এ সপ্তাহের সিনেমা

বাংলাদেশে হলিউডের দুই সিক্যুয়েল

হলিউডের সিনেমা ভক্তদের জন্য আরও দুটি সাড়া জাগানো সিক্যুয়েল ছবি নিয়ে আসছে স্টার সিনেপ্লেক্স। যার মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় জুরাসিক ওয়ার্ল্ড ফ্র্যাঞ্চাইজির নতুন ছবি ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’। ইউনিভার্সেল পিকচার্সের এই সিনেমার অন্যতম আকর্ষণ স্কারলেট জোহানসন। অন্যদিকে, গত ২০ জুন আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পাওয়া হরর সিক্যুয়েল ‘টোয়েন্টি এইট ইয়ারস লেটার’ প্রথম দিনেই রেকর্ড সংখ্যক আয় করেছে। এ ছবিটিও সাফল্যের দৌড়ে অনেক দূর যাওয়ার আভাস দিচ্ছে। 

বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য আজ (৪ জুলাই) ছবি দুটি মুক্তি দিচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্স। নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ। জেনে নেওয়া যাক সিনেমা দুটির বৃত্তান্ত। 

জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ 

হলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’। ১৯৯৩ সালে ‘জুরাসিক পার্ক’ মুক্তির মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু। এ যাবৎ পর্দায় এসেছে এই সিরিজের ছয়টি সিনেমা। সবগুলো ছবিই দর্শক মহলে আলোড়ন তুলেছে। এবার আসছে নতুন ছবি ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’। পরিচালনা করেছেন গ্যারেথ এডওয়ার্ডস। এটি ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড ডোমিনিয়ন’র একটি স্বতন্ত্র সিক্যুয়েল, যা চতুর্থ জুরাসিক ওয়ার্ল্ড সিনেমা এবং জুরাসিক পার্ক ফ্র্যাঞ্চাইজির সামগ্রিকভাবে সপ্তম কিস্তি।
 
১৮০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত ইউনিভার্সেল পিকচার্সের এই ছবি এরই মধ্যে দর্শকদের বিশেষ আগ্রহ তৈরি করেছে। ছবির প্রধান চরিত্রে আছেন স্কারলেট জোহানসন। তার সঙ্গে আরও আছেন মাহেরশালা আলী ও জোনাথন বেইলি। জোহানসনকে দেখা যাবে বিশেষজ্ঞ জোরা বেনেটের ভূমিকায়, অবশিষ্ট ডাইনোসরের প্রজাতি থেকে ডিএনএ সংগ্রহের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে তাকে। কারণ, কিছু মানুষ চায় ডাইনোসরকে ব্যবহার করে পৃথিবীতে তাদের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে। জোহানসনের টিমের সদস্য ডানকান কিনকেডের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মাহেরশালা আলী। জোনাথন বেইলি থাকবেন জীবাশ্মবিদ ড. হেনরি লুমিসের চরিত্রে। তাদের সঙ্গে থাকবে আরও কিছু চরিত্র। 

দীর্ঘদিন পর বড় পর্দায় এমন একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিভিত্তিক ছবিতে জোহানসনের প্রত্যাবর্তন তার ভক্তদের মাঝে বাড়তি উন্মাদনার সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি পিঙ্কভিলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৪০ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী জানান, ‘ডেভিড কোয়েপের চিত্রনাট্যের যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি আলোড়িত করেছিল তা হলো, জোরা চরিত্রটির জটিলতা ও গভীরতা। জোরা কেবল ঘটনাপ্রবাহের ভেতরে আটকে পড়া একজন ব্যক্তি নন, বরং তিনি নিজেই মিশনটি বেছে নিয়েছেন। এটাই তাকে আলাদা করে তোলে।’ 

অভিনেত্রীর মতে, চরিত্রটি একটি সাধারণ অ্যাকশন নায়িকার ছাঁচে তৈরি নয়। বরং এটিই গল্পের কেন্দ্রীয় চালিকাশক্তি। সে শুধু বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে না, বরং উদ্দেশ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।

জুরাসিক ওয়ার্ল্ডের সর্বশেষ সিকুয়েল ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড ডমিনিয়ন’ যেখানে শেষ হয়েছিল, তার পাঁচ বছর পরের গল্প দেখা যাবে নতুন সিনেমায়। এবারের গল্পে দেখা যাবে, জোরা বেনেট দক্ষ কর্মীদের একটি দলকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানে নিয়ে যান, যা মূল জুরাসিক পার্কের একটি দ্বীপ গবেষণা কেন্দ্র। তাদের লক্ষ্য হলো ডাইনোসরদের জিনগত উপাদান সংগ্রহ করা, যাদের ডিএনএ মানবজাতির জীবন রক্ষাকারী সুবিধা প্রদান করতে পারে। এ অভিযানে তারা একটি ভয়ংকর, মর্মান্তিক বিষয় আবিষ্কার করে, যা কয়েক দশক ধরে বিশ্ব থেকে লুকানো ছিল। গল্পের শেষ দিকে সবাই একটি দ্বীপে আটকা পড়ে এবং এমন এক ভয়ংকর ও মর্মান্তিক বাস্তবতার মুখোমুখি হয়।     

