বিশ্বকাপ বিশেষ

‘তাদের চেয়ে কি আমরা ক্রিকেটটাকে বেশি বুঝি’

‘রেহানা’কে নিয়ে কান উৎসব পেরিয়ে বলিউডের ‘খুফিয়া’ চমক। আন্তর্জাতিক বিবেচনায় এতটা সমৃদ্ধ উপস্থিতি বাংলাদেশের খুব বেশি অভিনেত্রীর প্রোফাইলে জোটেনি। অভিনয়গুণ আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যেমনটা জোটালেন আজমেরী হক বাঁধন। যদিও বিষয়টি ‘এলেন, দেখলেন, জয় করলেন’-এর মতো নয়। বরং তার এই অর্জনের পেছনে রয়েছে লম্বা পরাজয়ের গ্লানি। ফলে অভিনয় মাঠ থেকে টেনে যখন তাকে খেলার মাঠে নামানো হলো, তখনও তিনি ঘুরে-ফিরে সেই কথাটুকুই মনে করিয়ে দিতে চাইলেন সবাইকে- ‘শুধু জয়টাকে সেলিব্রেট করলে হবে না, পরাজয়টাকেও একইভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে’। খেলাধুলা নিয়ে তার এমন কিছু ভাবনার প্রকাশ ঘটলো বাংলা ট্রিবিউন-এর ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজনে- 

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রিয় খেলা কোনটি?

আজমেরী হক বাঁধন: আসলে খেলা ওই অর্থে দেখি বা পছন্দ করি, অমন না। তবে ক্রিকেট খেলাটা দেখি, বড় ম্যাচ থাকলে। গত বিশ্বকাপেই বলেছি আপনাদের, ক্রিকেট যাও বুঝি, ফুটবল একদমই বুঝি না। ক্রিকেটও যে খুব বুঝি, তা না। তবে এটার সঙ্গে একটা আবেগ জড়িয়ে আছে। খেয়াল করুন, আমরা যখন বড় হচ্ছি, তখন কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমও গ্রো করছিল। সবাই খেলাটা দেখা শুরু করলো। প্লেয়াররাও ফাইট দেওয়া শুরু করলো। একটা জয় পেলেই সবাই রাস্তায় নেমে যেতাম। মূলত সেখান থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালোলাগা তৈরি হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ কবে কোথায় কোন দলের দেখেছেন। মনে পড়ে?

আ হ বাঁধন: মনে নাই। তবে আমার কাছে একটা স্মৃতি স্ট্রাইকিং। ওটার পর থেকেই আগ্রহ মে বি তৈরি হলো ক্রিকেটের প্রতি। আইসিসি ট্রফি ওয়ার্ল্ড কাপের সময় যে বিজয়টা হয়। ইন্টারমিডিয়েট পড়ি সম্ভবত। ওই ম্যাচটি টিভিতে দেখেছি। বিজয়ের পর দেখেছি বাংলাদেশের সাপোর্টাররা মাঠের মধ্যে ঢুকে গেলো পতাকা নিয়ে। ঢাকার রাস্তায় নামলো মানুষের ঢল। আমি যখন বেরুচ্ছিলাম রাস্তায়, মানুষ খুব উদযাপন করছে। সেটা আমাকে খুব প্রভাবিত করেছে এই খেলাটার প্রতি।

একইভাবে রিসেন্টলি আমার হৃদয়ে কড়া নেড়ে গেছে নারী ফুটবল টিম ও ক্রিকেট টিম। আমাদের মেয়েরা এখন সত্যিই দারুণ পারফর্ম করছে। এটা আমাকে দারুণ ইনস্পায়ার করে।

বাংলা ট্রিবিউন: বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রতি আপনার প্রত্যাশা কী?

আ হ বাঁধন: আসলে প্রত্যাশা কী বলবো। বাংলাদেশ টিম যেন স্ট্যাবিলিটি নিয়ে খেলে, সেটাই মূল প্রত্যাশা। আমি চাই আমার দল সম্মানজনক ফাইট যেন করে। জিতলে তো কথাই নাই। এটাও বলতে চাই, মানুষের জীবন অথবা খেলায়- হারজিত থাকবেই। জিতলে আমরা সবাই খুশি হয়ে যাই। কিন্তু হারলেও পাশে থাকা জরুরি। জিতে যাওয়াই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হলে আমরা খুব বেশি এগোতে পারবো না। আমি যখন দেখি সবাই সমালোচনা করছে তখন ডিজহারটেড হই। এটা ঠিক না। শুধু জয়টাকে সেলিব্রেট করলে হবে না, পরাজয়টাকেও একইভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে আমাদের।

আজমেরী হক বাঁধনবাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশের বাইরে আপনার পছন্দের দল কোনটি?

আ হ বাঁধন: বাংলাদেশের বাইরে গেলে ইন্ডিয়া সাপোর্ট করি। তবে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া খেলা হলে অবশ্যই বাংলাদেশ। দেশের বেলায় নো কম্প্রোমাইজ, সে যত বড় দলই হোক।

বাংলা ট্রিবিউন: কোন কোন ক্রিকেটারের সঙ্গে আপনার সখ্য রয়েছে। সেটি কোন পর্যন্ত!

আ হ বাঁধন: (বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে ভেবে-চিন্তে বললেন) ওই অর্থে সখ্য নাই...। তবে মাশরাফিকে ভীষণ পছন্দ আমার। ওনার লিডারশিপটা একটা সময় আগ্রহের জায়গা তৈরি করেছিল। এর বাইরে সখ্য আসলে হয়নি কারও সাথে।

বাংলা ট্রিবিউন: ক্রিকেট খেলেছেন কখনও? মজা করে হলেও...

আ হ বাঁধন: ক্রিকেট খেলি নাই জীবনেও। আগেই বলেছি, বিশেষ করে ফুটবল-ক্রিকেট দুটোই আমি কম বুঝি।

আজমেরী হক বাঁধনবাংলা ট্রিবিউন: তাহলে কোন খেলাটা পারেন বা বোঝেন বা খেলেন...

আ হ বাঁধন: অনেক খেলা পারি। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। ছোটবেলায় জেলা শহরগুলোতে ছিলাম। তখন দেশীয় কিছু খেলা ছিল। খুব খেলতাম। যেমন দাড়িয়াবান্ধা, বৌছি, গোল্লাছুট- এগুলো খেলতাম ছোটবেলায়। তারপর আসলে ওভাবে খেলা হয়নি।

বাংলা ট্রিবিউন: বিশ্বকাপ মিশনে বাংলাদেশ টিমের প্রতি আপনার কোনও পরামর্শ?

আ হ বাঁধন: পরামর্শ! সেটা দেওয়ার আগে একটা বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমরা যখন খেলা দেখতে বসি, তখন অনেকেই নানা কমেন্ট্রি করেন। বলেন, এটা কী করলো? কেন ওকে বল দিলো। কেন তাকে দলে নিলো না। এমন শট কেন খেললো।

এটা হয়তো ওই মানুষটা আবেগে বলে। কিন্তু যারা খেলছে, যারা টিমটা গঠন করেছেন, তাদের আমরা কি এভাবে জাজ করতে পারি? তাদের চেয়ে কি আমরা ক্রিকেটটাকে বেশি বুঝি? ফলে আমিও তেমন কোনও পরামর্শ দিতে চাই না টাইগার বাহিনীকে। থাকলো ওদের প্রতি ভালোবাসা আর অদম্য সাহস।