কখনও তিনি লিখেছেন ‘নীল আকাশের নিচে আমি রাস্তা চলেছি একা’; আবার কখনও ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’। ছয় দশকের বর্ণিল গীতিকবি জীবনে রচনা করেছেন এমন অনেক গান। সেসবে উঠে এসেছে দেশ, মুক্তিযুদ্ধ, প্রকৃতি, প্রেম, বিরহসহ মানব জীবনের প্রায় সব অনুষঙ্গ।
আকাশের কথা বারবার টেনে এনেছেন গানের খাতায়। হয়তো সেজন্যই তার অন্তিম যাত্রায় বৃষ্টি ঝরিয়ে কান্নার শব্দ শুনিয়েছে আকাশ। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকাল হতেই শহরজুড়ে নামে ঝুম বৃষ্টি। এই বৃষ্টি শহরের হাজারো গাড়ি-বাড়ি-মানুষের পাশাপাশি ভিজিয়েছে একটি বিশেষ গাড়িকে। যেখানে নিথর দেহে শায়িত বাংলা গানের চিরস্মরণীয় গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ার।
সোমবার দুপুরে তার মরদেহ চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় কবির দ্বিতীয় জানাজা। এরপরই শুরু হয় বৃষ্টি। কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষ চ্যানেল আই ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বৃষ্টির ফোঁটা যেন আপন করে নেয় গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে বহন করা ফ্রিজার ভ্যানকে।
চ্যানেল আইতে জানাজা শেষে বৃষ্টির মাঝেই তার মরদেহ নেওয়া হয় গুলশানের আজাদ মসজিদে। সেখানে বাদ আসর অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় জানাজা। তখনও মসজিদের বাইরে ঝরছিল আকাশের কান্না। এরপর বৃষ্টি খানিক থামলে সন্ধ্যা ঠিক ৬টা নাগাদ বনানী কবরস্থানে মা খোদেজা বেগমের কবরে সমাহিত করা হয় বাংলা গানের আকাশে উজ্জ্বলতম এই গীতিকবিকে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। এছাড়া কবির পুত্র উপল, অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়সহ পারিবার ও সংগীতাঙ্গনের ঘনিষ্ঠজনেরা।
রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি ২০ হাজারের বেশি গান লিখেছেন। চলচ্চিত্র পরিচালনা, প্রযোজনা এবং চিত্রনাট্য রচনার ক্ষেত্রেও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারসহ শতাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন নন্দিত এই গানস্রষ্টা।