টোয়েন্টি এইট ইয়ারস লেটার
 
চলতি বছর হলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রচুর হরর সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে এবং বক্স অফিসে দারুণ পারফর্মও করছে। এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলো ‘টোয়েন্টি এইট ডেজ লেটার’ সিরিজের নতুন ছবি ‘২৮ ইয়ারস লেটার’। গত ২০ জুন মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি উত্তর আমেরিকায় উদ্বোধনী দিনে রেকর্ডসংখ্যক আয় করেছে। বক্স অফিস মোজোর তথ্য অনুযায়ী ছবিটি উদ্বোধনী দিনে আয় করেছে ১৪ মিলিয়ন ডলার। এটি এখন পর্যন্ত ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে সর্বোচ্চ ওপেনিং ডে কালেকশন। যত টাকা খরচ করে বানানো হয়েছিল, মুক্তির এক সপ্তাহের মধ্যেই তা আয় করে ফেলেছে ‘টোয়েন্টি এইট ইয়ার্স লেটার’। সারা বিশ্বে এরই মধ্যে ৫৬৯ কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে।

টানটান উত্তেজনা, চরম ভায়োলেন্স এবং রক সাউন্ডট্র্যাকে ভরপুর এই জম্বি থ্রিলার পরিচালনা করেছেন ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়র’ খ্যাত অস্কারজয়ী নির্মাতা ড্যানি বয়েল। মাত্র ১৪ বছরের অ্যালফি উইলিয়ামস ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করে সিনে অনুরাগীদের নজর কেড়েছেন। এ ছাড়া ছবিতে রয়েছেন জোডি কোমার, অ্যারন টেলর জনসন এবং ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের ‘লর্ড ভলডেমর্ট’ রাফ ফাইনস।

২০০২ সালে মুক্তি পেয়েছিল ড্যানি বয়েলের হরর-থ্রিলার ‘টোয়েন্টি এইট ডেজ লেটার’। ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ওপেনহাইমার’ ছবিতে যিনি ওই নামের আমেরিকান নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্টের মুখ্য চরিত্রে ছিলেন, সেই চিলিয়ান মারফি এই ছবির নায়ক। ‘রেজ’ বলে একটি ভাইরাস পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত সে হিংস্র মানুষখেকোতে পরিণত হচ্ছে। সে রকম ‘জম্বি’ যদি কাউকে আঁচড়ে কামড়ে দেয়, তাহলে সেও তৎক্ষণাৎ সংক্রমিত হয়ে যাবে। যথারীতি ‘টোয়েন্টি এইট ডেজ লেটার’-এ এই ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার পরে সমাজব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে ভেঙে গিয়েছে। তার মধ্যে রাস্তায় আনাচে কানাচে যখন দলে দলে মানুষখেকো ‘জম্বি’ ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন কয়েকজন এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে কীভাবে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখবে, সেটাই ‘টোয়েন্টি এইট ডেজ লেটার’-এর গল্প। 

২০০৭-এ আসে ওই ছবির সিক্যুয়েল, ‘টোয়েন্টি এইট উইকস লেটার’। ১৮ বছরের অপেক্ষার পরে এসেছে ‘টোয়েন্টি এইট’ সিরিজের তৃতীয় ছবি। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে ছবির গল্প প্রথম সিনেমার ২৮ বছর পরের ঘটনা। ছবিতে কিছু সার্ভাইভার (যারা রেজ-এ আক্রান্ত হয়নি) নিজেদের জন্য ছোটখাটো গ্রাম তৈরি করে খুব সাবধানে সেগুলোকে পাহারা দিচ্ছে যাতে রেজ ভাইরাস গ্রামের ভিতরে না ঢুকতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ১২ বছর বয়সী স্পাইক (অ্যালফি) তার মা আয়লার চিকিৎসার জন্য তাদের গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে যায়। রাস্তায় তাদের বিভিন্ন জম্বিদের সঙ্গে ভিড়তে হবে। ছবির শেষের দিকে তারা ডক্টর কেলসনকে খুঁজে পাবে। কেলসন প্রায় তিন দশক ধরে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে জম্বিদের মাঝখানে। 

ছবির আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এর শুটিং কোনও বড়, ব্যয়বহুল ক্যামেরা দিয়ে হয়নি। বরং হাতের তালুর সাইজের আইফোন দিয়ে হয়েছে। ছবিতে প্রচুর অ্যাকশন দৃশ্য রয়েছে, যেখানে জম্বি দলের সঙ্গে লড়তে বা তাদের থেকে বাঁচতে হচ্ছে বাকি চরিত্রদের। এই জটিল দৃশ্যগুলো আইফোন দিয়েই শুট হয়েছিল বলে জানিয়েছে নিউজ ওয়েবসাইট ‘ওয়াইরড’। পরিচালক ড্যানি বলেছেন, ‘আইফোন দিয়ে শুট করার কারণে আমরা প্রচুর সরঞ্জাম ছাড়াই চলাফেরা করতে পারছিলাম। আমরা ব্রিটেনের নরথাম্বারের এমন কিছু অংশে শুট করেছি, যা দেখে মনে হয় ১,০০০ বছর আগেও পৃথিবী এমনই ছিল। এ রকম উঁচু নিচু, জঙ্গলভর্তি এলাকায় আইফোন আমাদের দ্রুত শুটিং করতে সাহায্য করেছে।’