই, ২০২১) অনেকটা হুট করেই চলে গেলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর। যাওয়ার আগে ফেলে গেলেন কালজয়ী গান আর গতিময় পদচিহ্ন।
তেমনই একটি অসাধারণ স্মৃতি হয়ে থাকবে গাজীপুর মনিপুর বিশিয়া কুড়িবাড়ি এলাকার বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের অসহায় ও নিঃসঙ্গ বয়োজ্যেষ্ঠদের মনে।
ফকির আলমগীরের ৭১তম জন্মদিন ছিলো চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি। দিনটিকে ঘিরে ঢাকার অদূরে কয়েকজন নিঃসঙ্গ বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষের সঙ্গে অন্যরকম একটা দিন পার করার জন্য ছুটে যান এই মুক্তিযোদ্ধা। সেখানে থাকা বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়ে ‘আনন্দ আয়োজন’ শিরোনামে ৭১তম জন্মবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন তিনি। ঘোষণা দেন, বাকি জীবন যতগুলো জন্মদিন ভাগে পাবেন, এভাবেই সাধারণ ও অসহায় মানুষের সঙ্গে আনন্দে কাটাবেন।
কেউ কি জানতো এভাবে আর তিনি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মেতে উঠবেন না। অবহেলিত আর অসহায় মানুষের সঙ্গে গল্প-গানে এমন অসাধারণ দিন কাটানোর সুযোগ আর পাবেন না। রাখতে পারবেন না, বলে যাওয়া কথা। বাঁধতে পারবেন না গণমানুষের জন্য গান।
জন্মদিনের ঐ আয়োজনে ফকির আলমগীরকে শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এমপি। তিনি বলেছিলেন, ‘ফকির আলমগীর এমন একজন মানুষ, যিনি সবসময় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য সংগীতের মাধ্যমে লড়াই করে গেছেন। তার আমন্ত্রণে এই বিশেষ জন্মদিনে থাকতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।’
১৯৬৬ সালে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন ফকির আলমগীর। সেই সূত্রেই গণসংগীতে আসা। ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে তিনি ষাটের দশক থেকেই সরব হয়ে ওঠেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আগে যেসব বড় আন্দোলন হয়েছিল, সেগুলোতে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন ফকির ও তার গান।
ফকির আলমগীর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম শিল্পী। তারও আগে থেকে তিনি শ্রমজীবী মানুষের জন্য গণসংগীত করে আসছিলেন। স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন ফকির আলমগীর।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এরমধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির ‘আনন্দমেলা’ অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীতশিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জুলাই রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি। যার মাধ্যমে ইতি ঘটে বাংলা গণসংগীতের জীবন্ত একটি অধ্যায়।