যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করেছে দেশটির আদালত। শুক্রবার (২৩ মে) যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহরের আদালত এ আদেশ দেয়। এর আগে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে।
শুক্রবার সকালে বোস্টনের ফেডারেল কোর্টে দায়ের করা মামলায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, কলমের এক আঁচড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক–চতুর্থাংশ বিদেশি শিক্ষার্থীকে ‘মুছে’ ফেলতে চাইছে সরকার। এই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বিদেশি শিক্ষার্থীদের ছাড়া হার্ভার্ড আর হার্ভার্ড থাকে না।
মামলায় আরও জানানো হয়, সরকারের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন করে। এতে হার্ভার্ড ও ৭ হাজারের বেশি ভিসাধারীর ওপর ‘তাৎক্ষণিক ও বিধ্বংসী প্রভাব’ পড়বে।
জেলা বিচারক অ্যালিসন বারোজের এই রায় যতদিন না মামলাটি নিষ্পত্তি হয় ততদিন পর্যন্ত হার্ভার্ডের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে স্থগিত রাখবে।
গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতি দিয়ে হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া নিজেদের ভর্তি ও নিয়োগ–সংক্রান্ত চর্চায় পরিবর্তন এনেছে তারা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।
বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি’ বলে একটি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্বার। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। সংখ্যাটি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশের বেশি।
মামলায় হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্নাতকোত্তর সমাবর্তনের কয়েক দিন আগে ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে। বিদেশি শিক্ষার্থী- যারা ল্যাব পরিচালনা করেন, কোর্স পড়ান, অধ্যাপকদের সহায়তা করেন এবং খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করেন—তারা সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছেন, হঠাৎ করে অন্যত্র স্থানান্তর হবেন নাকি যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আইনি অধিকার হারানোর ঝুঁকি নেবেন।
মামলায় হার্ভার্ড জানিয়েছে, প্রশাসনের সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বসেরা শিক্ষার্থীদের আকর্ষণে প্রতিযোগিতার দিক থেকে তাৎক্ষণিকভাবে পিছিয়ে পড়বে। এমনকি তারা আগামীতে পুনরায় শিক্ষার্থী গ্রহণের সুযোগ পেলেও, ভবিষ্যৎ আবেদনকারীরা সরকারের সম্ভাব্য প্রতিশোধের ভয়ে আবেদন করতে দ্বিধা করবে।
হার্ভার্ড আরও জানায়, যদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় অন্তত পরবর্তী দুইটি শিক্ষাবর্ষে নতুন বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে পারবে না। কারণ কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেশন ফেডারেল সরকার প্রত্যাহার করলে, তারা অন্তত এক বছর পর্যন্ত নতুন করে আবেদন করতে পারে না।
হার্ভার্ডের করা মামলার প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউসের উপ–প্রেস সচিব অ্যাবিগালি জ্যাকসন বলেছেন, হার্ভার্ড যদি তাদের ক্যাম্পাসে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী, ইহুদিবিদ্বেষী ও সন্ত্রাসবাদপন্থী উসকানিদাতাদের রুখতে গুরুত্ব দিত, তাহলে তারা শুরুতেই এমন পরিস্থিতিতে পড়ত না। অর্থহীন মামলা করার চেয়ে তাদের এখন ক্যাম্পসের পরিবেশ নিরাপদ করার দিকে নজর দেওয়া উচিত।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন এ পদক্ষেপ নেওয়ার আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া ফেডারেল সরকারের তহবিলে কাটছাঁট শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।