রাজধানী গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টেুরেন্টে হামলা ও হামলাকারীদের বিভিন্ন তথ্য ও ছবি প্রকাশ করছে ‘আমাক এজেন্সি বাংলা’ নামের একটি ওয়েবসাইট। https://atmkn.pw—এই ইউআরএল অ্যাড্রেসের ওয়েবসাইটে ঢাকার গুলশানে হামলা ও বাংলাদেশে এর আগের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হত্যার দায় স্বীকার করার কথা প্রকাশ করা হয়েছে। সাইটটিতে রয়েছে জঙ্গিবাদে উদ্ধুদ্ধ করার জন্য বেশ কিছু উপকরণও। এদিকে, ফেসবুকে আকতার ফারুক নামের এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকেও গুলশানে হামলাকারীদের প্রশংসা করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
ওয়েবসাইটটির নাম হিসেবে বলা হয়েছে আত-তামকিন। সাইটের বিবরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে খিলাফাহ’র আওয়াজ পৌঁছে দেওয়ার একটি প্রয়াস।’ ওয়েবসাইট ইনফরমার ডট কম-এ ওয়েবসাইটটির অ্যাড্রেস সম্পর্কে তেমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। শুধু উল্লেখ করা হয়েছে সাইটটির হোস্টিং করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো ভিত্তিক হোস্টিং কোম্পানি ক্লাউডফ্লেয়ার নেট-এ। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে,সাইটটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে ২০১৪ সালের ২৮ মার্চ এবং সর্বশেষ তথ্য আপডেট করা হয়েছে ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর।
আরও পড়তে পারেন: আর্টিজানের মালিক সাদাত মেহেদি যা বললেন
জানা গেছে, ওয়েবসাইটটির ইউআরএল-এ যে .pw ডোমেইন এক্সটেনশন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ পালাউ ২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করত। ২০১৩ সাল থেকে .pw ডোমেইন এক্সটেনশনটি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট (proffessional website) হিসেবে সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। .pw টপ লেবেল ডোমেইন হিসেবে স্বীকৃত।
ওয়েবসাইটে ১ জুলাই তিনটি পোস্টে গুলশানে রেস্টুরেন্টে হামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তারিখ থাকলেও পোস্টগুলোতে সময় উল্লেখ করা নেই। তবে হামলায় নিহতদের সংখ্যা ২ জুলাই প্রকাশ করা হয়েছে।
ওয়েবসাইটে শুধু বাংলাদেশ নয় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ও এলাকায় আইএসের হামলার খবর প্রকাশ করা হয়েছে। রয়েছে পিডিএফ আকারে বই, ভিডিও এবং অডিও।
এছাড়া ফেসবুকে খিলাফাহ সংবাদ বাংলা নামের একটি পেজেও আত-তামকিন ওয়েবসাইটের লিংকগুলো শেয়ার করা হচ্ছে। পেজটির লিংক https://www.facebook.com/Khelafahnewsbangla/। গুলশান রেস্টুরেন্টে হামলার বিভিন্ন তথ্য ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে পেজটিতে।
আরও পড়তে পারেন: জঙ্গি নন তিনি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের শেফ
এদিকে,ফেসবুকে আকতার ফারুক নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে গুলশান রেস্টুরেন্টে হামলাকারীদের পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ৫ ‘হামলাকারী’র ছবি দিয়ে আকতার ফারুক তাদের ‘বাংলাদেশের ঢাকা গুলশান এলাকায় প্রথম কমান্ডো অ্যাটাককারী মুসলিম উম্মাহর অহঙ্কার ৫ বীর মুজাহিদ ভাই’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ঠিকানা https://www.facebook.com/aktar.faruk.3781। তার ফেসবুক প্রোফাইলে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি, মালয়েশিয়া টেকনোলজি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করেছেন। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে জন্ম ও অবস্থান করছেন।
আকতার ফারুকের অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু জঙ্গি ও উসকানিমূলক স্ট্যাটাস রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (মিডিয়া ) মাসুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এ ধরনের জঙ্গিদের কিছু বাংলা ওয়েবসাইট আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এরপর শনিবার সকাল সাতটা চল্লিশে শুরু হয় ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’। ১২-১৩ মিনিটের মধ্যে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা হয়। সাড়ে আটটায় অপারেশন সমাপ্ত করা হয়।
অভিযানে ৩ জন বিদেশি যার মধ্যে ১ জন জাপানি এবং ২ জন শ্রীলঙ্কান নাগরিকসহ মোট ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। আর অভিযানের পর তল্লাশি শেষে আরও ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অভিযানে ৬ সন্ত্রাসী নিহত হয়।
হামলায় নিহত ২০ জনের নাগরিকত্ব ও পরিচয় পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি ও ৩ জন বাংলাদেশি। বিদেশিদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়,৭ জন জাপানি ও একজন ভারতীয়। বাংলাদেশিদের মধ্যে একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছিলেন। নিহতদের পারিবারিক সূত্র ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাস এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়তে পারেন: বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে ‘জঙ্গি’ হয়ে ওঠে চার তরুণ
/এএ/এমএসএম /