১৮ জুলাই। দেশজুড়ে চলছে কোটা সংস্কারের নামে তুমুল সহিংসতা। পুরো ঢাকা ছিলো অবরুদ্ধ। বন্ধ ছিলো ইন্টারনেট। এরমধ্যেই করোনা ভাইরাস পজিটিভ হন কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা।
খবরটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ববিতার ছোট বোন অভিনেত্রী চম্পা।
শনিবার (২৭ জুলাই) তিনি জানান, ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চারদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ববিতার করোনা নেগেটিভ হয়। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বাসায় ফিরে যান। তবে শারীরিক দুর্বলতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি ববিতা।
আরও বলেন, ‘দেশের সার্বিক অবস্থা ভালো ছিলো না তখন। এর মধ্যে আপার করোনায় আক্রান্তের খবরে আমরা ঘাবড়ে যাই। একা মানুষ, কীভাবে কী করবে, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তারপর বড় আপা (অভিনেত্রী সুচন্দা) ও আমরা মিলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নিই। টানা চার দিন থাকার পর করোনামুক্ত হয়ে ঘরে ফিরলেন। আপাতত আমরা স্বস্তিতে আছি।’
এবারই প্রথম নয়, আগেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ববিতা।
বাংলা চলচ্চিত্রের নন্দিত অভিনেত্রী ফরিদা আক্তার পপি। যদিও সিনেমায় তিনি ববিতা নামেই পরিচিত। সত্তর ও আশির দশকে অদম্য নায়িকা হয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের সাদাকালো পর্দায় আলো ছড়ানো এই অভিনেত্রী এখনও দর্শক-হৃদয়ে অমলিন।
চলচ্চিত্রে আসার পেছনে ববিতার জন্য বড় অনুপ্রেরণা তার বড় বোন সুচন্দা। কিংবদন্তি নির্মাতা জহির রায়হানের ‘সংসার’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে ১৯৬৮ সালে অভিষেক হয় ববিতার। এই চলচ্চিত্রে তিনি রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। ববিতার নাম ফরিদা আক্তার পপি থেকে ‘ববিতা’ হয় জহির রায়হানের ‘জ্বলতে সুরুজ কি নিচে’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে।
নায়িকা হিসেবে ববিতার প্রথম সিনেমা ‘শেষ পর্যন্ত’। এটি মুক্তি পায় ১৯৬৯ সালের ১৪ আগস্ট, যেদিন ববিতার মা মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এরপর থেকে অভিনয়ে নায়িকা হিসেবে শাসন করেন গোটা ৭০ দশক। অর্জন করেন তুমুল জনপ্রিয়তা। বাণিজ্যিক সিনেমার অন্যতম সফল নায়িকা হিসেবে গণ্য করা হয় ববিতাকে। কেননা গ্রামীণ মেয়ের চরিত্রে কিংবা শহরের আধুনিক তরুণী, সব চরিত্রেই তিনি সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন।
ক্যারিয়ারে প্রায় ২৫০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ববিতা। এর মধ্যে ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘আলোর মিছিল’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘বসুন্ধরা’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘নয়নমনি’, ‘লাঠিয়াল’, ‘মা’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দহন’, ‘দিপু নাম্বার টু’, ‘অশনি সংকেত’, ‘রামের সুমতি’, ‘নাগ-নাগিনী’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘মিস লংকা’, জীবন সংসার’, ‘লাইলি মজনু’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘পোকা মাকড়ের ঘর বসতি’ সিনেমাগুলো উল্লেখযোগ্য।
অভিনয়ের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ক্যারিয়ারে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন ববিতা। একটানা তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ববিতা। তিনিই বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশিবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনের চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছেন।