রয়টার্সকে গুলশান হামলার তদন্ত কর্মকর্তা

‘মূল হোতা’ সন্দেহে ৬ জেএমবি সদস্যকে খুঁজছে পুলিশ

শ্রদ্ধা নিবেদনগুলশান হামলার মূল হোতা হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর ৬ সদস্যকে সন্দেহ করছে পুলিশ। হামলার তদন্তে নিয়োজিত একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর  জানিয়েছে। রয়টার্সের খবরে ওই পুলিশ কর্মকর্তার দাবিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গিদের পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ওই ৬ জনকেই মূল হোতা মনে করা হচ্ছে। গুলশান হামলার মামলায় তাদেরকে আসামী দেখানো হয়েছে। ওই ছয় জনের খোঁজে মঙ্গলবার অভিযান পরিচালিত হওয়ার কথাও জানিয়েছে পুলিশ।
গুলশানের হামলার ঘটনায় জেএমবির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে শুরু থেকেই সন্দেহ করে আসছে পুলিশ। তদন্তের সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম রয়টার্সকে বলেন, ‘জেএমবির ছয় সদস্যকে এ মামলায় অভিযুক্ত দেখানো হয়েছে। তারা ঘটনার মূল হোতা হতে পারে। সেকারণে আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরজুড়ে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে জেএমবির বিরুদ্ধে। সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন ক্লু পাওয়ার আশায় ১৩০ জনেরও বেশি জেএমবি সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না হামলার পেছনের মূল হোতা কে বা কারা। আমরা শুধু এটুকু জানি রেস্টুরেন্টে হামলার জন্য এসব তরুণদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রে কোন বিদেশি গোষ্ঠীর সংযোগ নেই’।

উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের এই রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনায় ডিবির সহকারী (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন নিহত হন। শনিবার সকালে রেস্টুরেন্টটিতে কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৬ হামলাকারী নিহত হয়েছে বলে আইএসপিআর-এর পক্ষ থেকে জানানো হলেও আর্টিজানের মালিকের দাবি, ৬ জনের একজন সাইফুল চৌধুরী। তিনি আর্টিজানের কুক ছিলেন। এরইমধ্যে বাকি ৫ হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে। তারা হলেন- নিবরাস ইসলাম, রোহান ইমতিয়াজ, মীর সামিহ মোবাশ্বির, খায়রুল ইসলাম পায়েল এবং শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। আত্মীয় ও পরিচিতজনরা ছবি দেখে তাদের শনাক্ত করে।

সাইফুল জানান, ‘নিহত হামলাকারী ৫ জনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর তাই তাদের স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদসহ কিছু আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করা প্রয়োজন।’

যৗথ বাহিনীর অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গি

৫ হামলাকারীর প্রত্যেকেই বেশ কিছুদিন আগে বাসা ছেড়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। এদের তিনজন রাজধানীর বিভিন্ন নামী-দামি স্কুল-কলেজে পড়েছেন বলে তাদেরই বন্ধুরা দাবি করেছেন। তারা চিঠি লিখে বাসা ছেড়েছে বলেও তাদের বন্ধুরা ফেসবুকে দাবি করছেন। এরা গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। এ তরুণদের খুব স্বাভাবিক জীবন যাপন ছিল। তারা ক্যাফেতে যেতেন, খেলাধুলা করতেন, তাদের ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট ছিল বলেও দাবি করেছেন পরিচিতজনরা। এদের মধ্যে দুজন মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো। তাদের দুজনের একজন নিবরাস ইসলাম। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নিবরাসের সঙ্গে ফুটবল খেলেছেন এমন এক শিক্ষার্থী জানান নিবরাস খুব একটা ধার্মিকও ছিল না।

সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন তদন্তের স্বার্থে মালয়েশিয়ায় যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এর আগে শনিবার পুলিশ জানিয়েছে ৫ হামলাকারীকে তারা আগেও গ্রেফতারের চেষ্টা করেছিলেন। তবে তারা কিভাবে উগ্রপন্থার সঙ্গে জড়িয়ে গেল সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি পুলিশ। সূত্র: রয়টার্স

/এফইউ/বিএ/