আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। এখন তা ফলতে শুরু করেছে। দেশের প্রেক্ষাগৃহে হলিউড-বলিউড সিনেমার দাপট। আর কোণঠাসা হয়ে ধুঁকছে দেশের ছবি। শুক্রবার (২৬ মে) মুক্তি পাচ্ছে দেশের দুটি সিনেমা- ‘আদিম’ ও ‘মা’। একটি জয় করেছে রাশিয়ার মস্কো উৎসব, আরেকটি প্রশংসা কুড়িয়েছে বিখ্যাত কান উৎসবে। অথচ নিজ দেশেই হলবঞ্চিত ছবিগুলো!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘আদিম’ পেয়েছে তিনটি (স্টার সিনেপ্লেক্স-বসুন্ধরা, ব্লকবাস্টার সিনেমাস ও সিনেস্কোপ) হল, আর ‘মা’ সিনেমারও জুটেছে তিনটি (স্টার সিনেপ্লেক্স-মিরপুর, ব্লকবাস্টার সিনেমাস ও রুটস সিনেক্লাব)। শো সংখ্যাও নামমাত্র। অথচ একই সময়ে দেশের মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে রমরমিয়ে চলছে হলিউড ও বলিউডের ছবি। যেগুলোর শো সংখ্যা গুনতে আঙুলের কর ফুরিয়ে যায়!
তথ্য-উপাত্তসহ বিষয়টা আরও পরিষ্কার হওয়া যাক। দেশের সবচেয়ে বড় মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্স। তাদের সাতটি শাখায় শুক্রবার (২৬ মে) থেকে চলবে পাঁচটি হলিউড ও একটি বলিউড সিনেমা। এর মধ্যে রয়েছে ‘জন উইক: চ্যাপ্টার ৪’, ‘ফাস্ট এক্স’, ‘দ্য লিটল মারমেইড’র মতো আলোচিত ছবি। এগুলোর শো সংখ্যা যথাক্রমে ১১, ২৩ ও ১৭টি। এছাড়া বলিউডের ব্লকবাস্টার ছবি ‘পাঠান’র দুই সপ্তাহ পেরিয়েও প্রতিদিন ২৫টি শো পেয়েছে।
অন্যদিকে এই মাল্টিপ্লেক্স চেইনে দেশের ছবি ‘মা’ ও ‘আদিম’ পেয়েছে মোটে একটি করে হল, আর দৈনিক শো সংখ্যা দুটি! যা বিস্ময়কর এবং হতাশাজনক বলে মনে করছেন ইন্ডাস্ট্রির মানুষেরা।
বিষয়টি নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে বাংলা ট্রিবিউন। প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা বরাবরই দেশের ছবিকে সুযোগ দেই। ‘মা’ ও ‘আদিম’ ছবি দুটিও চালাবো। আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিষদ সার্বিক দিক বিবেচনা করেই শো সংখ্যা নির্ধারণ করে। আশা করছি ছবিগুলো ভালো করবে। আর যদি প্রথম সপ্তাহে ভালো সাড়া পায়, তাহলে দ্বিতীয় সপ্তাহে সেটা বিবেচনা করা হবে।”
এদিকে ‘মা’ ছবির নির্মাতা অরণ্য আনোয়ার অবশ্য হলসংকটে নজর দিতে চান না। তার ভাষ্য, ‘প্রথম সপ্তাহে আমরা কেবল মাল্টিপ্লেক্সেই ছবিটা দিতে চেয়েছি। এরপর সিঙ্গেল স্ক্রিনের দিকে যাবো। এ কারণে হলসংখ্যা কম। তবে মুক্তির আগেই যে সাড়া পাচ্ছি, তাতে আমি অভিভূত। প্রচুর মানুষ অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করছেন। আমার তো ধারণা, আজকের (২৫ মে) মধ্যেই শুক্র-শনিবারের সব টিকিট বিক্রি হয়ে যাবে।’
সৃজনে মগ্ন নির্মাতারা অবশ্য বরাবরই আক্ষেপ-অভিযোগ এড়িয়ে চলতে চান। যেমনটা করছেন অরণ্য আনোয়ার ও যুবরাজ শামীম। কিন্তু সামগ্রিক অর্থে ছবিগুলোর হল সংখ্যা ইন্ডাস্ট্রির নড়বড়ে অবস্থার দিকেই আঙুল তাক করে।
উল্লেখ্য, ‘মা’ ছবিটির গল্প মুক্তিযুদ্ধের সময়ের। মৃত ঘোষিত সাত মাস বয়সী এক সন্তানকে নিয়ে তার অসহায় মায়ের আবেগের গল্প। এতে মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পরীমণি। এছাড়াও আছেন আজাদ আবুল কালাম, ফারজানা ছবি, সাজু খাদেম, রেবেনা করিম জুঁই, শিল্পী সরকার অপু, শাহাদাত হোসেন প্রমুখ। ছবিটি নির্মিত হয়েছে অরণ্যে পুলক (এপি)-এর ব্যানারে। ৭৬তম কান উৎসবের মার্শে দ্যু ফিল্মে (উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা) গত ২০ মে ছবিটির প্রিমিয়ার হয়। সেখানে বিভিন্ন দেশের দর্শক এটি দেখে প্রশংসা করেন।
অন্যদিকে ‘আদিম’ নির্মিত হয়েছে টঙ্গীর এক বস্তিতে। গল্পটাও আবর্তিত হয়েছে ওই বস্তিকে ঘিরে। এতে অভিনয় করেছেন বাদশা, দুলাল, সোহাগী, সাদেক প্রমুখ। নির্মাতার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘রসায়ন’র ব্যানারে গণঅর্থায়নে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। এটি ৪৪তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘নেটপ্যাক সম্মাননা’ অর্জনসহ একাধিক উৎসবে প্রশংসিত হয়েছে।