‘লাপাতা লেডিস’, একেবারে গল্পনির্ভর একটি সুপারহিট সিনেমা। শুধুমাত্র শক্তিশালী গল্পের গাঁথুনি দিয়েই দর্শককে ধরে রাখা যায়, সেটি আবারও প্রমাণ করেছিলো এই সিনেমা। রীতিমতো সিনেমার নির্মাতা কিরণ রাও-এর নামে ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছিলো সর্বত্র।
পুরস্কারস্বরূপ সিনেমাটি এবারের আসরের সর্বোচ্চ ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। কিন্তু কিরণ রাও-এর কপালে সুখ সইলো না বুঝি! কারণ, এই সিনেমার বিরুদ্ধে গল্প চুরির মজবুত অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি।
অভিযোগ, মধ্যপ্রাচ্যের সিনেমা ‘বোরকা সিটি’র গল্পটাই নাকি হুবহু কপি-পেস্ট করেছে ‘লাপাতা লেডিস’! ‘বোরকা সিটি’র একটি ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই অনেকে অভিযোগ তুলছে, এই সিনেমার কাট-কপি-পেস্ট হচ্ছে ‘লাপাতা লেডিস’।
তথ্য মিলছে, ২০১৯ সালে নির্মিত হয় ‘বোরকা সিটি’। ঠিক পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ২০২৪ সালে কিরণ রাও তার প্রাক্তন স্বামী অভিনেতা আমির খানের সহ-প্রযোজনায় ‘লাপাতা লেডিস’ নির্মাণ করেন।
এই সিনেমার মাধ্যমে প্রতিভাবান নবাগত নিতানশী গোয়েল, প্রতিভা রন্তা এবং স্পর্শ শ্রীবাস্তবের সঙ্গে পরিচয় হয় সিনেমাপ্রেমীদের।
পশ্চিমবঙ্গের বিপ্লব গোস্বামীর গল্প, চিত্রনাট্যে ‘লাপাতা লেডিস’কে কেবল বলিউডের একটি মাইলফলকই ধরা হয় না, বরং ৯৭তম অস্কার পুরস্কারের জন্য সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্মের জন্য ভারতীয় সিনেমার সংযুক্তি ঘটিয়েছিলো।
এটি ভক্ত-সমালোচক উভয়ের কাছ থেকে প্রচুর ভালোবাসা পেয়েছে। অথচ আজ ‘লাপাতা লেডিস’-এর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ উঠেছে তুমুল বেগে।
বিশেষকরে একটি দৃশ্য, যা ভক্তদের কাছে বেশ অভিন্ন বলে মনে হয়েছে, তা হলো, যার হারিয়ে যাওয়া স্ত্রীকে খুঁজতে লোকটি থানায় গিয়ে পুলিশকে তার স্ত্রীর একটি ছবি দেখায়। দু’টি সিনেমার এই দৃশ্যে একেবারে হুবহু মিল খুঁজে পেয়েছে দর্শক। শুধুমাত্র ‘বোরকা সিটি’তে বোরকা পরা এবং ‘লাপাতা লেডিস’-এ ঘোমটা পরিহিত, পার্থক্য এতটুকুই।
তবে এ নিয়ে কিরণ কিংবা আমির এখনও আনুষ্ঠানিক কোনও বিবৃতি দেননি। অনেকে এসবের তোয়াক্কা না করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের হতাশা প্রকাশ করেছেন।
একজন ‘বোরকা সিটি’র ভিডিওটিকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ‘এই ১ মিনিটের ক্লিপটি দেখেই বুঝতে পারছেন.... কাট, কপি এবং পেস্টের উপর চলছে দেশটি (ভারত)! সব ক্ষেত্রেই কোনও মৌলিকত্ব নেই!’
অন্যদিকে আরেকজন ক্ষুব্ধ হয়ে লিখেছেন, ‘লজ্জা করা উচিত! গল্পের ধরণটি কপি করা হয়েছে। তাদের এজেন্ডা অনুসারে এটিকে বিকৃত করে নির্মাণ করা হয়েছে। তারপর এমনভাবে কাজ করা হয়েছে যেন এটি তাদের নিজস্ব মস্তিষ্কের সন্তান। এই পচা শিল্পকে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না।’
বাংলা ট্রিবিউন-এর সঙ্গে একান্ত আলাপে ‘লাপাতা লেডিস’-এর গল্পকার:
একজন টুইট করেছেন এভাবে, “এটি দ্বিচারিতাকেই সফলভাবে তুলে ধরে। ‘লাপাতা লেডিস’র মতো অনুপ্রাণিত যে কাজ, সেই কাজকে অস্কারের জন্য মৌলিক হিসাবে উপস্থাপন করা দেখে দুঃখ লাগছে। তারা (আমির-কিরণ) ভারতের গল্পের সাথে মানানসই করার জন্য সুবিধাজনকভাবে একটি মুসলিম প্রেক্ষাপট থেকে হিন্দু প্রেক্ষাপটে স্থানান্তরিত করেছে। এসব কাজ অন্যায়।”
অন্যদিকে অন্য একজন লিখেছেন, ‘আরে ইয়ার! অনেক মহিলা আবেগপ্রবণ হয়েছিলেন এটা ভেবে যে, এটি একটি মৌলিক গল্প! অন্তত নতুন কিছু আনুন, ইয়ার। শুধু বোরকা বদলে ঘোমটা টেনেছেন? বাহ, কী সৃজনশীলতা!’
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস