এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার

যেটা কানে গেছে সেটাকে ‘মুজিব’র ‘ট্রেলার’ বলতে রাজি নই: শ্যাম বেনেগাল

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক ‘মুজিব’-এর ট্রেলার লঞ্চের পর থেকেই বাংলাদেশে বইছে সমালোচনার ঝড়। মাত্র এক মিনিট আটত্রিশ সেকেন্ডের ওই ট্রেলারে নানা ভুলভ্রান্তির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সোশাল মিডিয়াতে অনেকেই ছবিটির নির্মাতাদের একরকম ধুয়ে দিচ্ছেন। ট্রেলারেই এরকম ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে মূল ছবিটিতে না জানি কী হবে, এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ।  

এই তীব্র সমালোচনার মুখে ‘মুজিব’র পরিচালক বলিউডের বর্ষীয়ান চিত্রনির্মাতা শ্যাম বেনেগাল কী বলছেন, তা জানতে বৃহস্পতিবার (২৬ মে) বিকালে কথা হয় তার সঙ্গে। মুম্বাইয়ে নিজের অফিসে বসেই শ্যাম বেনেগাল ধৈর্য ধরে উত্তর দিয়েছেন বাংলা ট্রিবিউন-এর সব প্রশ্নের- 

বাংলা ট্রিবিউন: কানে ‘মুজিব’-এর ট্রেলার লঞ্চের পর থেকেই অনেকে তুমুল কটুকথা বলছেন, আপনারও নিশ্চয় কিছু কিছু কানে এসেছে? 

শ্যাম বেনেগাল: হ্যাঁ, তা এসেছে। যারা সমালোচনা করছেন, তাদের উদ্দেশে আমার একটাই কথা বলার–আপনারা তো এখনও আসল ছবিটাই দেখেননি। তার আগে শুধু একটা ট্রেলার দেখে এত গালমন্দ করার কী যুক্তি থাকতে পারে আমার মাথায় ঢুকছে না। ছবিটা মুক্তি পাক, সবাই দেখুন– তারপর দর্শকদের রায় আমি নিশ্চয় মাথা পেতে নেবো।  

বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু ট্রেলারটাতে এত ভুল হলো কী করে? এটা কি খুব তাড়াহুড়ো করে বানানো? 

শ্যাম বেনেগাল: একদমই তাই। এই জিনিসটা আমি আগেও ব্যাখ্যা করেছি...। আসলে কানে পাঠানোর জন্য আমাদের একটা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে এটা তৈরি করতেই হয়েছিল। অথচ ওদিকে আমাদের মূল ছবির কাজই এখনও শেষ হয়নি, সম্পাদনার টেবিলে কাটাছেঁড়া চলছে। কিন্তু এর মধ্যেই কানের ডেডলাইন চলে এলো, ফলে ওই অসমাপ্ত কাজ থেকেই চটজলদি একটা ‘টিজার’ তৈরি করে আমাদের সেখানে পাঠাতে হলো।  

তাই যেটা কানে পাঠানো হয়েছে সেটাকে আমি ঠিক ‘মুজিব’র ‘ট্রেলার’ বলতেও রাজি নই– বরং সেটাকে ‘টিজার’ বলাই ভালো। যারা এখন ইউটিউবে বা সোশাল মিডিয়াতে ওটা দেখছেন তাদের ‘টিজার’ হিসেবেই দেখতে অনুরোধ করবো। কারণ, এটা তো খুব পরিষ্কার যে আমাদের ছবিটা এখনও ‘ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস’ (কাজ চলছে), আর কোনও অসম্পূর্ণ ছবির ট্রেলার বানানো সম্ভবই নয়। 

বাংলা ট্রিবিউন: তার মানে কি ধরে নিতে পারি পরে ‘মুজিব’র আবার একটি নতুন ট্রেলার লঞ্চ করা হবে? 

শ্যাম বেনেগাল: অফকোর্স! অবশ্যই কিছু দিনের মধ্যে আপনারা ছবির নতুন একটি ট্রেলার দেখতে পাবেন। আর শুধু ট্রেলারই উন্মুক্ত করা নয়, তারপর দেখবেন গোটা ছবিটাই মুক্তি পাবে (হাসতে হাসতে)।

শ্যাম বেনেগাল

বাংলা ট্রিবিউন: আমরা শুনতে পাচ্ছি শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত ভারত সফরের সময় দুই দেশে ‘মুজিব’ যাতে একই সাথে মুক্তি পায়, তার চেষ্টা চলছে? 

শ্যাম বেনেগাল: সেটা আমি ঠিক বলতে পারবো না। কিন্তু এখানে একটা বিষয় হলো, ছবিটা ভালোভাবে শেষ করার জন্য যা সময় লাগবে তা লাগবে...। ওইটুকু সময় কিন্তু আপনাকে দিতেই হবে। একে তো মহামারি আর লকডাউনের জন্য আমাদের কাজে অনেক দেরি হয়েছে, পদে পদে বাধা এসেছে– কিন্তু তার মানে এমন নয় যে ছবিটা আমরা তাড়াহুড়ো করে বানাচ্ছি। আর আমাদের যা শিডিউল আছে, তার থেকে একটা পর্যায়ের চেয়ে খুব বেশি সময়ও আমরা নিতে পারবো না, আবার অনেক আগে তড়িঘড়ি করেও ছবিটা শেষ করতে পারবো না– এই জিনিসটা বুঝতে হবে। ফলে ‘মুজিব’ মুক্তির সঙ্গে যদি বিশেষ কোনও ইভেন্টকে যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়, তাহলে তার আগে সম্পূর্ণ তৈরি ছবিটা হাতে থাকাটা জরুরি।  

বাংলা ট্রিবিউন: সে কারণেই অনেকে অবাক হচ্ছেন আপনার মতো এতো অভিজ্ঞ পরিচালক কীভাবে এরকম তাড়াহুড়ো করে একটা ট্রেলার বানাতে রাজি হয়ে গেলেন...।

শ্যাম বেনেগাল: দেখুন, একটা সত্যি কথা বলি... কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘মুজিব’র ট্রেলার লঞ্চ করা হবে, আমার দিক থেকে অন্তত এরকম কোনও পরিকল্পনা বা উদ্যোগ কখনোই ছিল না। আমার সেরকম কোনও ইচ্ছেও ছিল না। কিন্তু এই ছবির প্রযোজক হলো দুই দেশের সরকার, তারা যখন স্থির করলেন ‘মুজিব’কে উপলক্ষ করে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দুই দেশ থেকেই খুব হাইলেভেল ডেলিগেশন যাবে– তখন খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের কিছু একটা বানিয়েই দিতে হলো। আর ঠিক সেটাই এখন দর্শকরা দেখছেন।  

আসলে এই কথাটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই, দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত সবচেয়ে বড় ছবি এটা, ‘দ্য বিগেস্ট ফিল্ম’। দুই বন্ধু দেশের মধ্যে এটা একটা সাংস্কৃতিক মাইলস্টোন। সেখানে বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার যদি আমাদের হঠাৎ করেও একটা ট্রেলার বা টিজার বানিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করে, কী করে সেটায় না করা সম্ভব? যারা ওই দেড় মিনিটের টিজার দেখে এত সমালোচনা করছেন তাদের আমি এই কনটেক্সটটা (পটভূমি) মাথায় রাখতে বলবো। এবং অনুরোধ করবো মূল ছবিটার জন্য অপেক্ষা করতে!