X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রয়াণ দিনে স্মরণ

সাধারণের তরে অসাধারণ এক শিল্পী

বিনোদন রিপোর্ট
২৩ জুলাই ২০২৩, ০০:১২আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৩, ১১:২৪

আমৃত্যু সাধারণই থেকেছেন তিনি। গেয়েছেন সাধারণ মানুষের জন্য, সহজ-সরল ভাষায়। কিন্তু সেই সহজের শক্তি কতটা প্রবল ছিল, তা কম-বেশি সকলের জানা। তার গানের প্রতিবাদী কথা-সুর ছড়িয়ে গেছে নগর থেকে প্রান্তিক অঞ্চলে। জয় করেছে কালের সীমানা। গণসংগীতশিল্পী হিসেবে পেয়েছেন সর্বাধিক পরিচিতি। তিনি ফকির আলমগীর।

আজ রবিবার (২৩ জুলাই) বাংলা গণসংগীতের এই প্রবাদপুরুষের চলে যাওয়ার দিন। ২০২১ সালের এই দিনে মহামারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। সেই সঙ্গে থেমে যায় প্রতিবাদের কালজয়ী কণ্ঠস্বর।

দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ফকির আলমগীরের নামে রাজধানীর একটি সড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার পুত্র মাশুক আলমগীর। গেলো বছরের মার্চেই রাজধানীর খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ার ৬ নম্বর সড়কটির নাম ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর সড়ক’ করা হয়। তবে এবার সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। 

একই বিকাল ৫টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘কথা-গানে ফকির আলমগীরকে স্মরণ’ অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। এতে প্রথমবারের মতো ফকির আলমগীর স্মৃতি পদক দেওয়া হবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুর যোদ্ধা সুজেয় শ্যামকে। এমনটাই নিশ্চিত করেন ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি সুরাইয়া আলমগীর।

ফকির আলমগীরের জন্ম ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সাংবাদিকতায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তবে নিজের ক্যারিয়ার ও জীবন চালিত করেছেন সংগীতের ভুবনে।

১৯৬৬ সালে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন ফকির আলমগীর। সেই সূত্রেই গণসংগীতে আসা। ষাটের দশকেই ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে তিনি সরব হয়ে ওঠেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আগে দেশে যেসব বড় আন্দোলন হয়েছিল, সেগুলোতে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন এই শিল্পী। তার বলিষ্ঠ কণ্ঠ গতি দিয়েছিল আন্দোলনের মিছিলে। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে ফকির আলমগীর যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। কণ্ঠসৈনিক হিসেবে তিনি স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের মনে ছড়িয়ে দেন বিজয়ের স্পৃহা, সাহসের আলো।

দেশ স্বাধীনের পর পূর্ণাঙ্গভাবে সংগীতে ডুব দেন ফকির আলমগীর। প্রতিবাদের সঙ্গে তার গানে জায়গা করে নেয় পপ ও লোকজ সুর। তার গাওয়া কালজয়ী কয়েকটি গান হলো- ‘ও সখিনা গেছস কিনা ভুইল্যা আমারে’, ‘নাম ছিল তার জন হেনরি’, ‘মায়ের একধার দুধের দাম’, ‘নেলসন ম্যান্ডেলা’, ‘সান্তাহার জংশনে দেখা’, ‘বনমালী তুমি’, ‘কালো কালো মানুষের দেশে’, ‘আহা রে কাল্লু মাতব্বর’, ‘ও জুলেখা’ ইত্যাদি।

ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি লেখালেখিতেও নিজেকে বিকশিত করেছেন ফকির আলমগীর। তার লেখা প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো- ‘চেনা চীন’, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘গণসংগীত ও মুক্তিযুদ্ধ’, ‘মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুরা’, ‘আমার কথা’, ‘পপসংগীতের একাল সেকাল’।

দেশীয় সংগীতে ফকির আলমগীরের অবদান কতখানি, তা পরিমাপ করা অসম্ভব। তবে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছিল সরকার। ১৯৯৯ সালেই তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল সম্মানজনক একুশে পদক। এছাড়াও শেরে বাংলা পদক, ভাসানী পদক, সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার, তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক, জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদক, ক্রান্তিপদক, গণনাট্যপদক, গণস্বাস্থ্য মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা, জনসংযোগ সমিতি পুরস্কার, ভারতীয় গণনাট্য সংঘ পুরস্কার, ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় পুরস্কার, বাংলা একাডেমির সম্মানজনক ফেলোশিপসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।

/কেআই/এমএম/
সম্পর্কিত
গণসংগীত মানেই ফকির আলমগীর: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী
গণসংগীত মানেই ফকির আলমগীর: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী
ফ‌কির আলমগীরের চলে যাওয়ার এক বছর
ফ‌কির আলমগীরের চলে যাওয়ার এক বছর
৪৫ বছর পর ফকির আলমগীরের পদে স্ত্রী সুরাইয়া
ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী৪৫ বছর পর ফকির আলমগীরের পদে স্ত্রী সুরাইয়া
‘বাবা দেখে যেতে পারলে আরও তৃপ্তি পেতাম’
ফকির আলমগীরের নামে দুটি সড়ক‘বাবা দেখে যেতে পারলে আরও তৃপ্তি পেতাম’
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
বোনকে নিয়ে সনু নিগমের প্রথম গান!
বোনকে নিয়ে সনু নিগমের প্রথম গান!
বলিউডে কোণঠাসা প্রিয়াঙ্কা!
বলিউডে কোণঠাসা প্রিয়াঙ্কা!
একসঙ্গে এই অভিনেতারা...
একসঙ্গে এই অভিনেতারা...
শিল্পীদের সমস্যাগুলো সংসদে চিহ্নিত করতে চাই: ফেরদৌস
শিল্পীদের সমস্যাগুলো সংসদে চিহ্নিত করতে চাই: ফেরদৌস
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…