৭৫ বছরের জীবন। এর মধ্যে পাঁচ দশকের বেশি সময় দিয়েছেন সিনেমায়। আরও স্পষ্ট করে বললে, ঢাকার সিনেমায়। এ দেশের সিনেমা শিল্পের উত্থানে যে’কজনের ভূমিকা সর্বাধিক, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। তবে অন্য অনেকের চেয়ে তিনি একটি জায়গায় ব্যতিক্রম- অভিভাবকত্ব। শুধু নিজের কাজটুকু করেই তিনি দায় সারতেন না, বরং সবাইকে সহযোগিতা-পরামর্শ দিয়ে ইন্ডাস্ট্রির পিতার ভূমিকাও পালন করতেন। তাই সকলেই তাকে নির্দ্বিধায় বলেন ঢালিউডের রাজা কিংবা নায়করাজ।
আজ সোমবার (২১ আগস্ট) সেই রাজা তথা রাজ্জাকের চলে যাওয়ার দিন। ২০১৭ সালের এই দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন না ফেরার দেশে। দেখতে দেখতে রাজাহীন ঢালিউডের অর্ধযুগ কেটে গেছে।
ভক্ত, দর্শক ও সিনেমা অঙ্গনের অনেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কিংবদন্তি এই নায়ককে স্মরণ করছেন। তার গড়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠান ‘চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি’তেও থাকছে আয়োজন। সংগঠনটির বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইমন সাদিক বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘সোমবার বাদ আসর ওনার স্মরণে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে। সমিতির নেতা-সদস্যদের অনেকেই এতে অংশ নেবেন। আমরা সবাই মিলে প্রিয় নায়করাজের জন্য দোয়া করবো।’
সম্রাট বলেন, ‘আমার বাবার জন্য শুধু একটু দোয়া চাই সবার কাছে। আর কিছু নয়।’
এক নজরে রাজ্জাক
পুরো নাম আব্দুর রাজ্জাক। জন্মেছেন ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতার নাকতলা এলাকার জমিদার বাড়িতে। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। তৎকালীন বম্বে গিয়েছিলেন অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। তাই কলকাতায় ফিরে আসেন। আর মাত্র ২০ বছর বয়সেই পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে করেন।
এরপর কলকাতায় দাঙ্গা শুরু হলে সেখানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকা কঠিন হয়ে যায়। তাই ঢাকায় চলে আসেন রাজ্জাক। এখানে এসেও নিজের স্বপ্নটাকে বুকে নিয়ে নাম লেখান সিনেমা অঙ্গনে। ১৯৬৪ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে ঢাকার সিনেমায় কাজ শুরু করেন। এর দু’বছর পর আসেন অভিনয়ে। ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ দিয়ে তার বর্ণিল অভিনয় অধ্যায়ের সূচনা হয়।
শুধু অভিনয় নয়, নির্মাণেও নৈপুণ্য দেখিয়ে গেছেন তিনি। তার পরিচালিত ছবির সংখ্যা ১৬।
এক জীবনে প্রায় সব অর্জনই নিজের করে নিয়েছেন তিনি। দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন ২০১৫ সালে। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার। অর্জন করেছেন আজীবন সম্মাননাও। খ্যাতি পেয়েছেন নায়করাজ হিসেবে।
তবে পুরস্কারের ঊর্ধ্বেও তার প্রাপ্তি হলো সর্বস্তরের মানুষ ও ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির ভালোবাসা। বলা বাহুল্য, ঢালিউডের অন্যতম ক্লিন ইমেজের সর্বজনপ্রিয় তারকা তিনি। যার অভাব প্রতি মুহূর্তে ভাবায়, ভোগায় ঢাকাই সিনেমাকে।