কেমন আছেন কিংবদন্তি পাপিয়া সারোয়ার

পাপিয়া সারোয়ার। মূলত কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হলেও তিনি দেশজুড়ে খ্যাতি পান ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন’ গানটির মাধ্যমে। তিনি ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন লম্বা সময়। সম্প্রতি অবস্থার অবনতি ঘটলে একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পীকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। 

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা নাগাদ গুঞ্জন ছড়ায় মৃত্যুর। তবে শিল্পীর স্বজন ও হাসপাতালের সঙ্গে দফায় দফায় আলাপ করেও সঠিক তথ্য মেলেনি। হাসপাতাল থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ জানানো হয়, এ তথ্য জানতে আধা ঘণ্টা পর ফোন দিতে! আধা ঘণ্টা পর ফোন করলে জানানো হয় শিল্পী আইসিইউতে আছেন। এর বেশি কিছু জানাতে অপারগ তারা। কারণ হিসেবে কর্তব্যরত ব্যক্তি জানিয়েছেন, ‘ওনার পরিবারের সদস্যরা এ বিষয়ে এখনই কিছু জানাতে চাইছেন না।’

এদিকে বিষয়টি নিশ্চিত হতে বাংলা ট্রিবিউন যোগাযোগ করে পাপিয়া সারোয়ারের বড় বোনের মেয়ে অভিনয়শিল্পী শম্পা রেজার সঙ্গে। তিনিও সঠিক কোনও তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বলেন, ‘আমি আসলে পুরোটা জানি না। ভেন্টিলেশনের কথা শুনেছি। খোঁজ নিচ্ছি।’ যদিও এই শিল্পীর বরাত দিয়েই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবিদা নাসরিন কলি তার ফেসবুক পোস্টে পাপিয়া সারোয়ারের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন বুধবার বিকাল ৫টা ২১ মিনিটে।

কলি বাংলা ট্রিবিউনকে এ বিষয়ে বলেন, ‘পাপিয়া সারোয়ারের মৃত্যুর খবরটি আমাকে নিজ থেকেই নিশ্চিত করেছেন শম্পা রেজা। আপনারা জানেন শিল্পী তার খালা হন।’

জানা গেছে, চার দিন ধরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাপিয়া সারোয়ার।

এদিকে পাপিয়া সারোয়ারের বর্তমান অবস্থা যা-ই হোক, বিষয়টি নিয়ে তুমুল ধূমজাল সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ মিলেছে, শিল্পীর দুই মেয়ে জারা ও জিশান যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় থাকেন। মায়ের অসুস্থতার খবরে তারা দুজনই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। অনুমান, দুই কন্যা দেশে নামার পরই ‘কেমন আছেন’ পাপিয়া সারোয়ার, সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

আবিদা নাসরিন কলির পোস্টবলা দরকার, পাপিয়া সারোয়ারের জন্ম বরিশালে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে ডিগ্রি নিতে সেদেশে যান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনিই প্রথম ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে সেখানে স্নাতক করার সুযোগ পান।

তার আগে তিনি ১৯৬৬ সালে ছায়ানটে ওয়াহিদুল হক, সন্‌জীদা খাতুন ও জাহেদুর রহিমের কাছে এবং পরে বুলবুল ললিতকলা অ্যাকাডেমিতে সংগীতে দীক্ষা নেন। ১৯৯৬ সালে ‘গীতসুধা’ নামে একটি গানের দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।

দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে রবীন্দ্র-গানের জন্য কোটি শ্রোতার ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন। আধুনিক গানেও আছে তার সাফল্য। ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০২১ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।