সুরেলা কণ্ঠে তিনি গেয়েছিলেন ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, যে ছিল হৃদয়ের আঙিনায়, সে হারালো কোথায়, কোন দূর অজানায়’। আবার তার কণ্ঠে ভেসে এসেছে ‘হারানো দিনের মতো হারিয়ে গেছো তুমি’র মতো হৃদয় বিদীর্ণ করা গান। এসব গানের মতো তিনিও চলে গেছেন দৃষ্টিসীমার পরিধি ছাড়িয়ে।
হ্যাঁ, তিনি শাহনাজ রহমতুল্লাহ। বাংলা গানের অন্যতম সফল ও সেরা নারী শিল্পী। যার কণ্ঠে অসংখ্য গান শ্রোতা-মনে স্থায়ী জায়গা দখল করে নিয়েছে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে গেছে কালজয়ীর খেতাব নিয়ে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) শাহনাজ রহমতুল্লাহর চলে যাওয়ার দিন। ২০১৯ সালের এই দিনে মারা যান কিংবদন্তি এই গায়িকা। সে হিসেবে আজ তার চতুর্থ প্রয়াণদিন।
পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে গানে মিশে ছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। তার কণ্ঠ নিঃসৃত কালজয়ী গানের তালিকায় আছে- ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’-এর মতো দেশাত্মবোধক গান। এছাড়া আধুনিক গানেও তার বিপুল সাফল্য। ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘হারানো দিনের মতো হারিয়ে গেছো তুমি’, ‘সাগরের তীর থেকে’, ‘খোলা জানালা’, ‘পারি না ভুলে যেতে’, ‘ফুলের কানে ভ্রমর এসে’ ইত্যাদি গানের সুরেলা কণ্ঠটি তারই।
শাহনাজ রহমতুল্লাহর জন্ম ১৯৫২ সালের ২ জানুয়ারি ঢাকায়। তার এক ভাই বিখ্যাত সংগীত পরিচালক আনোয়ার পারভেজ এবং আরেক ভাই জাফর ইকবাল ছিলেন তুমুল জনপ্রিয় নায়ক-গায়ক।
মাত্র ১১ বছর বয়সেই প্লেব্যাকে অভিষেক ঘটে শাহনাজ রহমতুল্লাহর। ১৯৬৩ সালের ‘নতুন সুর’ সিনেমায় প্রথম কণ্ঠ দেন। এর পরের বছর থেকে বিটিভির নিয়মিত শিল্পী হয়ে ওঠেন। পাশাপাশি চলে সিনেমার গান। এছাড়া লম্বা ক্যারিয়ারে তিনি চারটি একক অ্যালবামও করেছিলেন।
সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯২ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। এছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছিলেন তিনি।
২০০৬ সালে এক জরিপের মাধ্যমে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গান বাছাই করেছিল বিবিসি। সেই তালিকার চারটি গানই শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া।