বিষয়টি অনেকটা কোমা থেকে কোনও মৃত্যুপথযাত্রীর জ্ঞান ফেরার মতো। যেমনটা ঘটলো এবারের ঈদে নারায়ণগঞ্জের তিন প্রেক্ষাগৃহে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের রেশ ধরে নারায়ণগঞ্জ শহরের তিনটি প্রেক্ষাগৃহের কার্যক্রম আবারও শুরু হলো ঈদের তিন সিনেমা দিয়ে। শনিবার (২২ এপ্রিল) ঈদের দিন থেকে ফের জীবন্ত হয়ে উঠলো হলের সাদা পর্দা। তার আগেই হলগুলো পরিপাটিভাবে সাজিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঈদের দিন থেকে শাকিব খান-বুবলীর ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ দিয়ে খুলেছে শহরের খানপুর এলাকার নিউ মেট্রো সিনেমা হল। সজল-পূজার ‘জ্বীন’ দিয়ে খুলেছে শহরের ডিআইটি এলাকার সিনেস্কোপ এবং বাপ্পি-মিতুর ‘শত্রু’ দিয়ে প্রাণ ফিরেছে গুলশান সিনেমা হলের।
কয়েক দিন ধরে সিনেমা হল তিনটি ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় ধুলা-ময়লা জমেছে অনেক। সেগুলো পরিষ্কারের পাশাপাশি হল মালিকরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন সাউন্ড, লাইট, ফ্যানসহ নানান আনুষঙ্গিক বিষয় মেরামতের।
সিনেস্কোপ থেকে বের হয়ে সড়কের বিপরীত দিকে রয়েছে শহরের অন্যতম পুরনো গুলশান সিনেমা হল। দীর্ঘ ৩৩ বছরের বেশি সময় ধরে এই সিনেমা হলের মেশিন অপারেটসহ নানান আনুষঙ্গিক কাজ করে আসছেন পান্নু বাবু। তিনি বলেন, ‘‘এবার ঈদে আমরা চালাচ্ছি নায়ক বাপ্পির ‘শত্রু’। প্রথম দিনে দর্শক সাড়া ভালোই মিলেছে। সামনে কেমন হয় তা দেখার বিষয়। তবে আগের তুলনায় দর্শক কমে গেছে। এখন আগের মতো দর্শক হয় না। একসময় দর্শকদের দীর্ঘ লাইন দেখেছি, এখন তা দেখা যায় না।’’
প্রায় ৪০ বছরের অধিক সময় ধরে সিনেমা হলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন নিউ মেট্রো সিনেমা হলের মালিক সাইদুর রহমান। বাংলা সিনেমায় বর্তমানে দর্শক খরা নিয়ে বেশ হতাশা প্রকাশ করেন এই চলচ্চিত্রজন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ব্যবসার অবস্থা ভালো না। দর্শক সংকটে ধুঁকে ধুঁকে চলছে হলগুলো। অনেক সময় খরচের টাকাও ওঠে না, লোকসান গুনতে হয়। অথচ এক সময় এই ব্যবসার জৌলুস ছিল। তখন দৈনিক পাঁচ লাখ টাকাও আয় হয়েছে। এখন সেটা মাসেও হয় না।’
সিনেমার মান কিংবা হলের পরিবেশ নয়, দর্শক সংকটের কারণ হিসেবে এই হল মালিক দুষলেন স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সহজলভ্যতাকে। তিনি বলেন, ‘এখন সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন চলে এসেছে। ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট চ্যানেলসহ আধুনিক সব ব্যবস্থা রয়েছে। এগুলোর কল্যাণে ঘরে বসেই সিনেমা দেখা যায়। ফলে টাকা খরচ করে অনেকে সিনেমা হলে আসতে চায় না। তবে এভাবে চলতে থাকলে সিনেমা হলের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে।’
এই ঈদে এত ছবির পরেও যদি দর্শক আগের মতো হলে না ফেরে, তাহলে টিকে থাকা বাকি হলগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে বলেও মনে করছেন নারায়ণগঞ্জের সিনেমা হল সংশ্লিষ্টরা।