মাস দুয়েক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন গায়িকা দিঠি আনোয়ার। ফেরার কথা ছিল আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে তার মন ছটফট করছিল। তাই ফ্লাইট এগিয়ে আনেন ৩ সেপ্টেম্বর। দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তার আগে বিমানবন্দর থেকে বাবা গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে ফোন করেও জানান সেটা।
এরপর মাঝপথে শুনতে পান, তার বাবা মারা গেছেন। দেশে ফেরার আনন্দ এক মুহূর্তেই জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় দিঠির। মনে মনে হয়তো চেয়েছিলেন কোনও জাদুবলে মুহূর্তেই বাবার কাছে ছুটে আসবেন। কিন্তু বাস্তবতার নিয়মে তার ফিরতে কিছুটা বিলম্ব হয়।
রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে মারা যান কিংবদন্তি গীতিকবি ও চলচ্চিত্রকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তবে একমাত্র কন্যা দিঠির জন্যই তার জানাজা ও দাফন পিছিয়ে সোমবারে (৫ সেপ্টেম্বর) আনা হয়।
এদিন সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মরদেহ। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এছাড়া সংস্কৃতি অঙ্গন ও সাধারণ মানুষেরাও এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কবির প্রতি।
বাবাকে হারিয়ে গায়িকা দিঠি শোকে কাতর, শব্দহীন। ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তবুও বললেন কিছু কথা, “আব্বুর কোনও অপূর্ণতা ছিলো না। তার একটাই ইচ্ছা ছিল, জীবনের শেষ মুহূর্তটা পর্যন্ত যেন কলম হাতে থাকে। সেটাও ছিল। দেশের মানুষের এতো ভালোবাসা, এটাই আব্বুর সবচেয়ে বড় সার্থকতা। আব্বু বলতেন, ‘দেশের মানুষ ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে, এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর তো নাই রে মা।’ আমার আব্বু ভালো মানুষ ছিলেন তো, এজন্য শান্তিপূর্ণভাবেই গেছেন। কাউকে কষ্ট দেননি।”
দিঠি জানান, গত দুই মাস ধরে দেশের বাইরে ছিলেন তিনি। তবে মৃত্যুর আগের দিনও বাবার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছিল তার। দিঠির ভাষ্য, ‘রওনা দেওয়ার আগে আব্বুকে ফোন করেছি, তিনি তখন সম্পূর্ণ সুস্থ। শুধু এটুকু বলেছেন, দু’তিনদিন ধরে খেতে ভালো লাগছিল না তার।’
বাবার জন্য দোয়া চেয়ে দিঠি সবশেষে বললেন, ‘আব্বু খুব নরম মনের মানুষ ছিলেন। কখনও কাউকে উঁচু স্বরে কিছু বলতেন না। কাউকে ইচ্ছাকৃত কষ্ট দিয়েছেন বলে আমার মনে পড়ে না। তারপরও বলি, যদি তার মনের অজান্তে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে আমার আব্বুকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তার জন্য দোয়া করবেন।’
প্রসঙ্গত, রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান গাজী মাজহারুল আনোয়ার। আজ সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) বাদ আসর বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।