তারকার জীবনসঙ্গী যখন সাধারণ কেউ

‘কাবিলা’ কত জনপ্রিয়, এসব নিয়ে আমার স্ত্রী ভাবে না: পলাশ

ভালোবাসা কোনও নির্দিষ্ট দিনে সীমাবদ্ধ নয়, এটা ধ্রুব সত্য। কিন্তু একটা দিনে ঘটা করে ভালোবাসতে তো দোষের কিছু নেই। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সেই ভালোবাসার দিন; একই দিনে প্রকৃতিতে লেগেছে ফাগুনের আগুন। ফলে দিনটি বাঙালির কাছে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। বিশেষ এই দিনে তারকাদের সংসার ও সম্পর্কের গল্প নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ আয়োজন- ‘তারকার জীবনসঙ্গী যখন সাধারণ কেউ’। এ আয়োজনে আমরা শুনতে চেয়েছি সেইসব তারকাদের জীবনসঙ্গীর গল্প, যারা নিজ জগতের বাইরে গিয়ে বাসা বেঁধেছেন।

এই পর্বে রইলো ‘কাবিলা’খ্যাত তারকা জিয়াউল হক পলাশের গল্প...

পলাশের স্ত্রীর নাম নাফিসা রুম্মান মেহনাজ। ২০২২ সালের শেষ দিকে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। নাফিসা নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
 
নাফিসার সঙ্গে পলাশের সম্পর্কের গল্পটা লম্বা সময়ের। সেটার সারাংশ এরকম, “২০১৪’র শেষ কিংবা ১৫’র শুরুর দিকে কথাবার্তার শুরু হয়। তবে আগে থেকেই দুজনের মধ্যে পারিবারিক পরিচয়টা ছিলো। ছাত্রী হিসেবে বেশ ভালো ছিলো নাফিসা। এজন্য আমার বাবা-মা ওকে ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করতো, ভাবতো- ওর সঙ্গে যদি আমাদের ছেলের বিয়ে হতো! কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ও ছাত্রী হিসেবে যতটা ভালো, আমি ততটাই খারাপ! ও যখন আমাকে প্রথম ফেসবুকে নক দেয়, তখন আমিও আগ্রহী হয়ে কথা বলা শুরু করি। এভাবে বছর দুয়েক চলে কথাবার্তা।’’

অন্তর্জাল দুর্ঘটনার কারণে মাঝে প্রিয়তমাকে প্রায় হারিয়েই ফেলেছিলেন পলাশ! কিন্তু বিধাতার জাদুকরী পরিকল্পনায় আবারও তাদের সম্পর্কের সুতো জোড়া লাগে। সেই ঘটনা জানিয়ে পলাশ বলেন, “কাবিলা’ চরিত্রটা জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর আমার আইডি হ্যাক হয়ে যায়। ওই সময় আমার আইডি থেকে হ্যাকাররা ওকে কিছু উল্টাপাল্টা মেসেজ পাঠায়। ও আবার এসব বুঝতো না। ভেবেছিলো আমিই বলেছি। এ কারণে একটা অভিমানের জায়গা থেকে আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আবার ও আমাকে মেসেজ পাঠানো শুরু করে, কিন্তু সেগুলো আমার নজরে পড়তো না। আমার পরিবারের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ হতো। এসব আমি জানতাম না। আমি ভেবেছিলাম, ও হয়ত আমাকে ভুলে গেছে। আফসোস হতো। অনেক পরে ফের আমাদের যোগাযোগ হয়, কথাবার্তা, দেখাসাক্ষাৎ হয়। তখন বাবা-মাও চাচ্ছিলেন আমাদের বিয়েটা হোক। কথা বলতে বলতে একসময় গিয়ে আমাদেরও মনে হয়েছে যে, এখন আমাদের একসঙ্গে থাকা উচিত। এরপর পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে হয়।’’

বিয়ের ক্ষেত্রে আগে থেকেই পরিচয়, বোঝাপড়া থাকা উচিত বলে মনে করেন পলাশ। তার ভাষ্য, ‘আমি মনে করি, জীবনসঙ্গী এমন একজন মানুষ, যার সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে থাকতে হবে। সেই মানুষটার মানসিক দিকটা জানা অনেক জরুরি। বিয়ে মানে তো সারাদিন পর একসঙ্গে শোয়া না। সম্পর্কের মধ্যে একটা মায়া থাকতে হয়। যেমন আমাদের বাবা-মায়েরা চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর একসঙ্গে থাকেন কীভাবে? কারণ তাদের মধ্যে মায়া তৈরি হয়ে গেছে।’

বিয়ের আসনে নাফিসা ও পলাশপলাশের তুমুল জনপ্রিয়তা, ব্যস্ততা কীভাবে মানিয়ে নেন নাফিসা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘ও আসলে আমার সঙ্গে অনেক বছর চলতে চলতে মানসিকতা বুঝে ফেলেছে। আর আমার শোবিজ জীবন নিয়ে ওর মাথাব্যথা নেই। কাবিলা কত জনপ্রিয় বা কেমন, এসব নিয়ে ও ভাবে না। ও একদমই ঘরোয়া মানুষ। আমার ব্যক্তিসত্তাকে ভালোবাসে। তারকা হিসেবে আমার শুটিং থাকবে, বিভিন্ন অনুষ্ঠান নানাবিধ ব্যস্ততা থাকবে, বিষয়গুলো ও আস্তে আস্তে গ্রহণ করে নিয়েছে। আসলে একজন তারকার জীবনসঙ্গী যদি উদার মানসিকতার না হয়, তাহলে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কঠিন। ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।’

বিশেষ দিনে প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছে পলাশের দুটো চাওয়া। তা হলো- ‘একজন সাধারণ মানুষের প্রেমে আমি পড়েছিলাম, সেরকম সাধারণই সে থাকুক। যে আবেগ ও আমাকে দিয়েছে, এই মায়াময় আবেগটা থাকুক সারাজীবন। এটাই চাওয়া ওর কাছে।’