ফর্মুলা সিনেমায় সাদামাটা এক যুগ। এরপর সংসার জীবনের কণ্টকময় লাল অধ্যায়। একজন অভিনেতার ফুরিয়ে যাওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট রসদ। অথচ বুমেরাং উদাহরণ তৈরি করে দিলেন তমা। প্রভাবশালী তো বটেই, সাম্প্রতিক সময়ে চরিত্র বিচারে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এগিয়ে রয়েছেন এই বহুমাত্রিক অভিনেত্রী।
ব্যাক টু ব্যাক আলোচিত ওয়েব কনটেন্ট পেরিয়ে তমা দাঁড়িয়ে আছেন ছোট পর্দার সবচেয়ে বড় নায়ক আফরান নিশোর প্রথম সিনেমার নায়িকা হিসেবেও। গত বছরের আলোচিত ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ কিংবা ‘সাত নম্বর ফ্লোর’ পেরিয়ে চলতি বছরটা যেন নিজের আঁচলে বেঁধে নিয়েছেন অভিনেত্রী। ওয়েব সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’, ওয়েব সিনেমা ‘ফ্রাইডে’ এবং পূর্ণদৈর্ঘ্য ‘সুড়ঙ্গ’; সমসাময়িক অভিনেত্রীদের যন্ত্রণা পোহানোর যথেষ্ট কারণ হয়ে আছে!
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এসব নিয়ে কথা হলো মির্জা তনয়ার সঙ্গে। শুরুতেই এক যুগের গ্ল্যামারাস কাঁচের ঘর ভেঙে তমার সাম্প্রতিক নন গ্ল্যামারাস পর্দাচিত্র প্রসঙ্গ। বিষয়টি কি সচেতনভাবেই করা? কারণ, সোশ্যাল হ্যান্ডেলের ছবিতে বা ‘প্রেমের লাড্ডু’ গানচিত্রে এখনও তিনি চোখ ধাঁধানো ফিট! বিপরীতে ওয়েব ফিল্ম ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ কিংবা ‘৭ নম্বর ফ্লোর’-এ ঢুকে গ্ল্যামার শব্দটিকে উড়িয়ে দিলেন তুড়ি মেরে।
সাম্প্রতিক চরিত্রগুলো নিয়ে আত্মতৃপ্তি থাকলেও এগুলো বাস্তবায়নে কাঠখড় কম পোড়াতে হয় না নায়িকাকে। প্রসঙ্গক্রমে টেনে আনলেন মুক্তিপ্রতীক্ষিত ওয়েব ফিল্ম ‘ফ্রাইডে’ প্রসঙ্গ। যেটি নাকি দুর্বল হৃদয়ের মানুষদের দেখতে সোজা বারণ করেছেন নির্মাতা রায়হান রাফী! হুঁশিয়ারিতে আরও একধাপ এগিয়ে নায়িকা!
‘এই সিনেমা একা দেখতে হবে। এমনকি আমি আমার মাকে নিয়েও দেখতে পারবো না। বাবা-ভাই তো পরের কথা!’
‘কাজটা আমরা টানা করি। ঢাকার বাইরে। শেষ দৃশ্যটা ছিলো টানা ২৪ ঘণ্টা, একটি ঘরে- ঘন অন্ধকারে। সেদিন সকাল ৬টায় আমি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি, পরদিন সকাল ৭টা নাগাদ শুট শেষ হয়েছে। এই পুরোটা সময় অন্ধকারে। যাইহোক, কাজটি শেষ করে ঢাকায় ফিরে আমি টানা তিনদিন নিজের রুমে অন্ধকারে বসে ছিলাম।’
‘‘আম্মু তো টেনশনে পড়ে গেলেন আমার অবস্থা দেখে। ভাবলেন কী না কি হয়েছে আমার! এরপর আম্মুকে আমার শুটিংয়ের একটা ক্লিপ দেখলাম। তিনি অবাক হয়ে বললেন, ‘তোমরা এটা সত্যিই করেছো!’ এরপর বললেন, ‘ওকে রেস্ট নাও’। কাজটি করতে গিয়ে আমি প্রায় অস্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলাম। এবং এই প্রস্তুতিটা ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে নিচ্ছিলাম আমরা।’’
পাঠকরা অনেকেই জেনেছেন, রাফীর ‘পরাণ’ ছবির মতো ‘ফ্রাইডে’-ও সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। যা বাংলাদেশের আলোচিত একটি ঘটনা। অনেকে হয় তো অনুমানও করে ফেলেছেন এরমধ্যে। তাই তমাকে একটু বাজিয়ে দেখা, অনুমানের সঙ্গে বাস্তবতার মিল কতখানি!
তমা বলছিলেন, ২০২১ থেকে এই কনটেন্টটির জন্য তিনি নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন। শুট করেছেন ২০২২ এর নভেম্বরে। মাঝের এক বছর তিনি অসংখ্য ডার্ক-থ্রিলার ছবি দেখেছেন। সেসব দেখে দেখে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন।
‘এটি বিভৎস একটি কনটেন্ট। অভিনেত্রী হিসেবে এটা আমার জীবনের হরিবল এক্সপেরিয়েন্স। কান্ট ফরগেট টাইপ এক্সপেরিয়েন্স। গল্পটি সবাইকে দেখানোর একটাই কারণ, যেন এমন ঘটনা পৃথিবীর কোথাও আর না ঘটে।’
‘‘বুকের মধ্যে আগুন’ তো দাউ দাউ করে জ্বলছে এখন! অনেকেই অনেক কথা বলছে। আসলে তেমন কিছু না। ‘৭ নম্বর ফ্লোর’ নিয়েও অনেকে অনেক কথা বলেছে। মুক্তির পর দেখা গেল- এটা নতুন একটা গল্প। এটাও তাই।’’
‘এখানে যে চরিত্র, সেটি যে আগে করিনি তা নয়। তবে একটু ডিফারেন্ট ক্যারেক্টার এটা। এর বেশি বলতে পারছি না। হইচই থেকে বারণ আছে। তবে এটা বলতে পারি, অনেক বছর পর একটা মাল্টি কাস্টিংয়ের কাজ করলাম। এতো বিগ বাজেট এখনকার অনেক সিনেমাতেও থাকে না, যেটা এই সিরিজে ছিলো।’
হইচই শিগগিরই সিরিজটি উন্মুক্ত করবে। কাছাকাছি সময়ে বিঞ্জ অ্যাপে আসবে ‘ফ্রাইডে’। চলতি বছরের এই অংশে এসে আপাতত দম নেওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল তমার। উপভোগ করার কথা ছিলো আলোচিত দুটি কাজের রিভিউ পড়ে! না, তার আগেই অভিনেত্রী ঢুকে পড়বেন এক যুগের ফিল্মি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজটির ভেতর। কারণ, তার হাত ধরেই রূপালি পর্দায় অভিষিক্ত হচ্ছেন ছোট পর্দার বড় তারকা আফরান নিশো। রায়হান রাফী দুজনকে নিয়ে নির্মাণ করতে যাচ্ছেন ‘সুড়ঙ্গ’। যার জন্য আফরান নিশো ছেড়েছেন নাটকের কাজ, ৬ মাসে ওজন কমিয়েছেন ১৩ কেজি!
পুনর্জন্মের এই অধ্যায়ে এসে অভিনেত্রী অস্ফুটস্বরে কৃতজ্ঞতা পেশ করলেন নির্মাতা রায়হান রাফীর প্রতি। যার হাত ধরেই তারুণ্যে ফেরা তমার।