রকস্ট্রাটা, ওয়ারফেজ ও অর্থহীন ব্যান্ডের সাবেক গিটারিস্ট মিনহাজ আহমেদ পিকলুর মৃত্যুর খবরটি সবার কাছেই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলো। কারণ, তিনি স্বাভাবিক জীবন-যাপনই করছিলেন। তবে এই হঠাৎ মৃত্যুর খবরটি আরও বেশি বেদনার ও বিস্ময়কর হয়ে উঠলো এটুকু জেনে, শিল্পীর শেষ নিশ্বাসটি পড়েছে মঞ্চে দাঁড়িয়ে গিটার বাজাতে বাজাতে।
তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘অ্যাভয়েড রাফা’র প্রধান রায়েফ আল হাসান রাফা। যিনি নিজেকে পিকলুর অন্যতম শিষ্য হিসেবে মনে করেন।
রাফা জানান, ২০ ডিসেম্বর রাজধানীর রামপুরায় একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার সময় মঞ্চেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন পিকলু। দ্রুত স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই মৃত্যু প্রসঙ্গে ফেসবুকে রাফা লিখেছেন, ‘আমার প্রথম মেন্টর ছিলেন তিনি। মিউজিশিয়ান হিসেবে কীভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে হয় তিনি শিখিয়েছেন। বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সেরা গিটারিস্ট ছিলেন। তার শূন্যতা কখনও পূরণ হবে না। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে যে, মৃত্যুর সেই মুহূর্তেও তিনি স্টেজে ছিলেন, তার সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছিলেন, যেমনটা সবসময় করতেন। তিনি ছিলেন মিউজিকের জন্যই জন্মানো একজন মানুষ, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার প্রাণ মিশিয়ে বাজিয়েছেন।’
পিকলুর মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনে অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন। ওয়ারফেজ ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট ইব্রাহিম আহমেদ কমল তার ভেরিফায়েড পেজে লিখেছেন, ‘আমার প্রিয় ছোট ভাই গিটারিস্ট মিনহাজ আহমেদ পিকলু (এক্স অর্থহীন) ইন্তেকাল করেছে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মহান আল্লাহ তা’আলা পিকলুকে বেহেস্তবাসী করুন। আমিন।’
ব্যান্ড ভাইকিংস লিখেছেন, ‘আমরা একটি রত্ন হারিয়েছি। পিকলু ভাই, শান্তিতে থাকুন।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতেও একবার হার্ট অ্যাটাক করে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এই গিটারিস্ট।
রকস্ট্রাটা, জলি রজার্স, মাকসুদ ও ঢাকার মতো ব্যান্ডের সঙ্গে বাজিয়েছেন পিকলু। সেশন গিটারিস্ট হিসেবেও অনেক ব্যান্ড এবং শিল্পীদের সঙ্গে তাকে দেখা গেছে। নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে কিছুদিন তিনি ওয়ারফেজে ছিলেন। এরপর ১৯৯৯ সালে তিনি অর্থহীন ব্যান্ডে যোগ দেন।
বলা দরকার, এর আগে অনেকটা একইভাবে গানের মঞ্চ থেকে বিদায় নেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ফিরোজ সাঁই। ১৯৯৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত একটি গানের অনুষ্ঠানে ‘এক সেকেন্ডের নাই ভরসা’ গানটি গাওয়ার সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
সত্তর ও আশির দশকে লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক ধারার গানকে যারা পপসংগীতের আদল দিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন তাদের পথিকৃৎ। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। তার গাওয়া ‘এক সেকেন্ডের নাই ভরসা’, ‘ইঞ্জিন যদি চইলা যায় ডাব্বা লইয়া কি হইবো’ অথবা ‘ইস্কুল খুইলাছে রে মওলা, ইস্কুল খুইলাছে’- এর মতো গানগুলো আজও শ্রোতাদের হৃদয়ে দোলা দেয়।