মিশা সওদাগরের লিফট-ভীতি, সেখানেই ওয়েব অভিষেক!

প্রচলিত আছে ‘যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়!’ বড় পর্দার ভয়ংকর অভিনেতা মিশা সওদাগরের ক্ষেত্রে এবার তাই ঘটলো। 

শুনে অবিশ্বাস করলেও এটাই সত্যি, এই অভিনেতার ভেতরে রয়েছে লিফট-ভীতি! অথচ সেই লিফটের ভেতরেই আটকে পড়া এক অসহায় মানুষের চরিত্র দিয়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অভিষেক হচ্ছে অভিনেতার। 

মিশাকে নিয়ে চরকি’র এই প্রজেক্টের নাম ‘যদি আমি বেঁচে ফিরি’। নির্মাণে তানিম পারভেজ। এতে মিশার সঙ্গে অভিনয় করেছেন বিজরী বরকতউল্লাহ, দিলরুবা দোয়েল প্রমুখ। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাচ্ছে এটি।
 
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের শর্তের কারণে ওয়েব সিরিজটি নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারছেন না মিশা সওদাগর। শুধু এটুকু জানালেন, ‘আমি কিন্তু বাস্তব জীবনে লিফটে ভয় পাই! অথচ গল্পের প্রয়োজনে সেই লিফটেই আটকা পড়তে হলো। ভয়েস নিয়েও কিছু এক্সপেরিমেন্ট করতে হয়েছে। সবমিলিয়ে কাজটা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিলো। এর বেশি আপাতত কিছু বলতে চাই না।’

ওয়েবে কাজের সূত্র ধরে সিনেমা ও ওটিটির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন মিশা সওদাগর। তার ভাষ্য, ‘মূল ধারার সিনেমা কিছুটা চেনা ছকে নির্মিত হয়। কারণ এখানে প্রযোজকের লগ্নি ফেরতের বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। একজন প্রযোজক যদি তার লগ্নিকৃত টাকা ফেরত না পান, তাহলে তো নতুন সিনেমা প্রযোজনা করবেন না। কিন্তু ওয়েবের কাজ ভিন্ন। এখানে এক্সপেরিমেন্টের সুযোগ আছে। যেহেতু বাজেট তুলনামূলক কম, প্রযোজকের ঝুঁকিও কম। এছাড়া ওটিটিতে সেন্সর নেই, তাই অনেক ধরণের গল্পে এক্সপেরিমেন্ট করা যায়।’

মূল ধারার পাশাপাশি ওটিটি-কেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন ঢালিউডের এই প্রভাবশালী অভিনেতা। তার মতে, এটি সময় ও প্রযুক্তির স্বীকৃতি। এটাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
 
প্রসঙ্গক্রমে বলিউডের শাহরুখ খানের উদাহরণ টানেন মিশা। জানালেন, “শাহরুখ খান কিন্তু কোনও আর্ট ফিল্ম করছেন না, তিনি করছেন ‘পাঠান’, ‘জাওয়ান’-এর মতো সিনেমা। সেগুলো কমার্শিয়াল সিনেমা। নায়িকা নিয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোনকে, ভিলেন জন আব্রাহাম। আবার অতিথি চরিত্রে আছেন সালমান খান। এখানে কিন্তু এক্সপেরিমেন্ট নেই। আবার মনোজ বাজপেয়ীর মতো শিল্পীরা ‘ফ্যামিলি ম্যান’র মতো ওয়েব কনটেন্টে কাজ করেন। দুইটার টার্গেট অডিয়েন্স আলাদা।’’

মিশা সওদাগর

এদিকে সিনেমার কাজে প্রায় ডুবে আছেন মিশা সওদাগর। শুটিং, ডাবিং মিলিয়ে আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তার শিডিউল লকড। সদ্য শেষ করেছেন বদিউল আলম খোকনের পরিচালনায় ‘আগুন’ সিনেমার ডাবিং। এরপর একে একে কাজ করবেন ছটকু আহমেদের পরিচালনায় ‘আহারে জীবন’, সাইফুল ইসলাম মান্নুর ‘অনাবৃত্ত’, মোহাম্মদ ইকবালের ‘বিট্রে’ ও ‘কিল হিম’ এবং মালেক আফসারীর ‘নাইন এম এম’ সিনেমায়।

এসবের ফাঁকে কিছু ওটিটির কাজও করবেন বলে জানালেন মিশা। বলেন, ‘মাঝে কিছু দিন ফাঁকা রেখেছি। ওয়েবের কাজের জন্য। আসলে ভালো কাজের জন্য কেউ আমাকে ডাকলে যেভাবেই হোক শিডিউল ম্যানেজ করবো।’

প্রায় চার দশকের অভিনয় ক্যারিয়ার মিশা সওদাগরের। অভিনয় করেছেন ৮ শতাধিক ছবিতে! এতোটা সফল, দীর্ঘ ও ধারাবাহিকতায়; বাংলাদেশে আর কোনও অভিনেতা নেই। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (এফডিসি) আয়োজিত নতুন মুখ কার্যক্রমে নির্বাচিত হন মিশা। ১৯৯০ সালে ছটকু আহমেদ পরিচালিত ‘চেতনা’ ও ‘অমরসঙ্গী’ চলচ্চিত্র দুটিতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। একটিও সাফল্যের দেখা পায়নি। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরিচালক তাকে খলচরিত্রে অভিনয়ের পরামর্শ দেন। তমিজ উদ্দিন রিজভী পরিচালিত ‘আশা ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন। ‘যাচ্ছে ভালবাসা’ (১৯৯৪) তার খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করা মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র।

নব্বই দশকের শুরু থেকে এখনও ঢালিউডে তিনিই সবচেয়ে সফল খলনায়ক। তাই বলে কেবল এই ছকেই নিজেকে বন্দী রাখতে চান না। সিনেমার ভেতরে ও বাইরে (ওটিটি) নানাবিধ চরিত্রে হাজির হয়ে বুঝিয়ে দিতে চান, তিনি আসলে সর্ব কাজের কাজী!