বিনোদন বিশেষ

ফরিদপুরের বন্ধ ৩ প্রেক্ষাগৃহ খুলছে ‘বিদ্রোহী’ দিয়ে

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ফরিদপুরের তিনটি সিনেমা হল পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে। সিনেমা হলগুলোকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। এ নিয়ে ফরিদপুরের সিনেমাপ্রেমীদের মনে লেগেছে উৎসবের আমেজ।

হল তিনটি হলো, ফরিদপুর সদরের বনলতা, সদরপুরের রাজিয়া এবং মধুখালীর মধুছন্দা। এই ঈদে চারটি সিনেমা মুক্তি পেলেও বিস্ময়করভাবে তিনটি প্রেক্ষাগৃহেই চলবে শাহীন সুমন পরিচালিত এবং শাকিব খান-বুবলী অভিনীত ‘বিদ্রোহী’ ছবিটি। প্রতিদিন দুপুর ১২টা, বিকাল ৩টা, সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৯টায় মোট চারটি করে শো প্রদর্শিত হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদরের বনলতা সিনেমা হলটি ১৯৮৩ সালে উদ্বোধন করা হয়। দুই বছর আগে করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যায় হলটি। দুই মাস আগে কিছু দিনের জন্য চালানো হলেও কয়েক দিন চলার পর দর্শক না থাকায় ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পুনরায় চালু করতে যাচ্ছে সিনেমা হলটি। এতে প্রথম শ্রেণির ২০০ এবং বিলাস শ্রেণিতে রয়েছে ২০০ আসন।

বনলতা সিনেমা হলের ম্যানেজার সিরাজ আহম্মেদ বলেন, ‘‘ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মঙ্গলবার (ঈদের দিন) থেকে পুনরায় হলটি চালু হচ্ছে। আশা করি দর্শক হবে। মোট আসন রয়েছে ৪০০। প্রথম শ্রেণি ৬০ টাকা এবং বিলাস শ্রেণিতে ৮০ টাকা টিকিটের মূল্য। আমরা ‘বিদ্রোহী’ ছবিটি চালাবো। ইতোমধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি রঙের কাজ করা হয়েছে। এছাড়া চেয়ারগুলোও মেরামত করা হয়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘একসময় সিনেমা হলটি জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। ভালো ছবি দেখার জন্য দর্শকরা ভিড় করতেন। ধীরে ধীরে লোকসানের মুখে পড়ে হলটি।’

সদরপুরের রাজিয়া সিনেমা হলের মালিক ইমন মিয়া বলেন, ‘‘করোনার কারণে দুই বছর সিনেমা হল বন্ধ রাখা হয়েছিল। ঈদ উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ‘বিদ্রোহী’ ছায়াছবির মাধ্যমে হল চালু করবো। প্রতিদিন পাঁচটি শো প্রদর্শিত হবে। প্রথম শ্রেণির টিকিট মূল্য ৬০ টাকা এবং ডিসি ৮০ টাকা।’’

তিনি আরও বলেন, ‘২০০২ সালে সিনেমা হলটি চালু করা হয়। প্রথমে ব্যবসা ভালোই হতো। দিন দিন ব্যবসার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। করোনার কারণে দীর্ঘ দুই বছর বন্ধ থাকায় একেবারে পথে বসে গেছি আমরা।’

মধুখালীর মধুছন্দাতেও একই সময়ে একই সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। হলের মালিক জালাল উদ্দিন বলেন, ‌‘‘করোনার দুই বছর বন্ধ ছিল। ঈদের দিন থেকে ‘বিদ্রোহী’ সিনেমা দিয়ে হল চালু হচ্ছে। অনেক লোকসান দিয়েছি এ পর্যন্ত। যদি দর্শক আসে তাহলে ভালো ব্যবসা হবে।’’

জেলার তিনটি সিনেমা হলে একই ছবি চালানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘শেষ সময়ে এসে ছবি পাইনি। শেষমেশ ‘বিদ্রোহী’ পেয়েছি। কারণ, অন্তত শতাধিক সিনেমা হলে এই ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা করছি।’’ 

বনলতাএদিকে নতুন করে সিনেমা হলগুলো খোলা প্রসঙ্গে জেলার শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলতাফ হোসেন বলেন, ‘চলচ্চিত্রশিল্প আমাদের দেশে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। ভালো সিনেমা তৈরির অভাবে দর্শকরা হলে আসছেন না। তবে আমি আশাবাদী, ভালো ও নন্দিত সিনেমা নির্মিত হলে দর্শক হলমুখী হবে। সিনেমা হলগুলো দর্শকদের জন্য আরামদায়ক হতে হবে। যেন দীর্ঘ সময় বসে থেকে বিরক্তবোধ না হয়।’

আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কাশেম বলেন, ‘যখন আমরা ছোট ছিলাম সিনেমা হলের পরিবেশ সুন্দর ছিল। ভালো মানের সিনেমা চলতো। সপরিবারে দেখার মতো সিনেমা ছিল। যা দেখে আমরা আনন্দ পেতাম এবং উপভোগ করতাম। ঈদের দিন মানুষের স্রোত লেগে যেতো সিনেমা হলে। আহা, কোথায় গেলো সেই দিন, সেসব সিনেমা।’