সংগীত ও সিনেমা অঙ্গনে তিনি ছিলেন বটবৃক্ষের মতো। যার ছায়ায় বসে প্রশান্তির নিশ্বাস নিতেন অন্যরা, যার স্নেহ-মমতা আর উপদেশে পেতেন পথচলার সাহস। সেই মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন, আর তাতে রূপালি জগতের তারকারা আসবেন না, এমনটা হতে পারে না।
একদম তাই। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান ২-এ জমকালো আয়োজনে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়েছে কিংবদন্তি গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে। তার লেখা আটটি গান নতুন আয়োজনে প্রচারে আসছে। ‘আইপিডিসি আমাদের গান’র অংশ হিসেবে এদিন সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম গানটি উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তারকায় ভরা এই ‘আলোক সন্ধ্যা’য় হাজির হয়েছেন ঢাকাই সিনেমা ও সংগীতের অনেক তারকা। এর মধ্যে একজন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। স্বামী-নায়ক ওমর সানীকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। তার সঙ্গে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সম্পর্ক ছিলো বাবা-মেয়ের মতো। তাই গীতিকবিকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন নায়িকা।
মৌসুমী বলেন, ‘এমন একজন প্রাণবন্ত মানুষ আমাদের মাঝে নেই, এটা আমি কখনোই বিশ্বাস করতে চাই না। তার প্রত্যেকটা শব্দ আমার কানে এখনও বাজে, আমি শুনতে পাই, আমি দেখতে পাই তাকে। নামাজ পড়লেও তার চেহারা আমার চোখে ভাসে। তার সঙ্গে আমার কত যে আত্মার সম্পর্ক ছিলো!’
গাজী মাজহারুল আনোয়ার বর্ণাঢ্য জীবনে মোট ৪১টি ছবি প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছিলেন, এর মধ্যে সর্বাধিক ৮টি ছবিতে নায়িকা ছিলেন মৌসুমী। এছাড়া মৌসুমী যখন প্রথম সিনেমা নির্মাণ করেন- ‘কখনও মেঘ কখনও বৃষ্টি’, এতে গান লিখে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার।
স্মৃতিচারণে মৌসুমীর ভাষ্য, “কখনও তিনি আমাকে মেয়ে ছাড়া নায়িকা হিসেবে দেখেননি। সবসময় বলতেন, ‘এটা আমার একটা মেয়ে।’ বিশেষ করে আব্বু মারা যাওয়ার পর সবসময় আমাকে বাবার স্নেহ দেওয়ার চেষ্টা করতেন। এই মানুষটা আমার জন্য কী, তা আমি বলে শেষ করতে পারবো না। তার সব কিছু আমার স্মৃতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।”
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে মৌসুমীর গলা কেঁপে ওঠে। আঁচ করা যায়, বাবা সমতুল্য গাজী মাজহারুল আনোয়ারের শূন্যতা এমন জাঁকালো আয়োজনেও তাকে হাহাকারে ডুবিয়ে দিয়েছে।
ছবি: কামরুল ইসলাম