মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সিরিয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা শিথিলে প্রথম কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন শুক্রবার (২৩ মে) এমন কিছু নির্দেশনা জারি করেছে, যা সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কার্যত তুলে দেবে। দেশটির ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনে সহায়তা করার লক্ষ্যে এই নিষেধাজ্ঞা শিথিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ট্রেজারি বিভাগ এমন এক নতুন নিষেধাজ্ঞা শিথিল কার্যক্রম জারি করেছে যা প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাআ'র নেতৃত্বাধীন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লেনদেনের অনুমতি দেয়।
এক বিবৃতিতে ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল কার্যক্রম নতুন বিনিয়োগ এবং বেসরকারি খাতের কার্যক্রমকে সক্রিয় করবে যা প্রেসিডেন্টের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
এর আওতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ১৮০ দিনের একটি ছাড়পত্রও জারি করেছেন, যাতে নিষেধাজ্ঞা বিনিয়োগে প্রতিবন্ধক না হয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ মানবিক সহায়তা প্রদানের পথ সুগম হয়।
রুবিও বলেন, এই পদক্ষেপগুলো প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার মধ্যে এক নতুন সম্পর্কের সূচনা করার প্রথম ধাপ। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর সিরিয়ান সরকারের কাছ থেকে তিনি কিছু পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন।
হোয়াইট হাউজ জানায়, ট্রাম্প গত সপ্তাহে শারাআ’র সঙ্গে বৈঠকের পর সিরিয়াকে কিছু শর্ত মানার আহ্বান জানান, যার মধ্যে রয়েছে সকল বিদেশি জঙ্গিকে সিরিয়া ত্যাগ করতে বলা, তথাকথিত ফিলিস্তিনি জঙ্গিদের বহিষ্কার এবং আইএসআইএস-এর পুনরুত্থান ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করা।
রুবিও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ান সরকারকে দেশটির অভ্যন্তরীণ ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার একটি সুযোগ দিচ্ছেন।
শনিবার ভোরে সিরিয়া এই নিষেধাজ্ঞা শিথিলকে স্বাগত জানায়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে ‘মানবিক ও অর্থনৈতিক দুর্ভোগ লাঘবের লক্ষ্যে সঠিক পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করে।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, সিরিয়া পারস্পরিক সম্মান ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ভিত্তিতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতায় আগ্রহী। তারা বিশ্বাস করে যে, সংলাপ ও কূটনীতি হলো ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার সর্বোত্তম পথ।
২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এবং তার ঘনিষ্ঠদের ওপর বেশ কয়েক ধাপে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। শারাআ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া মিলিশিয়াদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ট্রাম্প গত সপ্তাহে আকস্মিকভাবে ঘোষণা দেন, তিনি সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্সের অনুরোধে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবেন—যা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন। এরপর তিনি রিয়াদে শারাআ’র সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন।
আশা করা হচ্ছে, এই নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ফলে সিরিয়ায় কাজ করা মানবিক সংস্থাগুলোর কাজ সহজ হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্য উৎসাহিত হবে, যা দেশটির পুনর্গঠনে সহায়ক হবে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ১৯৭৯ সালে সিরিয়াকে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এবং ২০১১ সালে আসাদবিরোধী বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে আরও কয়েক ধাপে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।