বসন্তের সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে। ঘড়ির কাঁটা চারটার দিকে। রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনের বাইরে বিশাল লাইন। একেবারে প্রবেশমুখ থেকে সেই লাইন পৌঁছে গেছে মূল সড়ক অব্দি। কারণ কিছুক্ষণ পরই এখানে পারফর্ম করবে ব্যান্ড ‘অ্যাশেজ’।
শুধু পারফর্ম বললে অবশ্য পূর্ণতা পায় না। একক কনসার্ট, নতুন মিউজিক ভিডিও এবং অ্যালবামের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ, ভক্তদের সঙ্গে কথোপকথন-ভাব বিনিময়, হাজির থাকবেন প্রতিমন্ত্রী, তারকা অতিথিসহ অনেকেই। সবমিলিয়ে শুক্রবার (১০ মার্চ) সন্ধ্যাটি ‘অ্যাশেজ’ ভক্তদের কাছে নানা চমকে ভরপুর ছিলো।
অ্যাশেজের গান পরিবেশনার আগে মঞ্চে ওঠেন জুনাইদ আহমেদ পলক। উচ্ছ্বসিত ভক্তের মতোই ‘অ্যাশেজ’র প্রতি নিজের ভালোলাগা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “অ্যাশেজ’র প্রত্যেকটা সুরে তীব্র মাদকতা রয়েছে। তাই সবাইকে বলবো- মাদক ছেড়ে ‘অ্যাশেজ’ ধরো। আমি এই ব্যান্ডের নতুন ভক্ত, তবে শক্ত ভক্ত। তাদের গান আমি নিয়মিত শুনি, না শুনলে আমার ঘুম হয় না। ভালোবাসায়, কষ্টে, দুঃখে, এগিয়ে যাবার পথে, সবসময় ‘অ্যাশেজ’ লাগে। ব্যান্ডটির বয়স এখন ১৫ বছর; আমি যখন তাদের গান শুনি, তখন আমিও ১৫ বছর বয়সে ফিরে যাই। কারণ ওই বয়সে প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম। আমি চাই ‘অ্যাশেজ’ আরও যুগ যুগ ধরে সবাইকে অনুপ্রেরণা, উৎসাহ দিয়ে যাক।”
‘চিরকুট’ সুমী বরাবরই জুনায়েদ ইভান ও তার দলকে ভালোবাসেন। সেটাই আরও একবার কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনের মঞ্চে উঠে বললেন। তার উচ্ছ্বসিত কথাগুলো ছিলো এরকম, “আই লাভ ‘অ্যাশেজ’। ওদের সবকিছু আমার ভালো লাগে। তাদের লিরিক্স, একতা, ব্যান্ড নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, সব আমার ভালো লাগে। ‘অ্যাশেজ’ শুধু ঢাকা না, সারা দেশে, প্রতিটা জেলায় পৌঁছে গেছে। এজন্য তাদের শুভেচ্ছা। আর একতাবদ্ধ হয়ে থাকার জন্য ব্যান্ডটির সবাইকে ধন্যবাদ।”
গান পরিবেশনার ফাঁকেই কনসার্টস্থলে হাজির হন অভিনেতা এফ এস নাঈম। মঞ্চের এক কোণায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করছিলেন গান। এরপর গান বিরতিতে মঞ্চে গিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন এভাবে, “অ্যাশেজ’র ভক্ত আমি। তাদের গানের কথাগুলো অসাধারণ। যত বড় হচ্ছি, তত বুঝতে শিখছি। আজকে এখানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। লাভ ইউ ‘অ্যাশেজ’।”
কনসার্ট চলাকালীন এসেছিলেন ফারিণও। তাকে দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে ভক্তরা। ফারিণ বলেন, ‘এতো ক্রাউড আমি প্রত্যাশাও করিনি! এখানে আমি একরকম ছুটে এসেছি। ইভান ভাই গায়ক হিসেবে আমার খুব পছন্দের, এখন নায়ক হিসেবেও পছন্দের। আর নির্মাতা পলাশ ভাইয়ের কথা কী বলবো, তিনি নিজে এতো বড় তারকা, শুটিংয়ের সময় একটা শট নিতেই অনেক সময় লেগেছিলো। কারণ মানুষ শুধু তার সঙ্গে সেলফি তুলতে চলে আসে। তবে এটা সত্যি, তিনি নির্মাতা হিসেবে অনেক মনোযোগী। পারফেক্ট জিনিসটা বের করে আনতে পারেন শিল্পীদের কাছ থেকে।’
জিয়াউল হক পলাশের ভাষ্য, ‘আজকে আমার জন্য অনেক বড় ও স্মরণীয় একটি দিন। আমার মিউজিক ভিডিও রিলিজ হচ্ছে, আর পলক ভাই, সুমী আপু, হামিন আহমেদের মতো মানুষ উপস্থিত আছেন। অনেক চেষ্টা-শ্রমে আমরা কাজটি করেছি। বাকিটা আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম।’
এই ফাঁকে একটি চমকপ্রদ তথ্য দেওয়া প্রয়োজন। ‘অ্যাশেজ’ প্রধান জুনায়েদ ইভান জানান, নতুন প্রকাশ হওয়া গানটি ২০১৫ সালে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেয়েছিলেন। এরপর আর কোথাও কখনও তারা পরিবেশন করেননি। অথচ এদিন যখন গানটির মিউজিক ভিডিও প্রথমবারের মতো দর্শক-শ্রোতার সামনে চালানো হয়, সবাই চিৎকার করে এর সঙ্গে গলা মিলিয়েছে! যেন কোনও পুরনো গান, যেটা নিয়মিত শুনে মুখস্থ করে রেখেছে ভক্তরা। আদতে সেই লাইভ পারফর্মেন্সের ছোটখাটো ভিডিও ক্লিপ থেকেই গানটি মনে গেঁথে নিয়েছেন তারা।
রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত গান পরিবেশন করে ব্যান্ডটি। এরপর ভক্তদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জুনায়েদ ইভান ও তার সতীর্থরা। তারা হলেন- সুলতান রাফসান খান (লিড গিটার), তৌফিক আহমেদ বিজয় (ড্রামস), আদনান বিন জামান (কিবোর্ড) ও ওয়াহিদুজ্জামান তূর্য (বেজ গিটার)।