নায়করাজ রাজ্জাক, বেঁচে থাকলে আজ তার বয়স হতো ৮৩। কিন্তু মরে গিয়ে তিনি আজও অমর হয়ে আছেন। তাই তো তার জন্মদিনে লাখো মানুষ তাকে স্মরণ করছেন গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
রাজ্জাকের জন্ম কলকাতার এক জমিদার বংশে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। সেই স্কুলজীবন থেকেই শুরু মঞ্চে অভিনয়।
১৯৫৮ সালে তিনি যখন কলেজে পড়েন, তখন প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। অজিত ব্যানার্জির ‘রতন লাল বাঙালি’ নামের সেই সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করেন আশিস কুমার ও নায়িকা সন্ধ্যা রায়। ১৯৫৯ সালে কলকাতার রাজ্জাক অভিনয় শিখতে মুম্বাই যান। অভিনয়ে দক্ষ হতে ভর্তি হন অভিনয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফিল্মালয়ে। তিনি খুব করে চেয়েছিলেন মুম্বাই সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকতে, কিন্তু সেটি তার জন্য কঠিন ছিল। বলা যায়, রীতিমতো অসম্ভব।
১৯৬২ সালে খায়রুন্নেসাকে বিয়ে করেন রাজ্জাক। স্ত্রীকে ‘লক্ষ্মী’ বলে ডাকতেন তিনি। বছর যেতে না যেতেই জন্ম হয় তাদের প্রথম পুত্রসন্তানের। এর এক বছর পর কলকাতায় দাঙ্গা বাধে। দাঙ্গার কারণে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, ত্রিপুরা থেকে দলে দলে মুসলমানেরা পাড়ি দেয় তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে। রাজ্জাকও স্ত্রী লক্ষ্মী ও শিশুপুত্র বাপ্পাকে নিয়ে দাঙ্গার সময়ে ঢাকায় চলে আসেন। প্রথম দিকে জীবিকার জন্য টিভি নাটকে কাজ শুরু করেন। একদিন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ আসে রাজ্জাকের। ১৯৬৫ সালে ‘আখেরি স্টেশন’ ছবিতে সহকারী স্টেশন মাস্টারের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। সেটিই ছিল রাজ্জাকের প্রথম ঢাকার সিনেমায় অভিনয়। এরপর আরও বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেন।
১৯৬৬ সালে জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে লখিন্দরের চরিত্রে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান রাজ্জাক। সিনেমাটি দারুণ ব্যবসায়িক সফলতা পায়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। নায়ক হতে চেয়েছিলেন রাজ্জাক। তাই অন্য কোনও পেশায় যুক্ত হননি। ঢাকায় এসে নিজের মেধা, প্রতিভার সবটুকু ঢেলে দিয়ে পরিশ্রম করে তিনি নায়করাজের জায়গা প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই ছোট্ট চরিত্র থেকে তিনি হয়ে ওঠেন ঢালিউডের নায়কদের রাজা!
এক সময় এত তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি, তাকে বলা হতো বাংলাদেশের ‘উত্তমকুমার’। তিনি আজও বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমীদের মনে জ্বলজ্বল করছেন।