‘গাদার ২’র এমন বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে রহস্য কী

সিনেমার ভাষায় যেটাকে বলে অলটাইম ব্লকবাস্টার; সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া হিন্দি সিনেমা ‘গাদার ২’ সেই তকমাটিই নিজের করে নিয়েছে। ৬০ কোটি রুপি বাজেটের এই ছবির কালেকশন ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে ৪৬০ কোটি রুপি। এখনও এর দৌড় থামেনি, বরং দাপটের সঙ্গেই চলছে ভারতের সিনেমা হলগুলোতে।

বক্স অফিস বিশ্লেষক সুমিত কাড়েলের তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ‘গাদার ২’র ফুটফলস তথা দর্শকের সংখ্যা ৩ কোটি পেরিয়ে গেছে। যা এই সময়ে বড় মাইলফলক বটে। চলতি বছরের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা ‘পাঠান’র টিকিটও সাকুল্যে বিক্রি হয়েছিল প্রায় তিন কোটির মতো। যা মুক্তির ১৮ দিনেই অতিক্রম করে ফেলেছে ‘গাদার ২’। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ‘পাঠান’র লাইফটাইম কালেকশনের (৫৪৩ কোটি) রেকর্ডও ভেঙে দিতে পারে।

‘গাদার ২’র দৃশ্যে আমিশা প্যাটেল ও সানি দেওলকিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, আধুনিক সিনেমা হিসেবে ‘গাদার ২’ খুব একটা মানসম্পন্ন নয়। ‘আইএমডিবি’তে এর রেটিং ১০-এর মধ্যে মাত্র ছয়! এছাড়া টাইমস অব ইন্ডিয়া কিংবা কইমই ডটকমের মতো গণমাধ্যম ছবিটিকে ৫-এর মধ্যে মাত্র ১-২ রেটিং দিয়েছে! শুধু তাই নয়, ওভার অ্যাক্টিংয়ের কারণেও সমালোচকদের কাছ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে ছবিটি।

তাহলে ঠিক কী কারণে সানি দেওল অভিনীত এই সিনেমা এমন বিস্ময়কর ব্যবসা করছে? কোন রহস্যে একের পর এক বক্স অফিস রেকর্ড ভাঙছে? হিন্দুস্তান টাইমস সূত্রে জানা গেলো কয়েকটি কারণ…

নস্টালজিয়া

বলা চলে এটিই ‘গাদার ২’র ব্যবসায়িক সাফল্যের প্রধান রহস্য। ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গাদার’র সিক্যুয়েল এই ছবি। ওই ছবি গোটা ভারতের আবেগের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল বক্স অফিসে, টিকিট বিক্রিতে। পাঁচ কোটির বেশি মানুষ ছবিটি টিকিট কেটে দেখেছিল, যেই রেকর্ড এখনও কোনও ছবি ভাঙতে পারেনি। ‘গাদার’র অ্যাকশন, গান, তারা সিং ও সাকিনার ভালোবাসা দর্শকের মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। সেই সিনেমার অনেক অনুষঙ্গ, দৃশ্যই নতুন করে ‘গাদার ২’তে যুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে ছবিটি সাধারণ দর্শককে প্রবলভাবে আকর্ষণ করছে।

‘গাদার’ সিনেমার দৃশ্যদেশাত্মবোধ

কোনও ছবিতে দেশপ্রেম কিংবা পাকিস্তান বিরোধিতা দেখানো হলে সেই ছবি ভারতে স্বাভাবিকভাবেই ভালো ব্যবসা করে। আর ‘গাদার’র মতো ‘গাদার ২’তেও সেই আবহ রাখা হয়েছে। পাকিস্তানকে ভিলেন রূপে দেখিয়ে ভারতীয়দের মন জিতে নিয়েছেন সানি-আমিশারা। এর সঙ্গে ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি জাতীয় স্লোগানগুলো ছবিটিকে আরও বেশি গতি দিয়েছে।

মুক্তির সময়

‘গাদার ২’ মুক্তি দেওয়া হয়েছে ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে। পাঁচ দিনের লম্বা ছুটি ছিল তখন। যার ফলে প্রথম দিন থেকেই বক্স অফিসে ঝড় তোলে ছবিটি। ফার্স্ট উইকেন্ড (প্রথম তিন দিন) শেষে এর কালেকশন ছাড়িয়ে যায় ১৩৮ কোটি রুপি!

সিঙ্গেল স্ক্রিনের পুনর্জাগরণ

যুগ যুগ ধরে সিনেমা ব্যবসার মূল কেন্দ্র সিঙ্গেল স্ক্রিন। তবে বর্তমান যুগে ক্রমশ মাল্টিপ্লেক্সের দাপট বাড়ছে। বিপরীতে ধুঁকছে প্রান্তিক হলগুলো। ‘গাদার ২’র মাধ্যমে সেই হলগুলোতে পুনর্জাগরণ এসেছে। কারণ একেবারে সাধারণ দর্শকরাও ছবিটি দেখতে হলে আসছেন। পাঞ্জাব, বিহার, উত্তরপ্রদেশ কিংবা রাজস্থান, সব অঞ্চলের সিঙ্গেল স্ক্রিনেই দর্শকের ঢল নেমেছে।

‘গাদার ২’ দেখতে দর্শকের ভিড়পয়সা উসুল বিনোদন

যে কোনও সিনেমার সাফল্যের প্রধান শর্ত হলো- এটি পয়সা উসুল সিনেমা কিনা। অর্থাৎ টাকা খরচ করে ছবিটি দেখার পর দর্শকের যদি মনে হয়, টাকাটা উসুল হয়েছে; তাহলে সেই ছবি সাফল্যের দিকে এগিয়ে যায়। মান বিচারে ‘গাদার ২’ পিছিয়ে থাকলেও নিরেট বিনোদনে ভরপুর ছবিটি। সানি দেওলের অ্যাকশন কিংবা গর্জন, এসবের প্রতি ভারতীয় দর্শকের আলাদা আগ্রহ রয়েছে। সেটাও ছবিটির সাফল্যের পালে হাওয়া দিয়েছে।

বলা প্রয়োজন, ‘গাদার’র মতো ‘গাদার ২’ সিনেমাটিও পরিচালনা করেছেন অনিল শর্মা। এতে সানি দেওল, আমিশা প্যাটেলের সঙ্গে আরও আছেন উৎকর্ষ শর্মা, গৌরব চোপড়া, সিমরাত কৌর প্রমুখ। পরিচালক অনিল শর্মার সঙ্গে ছবিটি প্রযোজনা করেছে জি স্টুডিওজ।